পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দগেশনন্দিনী অন্টাদশ পরিচ্ছেদ ঃ চতুরে চতুরে বিমলা আসিয়া নিজ কক্ষে পালঙ্কের উপর বসিলেন। বিমলার মািখ আতি হর্ষপ্ৰফল্ল'; তিনি গতিকে মনোরথ সিদ্ধ করিয়াছেন। কক্ষমধ্যে প্ৰদীপ জীবলিতেছে; সম্মখে মাকুর; বেশভূষা য্যেরােপ প্রদোষকালে ছিল, সেইরাপই রহিয়াছে; বিমলা দপণাভ্যন্তরে মহত্তজন্য নিজ প্রতিমাত্তি নিরীক্ষণ করিলেন। প্রদোষকালে যেরপ কুটিল-কেশবিন্যাস করিয়াছিলেন, তাহা সেইরাপ রহিয়াছে; বিশাল লোচনামলে সেইরােপ কজজলপ্ৰভা; অধরে সেইরােপ তাম্বলরাগ; সেইরাপ কণাভরণ পীবীরাংসসংসন্তু হইয়া দলিতেছে। বিমলা উপাধানে পাঠ রাখিয়া অন্ধ শয়ন, অন্ধ উপবেশন করিয়া রহিয়াছেন; বিমলা মহকুরে নিজ-লাবণ্য দেখিয়া হাস্য করিলেন। স্কুল এই ভাবিয়া হাসিলেন যে, দিগগজ পণ্ডিত নিতান্ত নিকারণে গহত্যাগী হইতে চাহেন নাহি । বিমলা জগৎসিংহের পািনরাগমন প্রতীক্ষা করিয়া আছেন, এমত সময়ে আমুকাননমধ্যে গম্ভীর তযোনিনাদ হইল। বিমলা চমকিয়া উঠিলেন এবং ভীতা হইলেন; সিংহদ্বার ব্যতীত আমুকাননে কখনই তােয্যধবনি হইয়া থাকে না, এত রাত্রেই বা তােয্যধবনি কেন হয় ? বিশেষ সেই রাত্রে মন্দিরে গমনকালে ও প্রত্যাগমনকালে যাহা যাহা দেখিয়াছেন, তৎসমােদয় সমরণ হইল। বিমলার তৎক্ষণাৎ বিবেচনা হইল, এ তােয্যধবনি কোন অমঙ্গল ঘটনার পকেবলক্ষণ। অতএব সশঙকচিত্তে তিনি বাতায়ন-সন্নিধানে গিয়া আমুকানন প্রতি দাম্পিটপাত করিতে লাগিলেন। কাননমধ্যে বিশেষ কিছই দেখিতে পাইলেন না। বিমলা ব্যস্তচিত্তে নিজ কক্ষ হইতে নিগৰ্ভত হইলেন; যে শ্রেণীতে তাঁহার কক্ষ তৎপরেই প্রাঙগণা; প্রাঙগাণপরেই আর এক কক্ষশ্রেণী ; সেই শ্রেণীতে প্রাসাদোপরি উঠিবার সোপান আছে। বিমলা কক্ষত্যাগপৰ্ব্বক সেই সোপােনাবলী আরোহণ করিয়া ছাদের উপর উঠিলেন ; ইতস্ততঃ নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন ; তথাপি কাননের গভীর ছায়ান্ধকার জন্য কিছই লক্ষ্য করিতে পারিলেন না। বিমলা দিবগণ উদিবগনচিত্তে ছাদের আলিসার নিকটে গেলেন; তদনুপরি বক্ষঃ সন্থাপনপকেবািক মািখ নত করিয়া দগমলে পৰ্যন্ত দেখিতে লাগিলেন; কিছই দেখিতে পাইলেন না। শ্যামোজজবল শাখাপল্লব সকল স্নিগধ চন্দ্ৰকরে পলাবিত ; কখন কখন সমন্দ পাবনান্দোলনে পিণ্ডগলবণ দেখাইতেছিল ; কাননতলে ঘোরান্ধকার, কোথাও কোথাও শাখাপত্ৰান্দির বিচ্ছেদে চন্দ্রলোক পতিত হইয়াছে; আমোদরের স্থিরামব-মধ্যে নীলাম্ববর, চন্দ্র ও তারা সহিত প্রতিবিম্বিত ; দরে, অপরপারস্থিত অট্টালিকাসকলের গগনস্পশী মাত্তি, কোথাও বা তৎপ্রাসাদস্থিত প্রহরীর অবয়ব। এতদ্ব্যতীত আর কিছই লক্ষ্য করিতে পারিলেন না। বিমলা বিষন্ন মনে প্রত্যাবত্তন করিতে উদ্যত হইলেন, এমন সময়ে তাঁহার অকস্মাৎ বোধ হইল, যেন কেহ পশ্চাৎ হইতে তাঁহার পািঠদেশ অঙ্গলি দবারা সপশ করিল। বিমলা চমকিত হইয়া মািখ ফিরাইয়া দেখিলেন, একজন সশস্ত্ৰ অজ্ঞাত পরিষ দন্ডায়মান রহিয়াছে। বিমলা চিত্ৰাপিত পত্তালনীবৎ নিম্পন্দ হইলেন। শস্ত্ৰধারী কহিল, ‘চীৎকার করিও না। সন্দরীর মখে চীৎকার ভাল শনায় না।” যে ব্যক্তি অকস্মাৎ এই রােপ বিমলাকে বিহবল করিল, তাহার পরিচ্ছন্দ পাঠানজাতীয় সৈনিক পরষদিগের ন্যায়। পরিচ্ছদের পরিপাট্য ও মহােঘ গণ দেখিয়া অনায়াসে প্রতীতি হইতে পারিত, এ ব্যক্তি কোন মহৎপদাভিষিক্ত। অদ্যপি তাহার বয়স ত্রিংশতের অধিক হয় নাই; কান্তি সাতিশয় শ্ৰীমান, তাঁহার প্রশস্ত ললাটােপরি যে উষ্ণীষ সংস্থাপিত ছিল, তাহাতে এক খন্ড মহােঘ হীরক শোভিত ছিল। বিমলার যদি তৎক্ষণে মনের স্থিরতা থাকিত, তবে বঝিতে পারিতেন যে, স্বয়ং জগৎসিংহের সহিত তুলনায় এ ব্যক্তি নিতান্ত ন্যান হইবেন না; জগৎ সিংহের সদােশ দীঘােয়ত বা বিশালোরিস্ক নহেন, কিন্তু তৎসদশে বীরত্বব্যঞ্জক সন্দরকান্তি; তদাধিক সকুমার দেহ। তাঁহার বহমাল্য কটিবন্ধে প্রবালজড়িত কোষমধ্যে দামাসাক ছরিকা ছিল; হস্তে নিস্কোষিত তরবার। অন্য প্রহরণ ছিল না। সৈনিক পরিষ কহিলেন, “চীৎকার করিও না। চীৎকার করিলে তোমার বিপদ ঘটিবে।" প্রত্যুৎপন্নবদ্ধিশালিনী বিমলা ক্ষণমাত্র বিহবলা ছিলেন; শস্ত্ৰধারীর দিবরুক্তিতে তাঁহার অভিপ্রায় বঝিতে পারিলেন। বিমলার পশ্চাতেই ছাদের শেষ, সম্পম খেই সশস্ত্ৰ যোদ্ধা; ছাদ b ○