>ፃe অমিততেজা মহাবীর—তাহীর ভয়ে পঞ্চবটার তরুপত্র নিষ্কম্প হইয়া গিয়াছে, পার্শ্বে গোদাবরীর স্রোত মন্দীভূত হইয়া পড়িয়াছে, অস্তচুড়াবলম্বী স্বৰ্য্যও যেন রাবণের ভয়ে দিশ্বলয়ের প্রাস্তে লুকাইয়া পড়িয়াছেন, এই ভয়ানক অসুর যখন পরিত্রাজকবেশ ত্যাগ করিয়া সহসা রক্তমাল্য পরিয়া তাহার ঐশ্বৰ্য্য ও শক্তির গৰ্ব্ব করিতে লাগিল,—তখন সীত৷ লুক্রেশিয়ার স্তায় কিংবা ছিন্নলতার স্থায় ভুলুষ্ঠিত হইয় পড়িলেন না । যিনি লতিকার স্থায় কোমল, চীরবাস পরিতে যাইয়া যিনি সাশ্রনেত্ৰে স্বামীর মুখের দিকে চাহিয়া অবসর হইয়া পড়িয়াছিলেন, যিনি মৃদ্ধভাষায় নিজের মনের কথা ব্যক্ত করিয়া রামের কর্ণে অমৃতনিষেক করিতেন, সেই তম্বঙ্গী পুপালঙ্কণরশোভিনী সীত৷ সহসা বিদ্যলতার হ্যায় তেজস্বিনী হইয়া উঠিলেন । যাহার ভয়ে জগৎ ভীত, সতী তাহার ভীতিদায়ক হইয়া উঠিলেন । কে তাহার ফুল্লকুসুমকোমল রূপে এই বিজয়ন্ত্র, এই তেজ প্রদান করিল ? কে র্তাহার ভাষায় এই ক্রুদ্ধ অগ্নির স্তায় জালাময় কথা বিচ্ছুরিত করিয়া দিল ?—“আমার স্বামী মহাগিরির স্তায় অটল, ইন্দ্রতুল্য পরাক্রান্ত, আমার স্বামী জগৎপূজ্যচরিত্রশালী, জগদ্ভীতিদায়কতেজোদৃপ্ত, আমার স্বামী সত্যপ্রতিজ্ঞ, পৃথুকীৰ্ত্তি ; রাক্ষস, তুমি বস্ত্রদ্বারা অগ্নি আহরণ করিতে ইচ্ছা করিয়াছ, জিহবা দ্বারা ক্ষুর লেহন করিতে চাহিতেছ, কৈলাসপৰ্ব্বত হস্তদ্বারা উত্তোলন করিতে চেষ্টা পাইতেছ। রামের স্ত্রীকে স্পর্শ কর, এমন'শক্তি তোমার নাই । সিংহে ও শৃগালে, স্বর্ণে ও সীসকে যে বঙ্গদশম । ৩য় বর্ষ, শ্রাবণ । প্রভেদ, রামের সঙ্গে তোমার তদপেক্ষা অধিক প্রভেদ। ইক্রের শচীকে হরণ করিয়াও তোমার রক্ষণ পাইবার সুযোগ থাকিতে পারে, কিন্তু আমাকে স্পর্শ করিলে নিশ্চয় তোমার মৃত্যু।” বক্র কেশকলাপ সীতার তেজোদৃপ্ত মুখের চতুর্দিকে তরঙ্গিত হইয়া পড়িয়াছে, ঈষৎ গ্ৰীবা হেলাইয়া,—ফুল্লকমলপ্রভ রক্তিম বদনমণ্ডল উন্নমিত করিয়া সীতা যখন রাবণকে তীব্রভাষায় ভৎসনা করিলেন, তখন আমরা সতীর মূৰ্ত্তি দেখিলাম । ভারতের শ্মশানের প্রধুমিত অগ্নিচ্ছায়ায় স্বামীর পার্শ্বে বনফুলমুন্দর স্থিরপ্রতিজ্ঞ বদনে বিচ্ছুরিত যে সতীত্বের স্ত্র আমাদের চক্ষে রহিয়াছে, শ্মশানের অগ্নি যে শ্ৰী ভস্মীভূত করিতে পারে নাই, ভারতের প্রত্যেক গ্রাম—প্রত্যেক নদীপুলিনকে এক অশরীরী পুণ্যপ্রবাহে চিরতীৰ্থ করিয়া রাখিয়াছে, মরণে যে গরিম সীমস্ত উদ্ভাসিত করিয়া হিন্দুরমণীর সিন্দুরবিন্দুকে অক্ষয় সৌন্দৰ্য্য প্রদান করিয়াছে—আজি জীবনে সীতার সেই চির নমস্ত সতীমূৰ্ত্তি আমরা দেখিয়া কৃতার্থ হইলাম । রাবণ এই মূৰ্ত্তির জন্ত প্রস্তুত ছিল না ;– সে যতগুলি রমণীর কেশাকর্ষণ করিয়া সৰ্ব্বনাশিনী লঙ্কাপুরীতে . লইয়া আসিয়াছে, তাহাদের প্রত্যেকেই কত কাতরোক্তি ও বিনয় করিয়া তাহার হস্ত হইতে নিষ্কৃতি ভিক্ষণ করিয়াছে,—স্ত্রীলোকের করুণ কণ্ঠধ্বনি শুনিতে রাবণ অভ্যস্ত । কিন্তু এই অলৌকিক রূপলতায় তাদৃশ - মৃত্নতা কিছুমাত্র নাই,—পলাশদলস্থঙ্গর চক্ষে একটি অশ্রু নাই । রাবণের ভীতিকর প্রভাব জীবনে
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/১৭৫
অবয়ব