পাতা:বঙ্গদর্শন-ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/৫০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রাকৃত প্রকরণ

ংস্কৃত হইতে প্রাকৃত ভাষা এবং সংস্কৃত বর্ণমালা হইতে প্রাকৃত বর্ণমালার উৎপত্তি হইয়াছে। প্রসিদ্ধ হেমচন্দ্র বলিয়াছেন “প্রকৃতি শব্দের অর্থ সংস্কৃত, তাহা হইতে উৎপন্ন ভাষার নাম প্রাকৃত।”

 সংস্কৃত অক্ষর সকলের উচ্চারণ অতিশয় কঠিন, স্ত্রী, বালক এবং মূর্খলোক দ্বারা ইহার কঠিন উচ্চারণ সকল কোমল রূপে পরিণত হইয়া প্রাকৃত ভাষার এবং তদীয় বর্ণমালার উৎপত্তি করিয়াছে।

 দেশভেদে প্রাকৃত ভাষার স্বরূপ ও সংজ্ঞা বিভিন্নরূপ হইয়াছে। যথা, শৌরসেনী, মাগধী, কর্ণাটী, মহারাষ্ট্রীয় ইত্যাদি। যাহা হউক কঠিন সংস্কৃত বর্ণকে কোমল করিয়া উচ্চারণ করাতে প্রাকৃতিক বর্ণমালার অক্ষরসংখ্যার অনেক ন্যূনত হইয়াছে, যথা—ইহাতে ঋ, ঌ, ঐ, ঔ এই চারিটা স্বরের ব্যবহার একবারে দৃষ্ট হয় না। ব্যঞ্জনের মধ্যে ঙ, ঞ; ন, য শ, ষ, ইহাদের এবং এতৎসংযুক্ত বর্ণের ব্যবহারও প্রাকৃত ভাষায় হইতে পারে না। ইহাতে ন স্থলে ণ, য স্থলে জ, শ, স্থানে স ব্যবহৃত হয়।[১]

 প্রাকৃতিক বর্ণমালায় ভিন্নরূপ বর্ণদ্বয়ের সংযোগ দৃষ্ট হয় না, অর্থাৎ ইহাতে স্ক, ব্দ, ষ্ট্র, জ্, ঞ ড্‌ড প্রভৃতি সংযুক্ত বর্ণ দেখা যায় না। ইহাতে কেবল একরূপ বর্ণের সংযোগই দৃষ্ট হয়। যথা—ক্ক, চ্চ, ম্ম, প্প, স্স, ব্ব ইত্যাদি। এ স্থলে ইহাও বক্তব্য যে প্রাকৃত ভাষায় যতগুলি সংযুক্ত বর্ণ আছে সমুদয়ই দ্বিবর্ণনিষ্পন্ন। ইহাতে তিন বা ততোধিক বর্ণের সংযোগ দৃষ্ট হয় না।


  1. “নোণ সর্ব্বত্র” “আদর্ব্বেজঃ” “শষোঃ সঃ” ইত্যাদি প্রাকৃতপ্রকাশ দেখ।
     যদ্যপি প্রকৃত প্রকাশকার বররুচি বলিয়াছেন প্রাকৃতে “খ ণ বর্ণৌঃ ন স্তঃ” কেবল খণ বর্ণ নাই তথাপি “ঐৎ এৎ” “ঔৎ ওৎ” ইত্যাদি সূত্র দ্বারা প্রাকৃতে ঐ ও ঔ কারের ব্যবহার নিষিদ্ধ হইয়াছে।