১২২ বঙ্গদর্শন । [ ৩য় বর্ষ, আষাঢ় । আবিষ্কার করিল, তাহাতে বড়ু-একটা সুবিধা হইল না । তাহার পরে রমেশ কর্তব্যসম্বন্ধে ভাবিতে বসিয়া গেল। খুব সম্ভব, ইহার.স্বামী ডুবিয়া মরিয়াছে । যদি-বা শ্বশুরবাড়ীর সন্ধান পাওয়া যায়, সেখানে পাঠাইলে তাহারা ইহাকে গ্রহণ করিবে কি না, সন্দেহ। মামার বাড়ী পাঠাইতে গেলেও ইহার প্রতি ন্যায়চরণ করা হইবে না । এতকাল বধুভাবে অন্তের বাড়ীতে বাস করার পর আজ যদি প্রকৃত অবস্থা প্রকাশ করা যায়, তবে সমাজে ইহার কি গতি হইবে, কোথায় ইহার স্থান হইবে ? স্বামী যদি বাচিয়াই থাকে, তবে সে কি ইহাকে গ্রহণ করিতে ইচ্ছা বা সাহস করিবে ? এখন এই মেয়েটিকে যেখানেই ফেলা হইবে, সেখানেই সে অতল সমুদ্রের মধ্যে পড়িবে । অার একটি কথা । রমেশকে এই বালিকা স্বামী বলিয়া জানিয়াছে । সমস্ত সংসারের প্রতিকুলতার মধ্যে রমেশের আদর্যত্ন পাইয়া তাহার প্রতি সে ভালবাসার সঙ্গে নির্ভর করিতে ও শিথিয়াছে, এখন ইহাকে কেমন করিয়া রমেশ বলিবে যে, “আমি তোমার স্বামী নহি, তুমি বিধবা ? তা ছাড়া, ইহাকে স্ত্রী ব্যতীত অস্তকোনরূপেই রমেশ নিজের কাছে রাখিতে পারে না, অন্যত্রও কোথাও ইহাকে রাখিবার স্থান নাই । কিন্তু তাই বলিয়া ইহাকে নিজের স্ত্রী বলিয়া গ্রহণ -করা ও চলে না । রমেশ এই বালিকাটিকে ভবিষ্যতের পটে নানাবর্ণের স্নেহসিক্ত তুলি স্বায় ফলাইয় যে গৃহলক্ষ্মীর মূৰ্ত্তি আঁকিয়া তুলিতেছিল, তাহ আবার তাড়াতাড়ি মুছিতে হইল । মন্ত্রের দ্বারা যে সম্বন্ধ পবিত্র হয় নাই, তাহা দিয়া গৃহদেবতার প্রতিষ্ঠা চলে না । পরের স্ত্রী, এ কথা মনে করিবামাত্র রমেশের সেই কল্পনাচ্ছবির হস্ত হইতে তাহার ঘরের প্রদীপটি খসিয়া পড়িল—তাহার চিরজীবনের ঘরটি অন্ধকার হইয়া গেল । রমেশ আর তাহার গ্রামে থাকিতে পারিল না । কলিকাতায় লোকের ভিড়ের মধ্যে আচ্ছন্ন থাকিয়া একটা কিছু উপায় খুজিয়া পাওয়া যাইবে, এই কথা মনে করিয়া রমেশ কমলাকে লইয়া কলিকাতায় আসিল এবং পূৰ্ব্বে যেখানে ছিল, সেখান হইতে দুৱে নুতন এক বাসা ভাড়া করিল। কলিকাতা দেখিবার জন্ত কমলার আওtহের সীমা ছিল না । প্রথমদিন বাসার মধ্যে প্রবেশ করিয়া সে জানলায় গিয়া বসিল—সেখান হইতে জনশ্রোতের অবিশ্রাম প্রবাহে তাহার মনকে নুতন নুতন কৌতুহলে ব্যাপৃত করিয়া রাখিল । ঘরে একজন ঝি ছিল, কলিকাতা তাহার পক্ষে অত্যন্ত পুরাতন। সে বালিকার বিস্ময়কে নিরর্থক মুঢ়তা জ্ঞান করিয়া বিরক্ত হইয়া বলিতে লাগিল—“হঁাগা, ই। করিয়া কি দেখিতেছ ? বেলা যে অনেক হইল, ‘চান” করিবে না ?” ঝি দিনের বেলায় কাজ করিয়া রাত্রে বাড়ী চলিয়া যাইবে । রাত্রে থাকিবে, এমন লোক পাওয়া গেল না ? রমেশ ভাবিতে লাগিল—“কমলাকে এখন ত এক শয্যায় আর রাখিতে পারি না-rঅপরিচিত জায়গায় সে বালিক একলাই বা কি করিয়া রাত কাটাইবে ?” কমলা তাহার নিজের ধন নয়, এইজন্য কমল রমেশের পক্ষে এক বিস্ত্রম
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/১২৭
অবয়ব