পাতা:বঙ্গদর্শন-ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/২২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>રાન્ડ ] জটাধারীর রোজনামচ ২১১ সন্তান লইয়া পালিতেছেন, তাহাকে যথেষ্ট স্নেহ করেন—ও পোষ্যপুত্র করিয়া পিণ্ডাধিকারী ও ধনাধিকারী করিবার বিশেষ প্রয়াস রাখেন, আশুতোষ বাবুর অনুরোধে এই নীলমণিকে তিনি খঞ্জভীমের হস্তে অর্পণ করিয়াছেন ; সুশিক্ষার জন্য মাষ্টার বাবুও অনেক যত্ন করিতেছেন। কিন্তু যাহাকে প্রকৃতি দেবী প্রতিকূল, মানব চেষ্টায় তাহার কি হইতে পারে । নীলমণি আজ যাহা বহু কষ্টে শিখিয়া গৃহে যান, কাল প্রাতে ক্ষীর, ননি, সন্দেশের সহিত বেমালুম জলপান” করিয়া আসেন। তিনি “লোককে” “নোক” রসিককে “আহিক” রাঙ্গাকে “নাঙ্গা” ভিন্ন কহিতে পারেন না—এ দিকে বাঙ্গকে “লাঙ্গ”—অভয়কে “রভয়” বলিয়া থাকেন। “লোকোমোটব” কে “নেীকো মাটা” কহিতেন ও একদিন “কামসকাটকা” উচ্চারণ করিতে উদ্যম করায় দস্তুপাটীতে খিল লাগাইয়া মাষ্টার বাবুকে বিশেষ তিরস্কৃত করিয়াছিলেন। এদিকে তিনি পরীক্ষাব সময়ে ( প্রাইজ ) পারিতোষিক পান না বলিয়া গজানন মাষ্টার বাবুর উপব অসন্তুষ্ট হইয়া থাকেন। সময়ে সময়ে গজানন মাষ্টার বাবুব কাছে প্রস্তাব. করিয়া থাকেন, “বাপু ! পরীক্ষককে কিছু বেশবত দিলে আমাৰ নীলমণি প্রাইজ পেতে পাবে না ? না হয় আশুতেষ বাবু দ্বারা পৰীক্ষককে একখানি অনুরোধপত্র লিখাইলে ছাত্রবৃত্তির পাশ আসিতে পাবে না ?” আবাব কখন কখন বলেন, “বাবা, আমি উহার তত লেখাপড়া চাই না—যাহাতে মতভ্ৰষ্ট না হয়, পিগুটী বজায় থাকে তাহাই করুন।” মাষ্টার বাবু একদিকে এই সকল মতেব অনুমোদন কবিতে অন্যদিকে নীলমণির শিক্ষার কিছু মাত্র উন্নতি দেখাইতেও পারিতেন না। র্তাহাকে অপদস্থ করিয়া নূতন মাষ্টার আনাইবার জন্য গজানন দুই একবার আশুতোষ বাবুর নিকট অনুরোধ করেন। মাষ্টাব সেই সুব কথা শুনিয়া দেওয়ানজির বিশেষ বিদ্বেষী হন । আজ মাষ্টার বাবু সুসময় পাইয়াছেন। দেওয়ানজি যে নাজির সাহেবের যোগে মিথ্যা করিয়া মুরসিকা ললনা সুন্দরী গোপিনীকে কাদম্বিনী সাজাইয়া বিচারস্থলে আনয়ন করিবেন, তাহ মাষ্টার বাবুর কর্ণগোচর হইয়াছে। মুন্দরীর সঙ্গে তাহার অনেক কথা হইত—ও সেই সকল কথা ব্যক্ত করিবার জন্য পূর্ণবাবুর বৈঠকে আসিয়াছেন । এ দিকে পূর্ণ বাবু নাজিরের ছিদ্র অনুসন্ধাম করিতেছেন, গ্রামে একজনই হাকিম থাকিতে পারে—এক কম্বলে চার জন দরবেস বসিতে পারে, কিন্তু এক রাজ্যে দুইজন রাজার স্থান হইতে পারে না—নাজির আবার কোথাকার হাকিম, দুই দিবস পৰ্য্যন্ত গ্রামে প্রভুত্ব করিতেছে অথচ ডাকমুলী মহাশয়কে একটি কথা, একট পরামর্শও জিজ্ঞাসা করে না। ভাল, কেমন তার হাকিমী, কেমন তার পরামর্শ দেখা যাইবে ।