পাতা:বঙ্গদর্শন-ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/৩৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২৮৫ ] মাধবীলতা YoC) ফেলিতেন, তাহার পর কথা কহিবার আর বাধা থাকিত না, প্রথম দুই একটি সংস্কৃত, পরেই বাঙ্গালা চলিত। তখন সকলেই কথা কহিতেন, কেবল চুড়াধন বাবু নিস্তব্ধ থাকিতেন। রামায়ণ, মহাভারত র্তাহার ভাল লাগিত না ; লোকের কেন ভাল লাগে, তাহাও তিনি অনুভব করিতে পারিতেন না । এক দিন তিনি দেওয়ান মহাশয়কে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, “আপনি কোন দিন রামায়ণ শুনিতে বসেন না কেন ?" দেওয়ান উত্তর করিলেন, “রামায়ণ কৰ্ম্মনাশ, একদিন শুনিলে, ছুইদিন কোন কৰ্ম্ম করিতে পারা যায় না।” চুড়াধন একটু হাসিলেন, তাহার বিকট দন্ত দেখা গেল। তাহ দেখিয়া দেওয়ান মহাশয়ের একজন পরিচারক ভাবিল, “দাত ছাড়ান যদি হাসি হয়, তাহা হইলে শৃগালের ও হাসি আছে।” א বাস্তব সকল হাসি, হাসি নহে। সকলে হাসিতে পারে না, অনেকে আবার হাসিবাব অধিকাৰীও নহে। অথচ সকলেই হাসিতে যান, হাসিতে কাহার না সাধ ? হাসি দেখিলে হাসি পায়, কিন্তু যে ব্যক্তি হাসিতে অনধিকারী, তাহার হাসি দেখিলে কেহ হাসে না, ভয় পায় ! মুখীরা হাসিতে জানে, সরল ও উদার ব্যক্তি বিলক্ষণ হাসিতে পাবে, প্রণয়ীর চমৎকার হাসে শোকাকুল ব্যক্তির মান হাসি হাসে, অন্ধকার ঝড় বৃষ্টিতেও কখন কখন দীপ-আলোক পড়ে, কিন্তু কুটিল ব্যক্তিবা হাসিতে পারে না ; তাহাতেই পরিচারক চুড়াধন বাবুর হাসিকে “দাত ছাড়ান" বিবেচনা করিয়াছিল । চুড়াধন বাবু প্রায় রাজবাটীতেই সময় অতিবাহিত করিতেন। কোন কার্য্যের বিশেষ ভার ছিল না, তথাপি তিনি প্রত্যুষে আসিয়া রাজস্বারে দাড়াইয়া থাকিতেন, ইন্দ্রভূপ বহির্গত হইলে সঙ্গে সঙ্গে পুষ্পোষ্ঠানে বেড়াইতেন, নিতান্ত নিকটে যাইডেন না, অথচ এমত দূরে থাকিতেন যে, অন্যের কথা যদিও একান্ত না শুনিতে পান, তথাপি রাজার উত্তব শুনিতে পাইবেন । যিনিই যত মৃত্যুস্বরে কথা বলুন, রাজা তাহার উচ্চৈঃস্বরে উত্তর দিতেন। ইন্দ্রভুপ কখন মৃত্যুস্বরে কথা কহিতে পারিতেন না। যিনি মৃত্যুস্বরে কথা কহিতে পারেন না, তিনি আবার প্রায় কোন কথা গোপন করিতেও পারেন না ; কথা আপনারই হউক, পরের হউক, সকলের সম্মুখে মুক্তকণ্ঠে আলোচনা করা তাহার অভ্যাস হয় । পুষ্পোষ্ঠান হইতে ইন্দ্রভূপ যখন বিষয় কাৰ্য্য করিতে যাইতেন, চূড়াধন বাৰু সেই অবকাশে রাজভৃত্য ও পরিচারকদিগের সহিত মিষ্টালাপ করিতেন ; কখন ৰ অধ্যাপকদের সহিত শাস্ত্রীয় কথা লইয়া তর্ক করিতেন। নানাশাস্ত্রে