পাতা:বঙ্গদর্শন-নবম খন্ড.djvu/৫৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২৮৯ ) দেবী চৌধুরী। । দ্বাদশ পরিচ্ছেদ । পরদিন, বেলা এক প্রহরের মধ্যে ভবানী পাঠক প্রফুল্লের নিকট মাসিয়৷ উপস্থিত হইল। কিন্তু তাছার কথ। বলিবার আগে ফুলমণি নাপিষ্ঠানী মহাশয়ার কথাটা বলিয়। রাথি । তাহার ন্যায় সাধুচরিত্রা মুনারীর হঠাৎ অবমাননা করিতে পারি না । ফুলমণি নাপিতনী হরিণীর ন্যায়, বাছিয়া বাছিয়া দ্রুতপদ জীবে প্রাণ সমর্পণ করিয়াছিল । ডাকাতের ভয়ে দুর্লভচন্দ্র মাগে আগে পালাইলেন,ফুলমণি পাছু পাছু ছুটিয়া গেল । কিন্তু দুৰ্লভের এমনই পালাইবার রোশ্ব যে, তিনি পশ্চাদ্ধাবিত। প্রণয়িণীর কাছে নিতান্ত স্থলভ হইলেন । ফুলমণি যত ডাকে "গে। দাড়াও গে ? অামায় - ফেলে যে ৪ ন গে৷ ” দুর্লভচন্দ্র তত ডাকে, “ও বাধা গে। । ঐ এলো গে৷ ” কাটা বনের ভিতর দিয়া, পগার লাফাইয়া, কাদা ভাঙ্গিয়া, উদ্ধশ্বাসে দুলভ ছোটে— ছায় ! কাছ খুলিয়া গিয়াছে, এক পায়ের নাগরা জুতা কোথায় পড়িয়া গিয়াছে, চাদর থানা একটা কঁটি। বনে বিধিয়া তাহার বীরত্বের নিশান স্বরূপ বাতাসে উড়িতেছে। তখন ফুলমণি সুন্দরী স্থাকিল, “ও অধঃপেতে মিনসে—ওরে মেয়ে মানুষকে ভুলিয়ে এনে—এমনি ক’রে কি ডাকাস্তের হাতে সঁপে দিয়ে যেতে হয় রে মিনলে।” শুনিয়া দুপত চন্দ্র ভাবিলেন, তবে নিশ্চিত ইহাকে ডাকাতে ধরিয়াছে । অতএব দুলভ চন্দ্র বিনাবাক্যব্যয়ে আরো বেগে ধাবমান হইলেন । ফুলমণি ডাকিল “ও অধঃপেতে—ও পোড়ার মুখো—ও আঁটকুড়ির পুত,-ও হাবাতে-ও ড্যাকুরও বিটলে!”--ততক্ষণ দুর্লভ অদৃশ্য হইল । কাজেই ফুলমণিও গলাবাজি ক্ষাত্ত দিয়া, কঁাদিতে আরম্ভ করিল। রোদন কালে দুল ভের বংশাবলীর প্রতি নানাবিধ দোষারোপ করিতে লাগিল । এদিকে ফুলমণি দেখিল, কই ডাকাতেরা ত কেহ আসিল না ? কিছুক্ষণ' দাড়াইয়া ভাবিল—কান্না বন্ধ করিল। শেষ দেখিল, ন ডাকাত অাসে-না দুর্লভচন্দ্র দেখা দেয়। তখন জঙ্গল হইতে বাহির হইবার পথ খুজিতে লাগিল । তাহার ন্যায় চতুরার পক্ষে পথ পাওয়৷ , রড় কঠিন হইল না । সহজেই বাহির হইয়। সে রাজপথে উপস্থিত হইল । কোথাও কেহ নাই দেখিয়া, সে গৃহাভিমুখে ফিরিল । দুলভের উপর তখন বড় রাগ । অনেক ৰেল হইলে ফুলমণি ঘৱে পৌছিল। দেখিল, তাহার ভগিনী অলকমণি ঘরে নাই, স্নানে গিয়াছে। ফুলমণি কাহাকে কিছু ন বলিয়। কপাট ভেজাইয়া শয়ন করিল। রাত্রে নিদ্র। হয় নাই— ফুলমণি শুইবামাত্র ঘুমাইয়। পড়িল ।