' পদোন্নতির পন্থা ७१¢ সকল নৌকা ডুবি হইত, তাহার দ্রব্যাদি উদ্ধার করা, তাহার অধিকারী থাকিলে সেই দ্রব্যাদি সমর্পণ করা ও অধিকারী না থাকিলে, তাহ রাজভাগুরে প্রেরণ করা এই সকল গঙ্গাপ্রহরীর কার্য্য ছিল। অঙ্গদেব তাহা যথারীতি নির্বাহ করিতেন। কিন্তু তাহার আর পদোন্নতি হয় না দেখিয়া, বিশেষ মনোযোগপূর্বক কাৰ্য্য করিবেন মনস্থ করিলেন । গঙ্গাপ্রহরীর যাহা প্রকৃতার্থে কৰ্ত্তব্য, তাহা জলের ভার ধরিতে লাগিলেন। গঙ্গাপ্রহরী হইয়া, গঙ্গার জল চুরি দেখা মহা পাপ । যে সকল গোরু গঙ্গার জল খাইত, তাহাদের নামে ফৌজদারী চার্জ আনিতে লাগিলেন, যে সকল নৌকা অন্ত নদী হইতে গঙ্গায় আসিয়াছিল, তাহদের নামে অনধিকার প্রবেশ বলিয়া চার্জ করিতে লাগিলেন। নৌকা আর ডুবিবার অপেক্ষ রহিল না, তাহার সমুদায় মালামাল বিক্রীত হইয়া, রাজভাণ্ডারে যাইতে লাগিল, রাজভাণ্ডার ক্রমে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিলশ কিছুদিন পরে রাজা জানিলেন যে, পূর্বের গঙ্গাপ্রহরীদের সময় অল্প আয় হইত, তাহারা অবশু অনুপযুক্ত ছিল, এক্ষণকার গঙ্গাপ্রহরী রিশেষ দক্ষব্যক্তি, তাহাই এত আয়বৃদ্ধি হইয়াছে । অঙ্গদেবের পসার দাড়াইয়া গেল, সেই অবধি যখন কোন উচ্চপদ খালি হইত, অঙ্গদেব সৰ্ব্বাগ্রে পাইতেন । “বর্তমান সময়ের দুই একটি পরিচয় দিই। রামধন দাদা নামে একজন সদরআলা ছিলেন, তিনি কয়েক বৎসর হইল, রাজকাৰ্য্য ত্যাগ করিয়াছেন ; হয় ত পৃথিবীও ত্যাগ করিয়াছেন, কিন্তু সে সম্বন্ধে অামি কোন নিশ্চয় সংবাদ জানি না, রামধন দাদা যদি জীবিত থাকেন, কৃপাপূর্বক আমার এ অপরাধ ক্ষমা করিবেন। তাহার প্রকৃত উপাধি কি ছিল, আমি জানিনা, তাহাকে সকলেই রামধন—দাদা বলিত। তিনি সকলকেই দাদা বলিতেন, কাজেই সকলে তাহাকে দাদা না বলিয়া থাকিতে পারিত না ; নিন্দকেরা বলিত, তিনি পঞ্চমপক্ষে বিবাহ করিয়াছিলেন। সেই জন্য বয়ঃকনিষ্ঠদের দাদা বলিয়া আপনার বয়স কমাইতেন । কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাহা নহে, তিনি পঞ্চমপক্ষে বিবাহ করিয়াছিলেন সত্য, অথচ চুলে কলপ দিতেন না ; কালাপেড়ে ধুতি পরিতেন না, টপ্পা গাইতেন না, তবে ভদ্রলোকমাত্রকেই তিনি যে দাদা বলিতেন, তাহার প্রকৃত কারণ নিন্দকের জানিত না বলিয়৷ নানাপ্রকার উপহাস করিত । প্রথমতঃ তিনি একজন জজ সাহেবের সরকার ছিলেন, আবশ্বক মতে কুঠির সমুদায় কাৰ্য্য করিতেন, খানসামারা সকলেই তাহাকে ভালবাসিত, তিনি তাহাদের ভালবামুন বা নাই বামুন, সকলকেই ভাই বলিয়া সম্বোধন করিতেন। সাহেবের সস্তানটকে সৰ্ব্বদাই ক্রোড়ে করিয়া বেড়াইতেন, তাহার সামান্ত অসুখ হইলে, চক্ষের জল মুছিতেন, ૩૨ના ]
পাতা:বঙ্গদর্শন-ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/৬৩৬
অবয়ব