পাতা:বঙ্গদর্শন-ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২৮৫ ] রাজসিংহ đầ> একব্যক্তি নাগরিককে বলিল, আমাকে দিল্লী যাইবার পথ দেখাইয়া দিতে পার? আমি কিছু বখশিস দিব। নাগরিক সম্মত হইয়া কিছুদূর অগ্রসর হইয় তাহাকে পথ দেখাইয়া দিল । মাণিকলাল তাহাকে পুরস্কৃত করিয়া বিদায় করিল, পরে দিল্লীর পথে, চারিদিক্‌ ভাল করিয়া দেখিতে দেখিতে চলিল । মাণিকলাল স্থির করিয়াছিল যে, রাজপুত অশ্বারোহীগণ অবশ্য দিল্লীর পথে কোথাও লুকাইয়া আছে। প্রথমত: কিছুদূর পর্য্যন্ত মাণিকলাল রাজপুত সেনার কোন চিত্ন পাইল না। পবে একস্থানে দেখিল, পথ অতি সঙ্কীর্ণ হইয়া আসিল । দুই পার্শ্বে দুইট পাহাড় উঠিয়, প্রায় অৰ্দ্ধ ক্রোশ সমান্তরাল হইয়া চলিয়াছে— মধ্যে কেবল সংস্কীর্ণ পথ। দক্ষিণদিকে পৰ্ব্বত অতি উচ্চ—এবং দুবারোহণীয়— তাহার শিখবদেশ প্রায় পথের উপর ঝুলিয়া পড়িয়াছে। বামদিকে পৰ্ব্বত, অতি ধীরে ধীরে উঠিয়াছে । আরোহণের সুবিধা, এবং পৰ্ব্বত ও অনুচ্চ । একস্থানে ঐ বামদিকে, একটি বন্ধ বাহিব হইয়াছে তাহা দিয়া একটু সূক্ষ্ম পথ আছে । নাপোলেয়ন প্রভৃতি অনেক দস্থ্য সুদক্ষ সেনাপতি ছিলেন। রাজা হইলে লোকে আব দস্থ্য বলে না । মাণিকলাল রাজা নহে সুতরাং আমরা তাহাকে দস্থ্য বলিতে বাধা, কিন্তু রাজদস্থাদিগের হ্যায় এই ক্ষুদ্র দসু্যরও সেনাপতির চক্ষু ছিল। পৰ্ব্বতনিরুদ্ধ সঙ্কীর্ণ পথ দেখিয়া সে মনে করিল, রাণা যদি আসিয়া থাকেন তবে এইখানেই আছেন। যখন মোগল সৈন্ত এই সঙ্কীর্ণ পথ দিরা যাইবে—এই পৰ্ব্বত শিখব হইতে রাজপুত অশ্ব বজের স্যায় তাহাদিগের মস্তকে পড়িতে পারিবে । দক্ষিণদিকের পর্বত দুরারোহণীয় ; অশ্বারোহিগণের আরোহণ ও অবতরণের অনুপযুক্ত, অতএব সেখানে রাজপুত সেনা থাকিবে না—কিন্তু বামের পর্বত হইতে তাহাদিগের অবতরণের বড় সুখ । মাণিকলাল তদুপরি আরোহণ করিল। তখন সন্ধ্যা হইয়াছে। উঠিয়া কোথাও কাহাকে দেখিতে পাইল না। মনে করিল, খুজিয়া দেখি, কিন্তু আবার ভাবিল, রাজা ভিন্ন আর কোন রাজপুত আমাকে চেনে না ; আমাকে মোগলের চর বলিয়া হঠাৎ কোন অদৃশ্য রাজপুত আমাকে মারিয়া ফেলিতে পারে। এই ভাবিয়া সে আর অগ্রসর না হইয়া, সেইস্থানে দাড়াইয়া বলিল, “মহারাণার জয় হউক!” এই শব্দ উচ্চারিত হইবা মাত্র চারি পাঁচজন শস্ত্রধারী রাজপুত অদৃশু স্থান হইতে গাত্ৰোখান করিয়া দাড়াইল, এবং তরবারি হস্তে মাণিকলালকে কাটিতে আসিতে উদ্ভত হইল । একজন বলিল, “মারিও না।” মাণিকলাল দেখিল, স্বয়ং রাণী ।