পাতা:বঙ্গদর্শন-ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/২৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

s२५e ] জুরীর বিচার షీలి আসনে বস্ম সামান্তজীবীর পক্ষে বাস্তবিক বিপদ। পূৰ্ব্বে নবাবী আমলে “বেগার” ধরা প্রথা ছিল, এক্ষণে জুরীধরা সেইরূপ হইয়াছে। ইংলণ্ডে জুরীরা পরিশ্রমের পারিতোষিক স্বরূপ কিছু কিছু পাইয়া থাকেন, এখানে সে প্রথা নাই। কেন নাই তাহা বুঝা যায় না। বোধ হয় বিচারকার্য্যের ব্যয় কমাইবার নিমিত্ত এইরূপ নিয়ম করা হইয়া থাকিবে । কিন্তু ইহাতে গবৰ্ণমেণ্টের লাভ অতি সামান্ত, দরিদ্রের ক্ষতি অতি গুরুতর। যেস্থলে সামান্ত দীনদরিদ্র ব্যক্তি বিচারক, সেস্থলে উৎকোচের আশঙ্কা প্রবল। দরিদ্রের পক্ষে লোভ সম্বরণ করা বড় কঠিন । আসামীরা তাহ জানে প্রয়োজন হইলে ইচ্ছামুরূপ কাৰ্য্য উদ্ধার করিয়া লইতে পারে। দরিদ্র, কাজেই কেহ তাহাকে লোভ দেখাইতে ভয় পায় না, বা কুষ্ঠিত হয় না। কে কে জুরীর আসনে বসিবে তাহ পূৰ্ব্বাহ্নে আসামী জানিতে না পারিলেই উৎকোচের পথ বন্ধ হইতে পারে এরূপ অনেকের সংস্কার আছে । এই জন্য কোন কোন জজ সাহেব এক এক মোকৰ্দমায় ৭০ কি ৮০ জন ব্যক্তিকে জুরীর নিমিত্ত আহবান করিয়া তাঙ্গাদের মধ্যে আবশ্যকমত কয়েকজনকে বাছিয়া লইয়া অবশিষ্ট সকলকে বিদায় দেন । ইহা দ্বারা কিরূপে উৎকোচেব পথ রুদ্ধ হয়, তাহা আমরা বুঝিতে পারি না। কে কে জুীর আসনে বসিবে আসামী পূৰ্ব্বে জানিত না কিন্তু পরে জানিল, উৎকোচ দিবার প্রয়োজন হইলে অনায়াসে পরে - দিতে পারে, মোকৰ্দ্দমা সচরাচর একদিনে নিম্পত্তি হয় না, জুরীরাও রাত্রে আদালতে তালা কুলুপ বন্ধ থাকে না, গৃহে যাইতে পায়, গৃহে যাহার সহিত ইচ্ছা আলাপ করিতে পায় ; এ অবস্থায় প্রস্তাবনার প্রতিবন্ধক কিছুই থাকে না। আমরা এমনও মধ্যে মধ্যে শুনিয়াছি যে জুরীরা কে কি মত দিবেন, বাটতে বসিয়া প্রতিবাসীর সহিত তাহার পরামর্শ অঁাটিয়া কাছারী যান, নহিলে চলে না, নিজে কিছুই বুঝেন না, হয় ত লাভালাভের বিষয় যিনি পরামর্শ তিনি একাই ভোগ করেন। অনেক সময়ে জুরীর সহিত কোন বন্দোবস্ত না করিয়া তাহার পরামশীর সহিত বন্দোবস্ত করিলেই চলে । অতএব জুরীর উৎকোচ অসম্ভব নহে। বিলাতেও তাহা আছে। কোথাও কোথাও শুনা যায় যে, জুরীর সহিত পূৰ্ব্বাহ্নে কোন রফা করিতে হয় না, বিচারের পর জুরীর “বিদায়” মামুলি দম্ভর । জুরী তাহা ইচ্ছা করিলে নিশ্চয়ই পায়। কিন্তু না চাহিলে পায় না। আমাদের দেশে “বিদায়” মন্দ কথা নহে। “বিদায়” “দক্ষিণা” প্রভৃতি অনেক প্রচলিত নিয়ম আছে, গুরু পুরোহিত, আত্মীয়, কুটুম্ব সকলেই “বিদায়” প্রত্যাশা করেন। গল্পীৰ জুরীর দুই এক জন কেনই বা তাহা প্রত্যাশা না করিবে।