পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/২২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२२९ - বঙ্গদর্শন। " ৩য় বর্ষ, ভাজ । রাম সুগ্ৰীবের প্রতি ক্রুদ্ধ হইলেন,—গ্রাম্যসুখে রত মুখ সুগ্ৰীৰ উপকার পাইয়া প্রত্যুপকারে অবহেলা করিতেছে । লক্ষ্মণকে তিনি সুগ্ৰীবের নিকট পাঠাইয়া দিলেন— বন্ধুকে স্বীয় কৰ্ত্তব্যের কথা স্মরণ করাইয়। উদ্যোগে প্রবর্তিত করিবার জন্য যে সকল কথা কহিয়া দিলেন, তন্মধ্যে ক্রেণধস্থচক কয়েকটি কথা ছিল—“ন স সঙ্কুচিতঃ পস্থা যেন বালী হতো গতঃ । সময়ে তিষ্ঠ সুগ্ৰীব মা বালিপথমন্বগাঃ ”—“যে পথে বালী গিয়াছে, সে পথ সঙ্কুচিত হয় নাই ; সুগ্ৰীব, যে প্রতিজ্ঞ করিয়াছ, তাহাতে স্বপ্রতিষ্ঠ হও, বালীর পথ অনুসরণ করিও না । কিন্তু লক্ষ্মণের চরিত্র জানিয়া রাম একটা “পুনশ্চ” জুড়িয়া লক্ষ্মণকে সাবধান করিয়া দিলেন— “তাং প্রতিমন্ত্রবর্তম্ব পূৰ্ব্ববৃত্তঞ্চ সঙ্গতম্। সামোপছিতয়া বাচ রূক্ষাণি পরিবর্জয়ন্‌ ৷” “প্রীতির অনুসরণ ও পুৰ্ব্বসখ্য স্মরণ করিয়া রুক্ষতা পরিত্যাগপুৰ্ব্বক সশস্তৃবাক্যে সুগ্ৰীবের সঙ্গে কথা কহিও ।” এই সাবধানতার কারণ ছিল। কারণ কিছু পুৰ্ব্বেই লক্ষ্মণ বলিয়াছিলেন, “আজ সেই মিথ্যবাদীকে বিনাশ করিব, বালির পুত্র অঙ্গদ এখন বানরগণকে লইয়া জানকীর অন্বেষণ করুন।” লক্ষ্মণের তীক্ষ অন্যায়বোধ রামের কথায় প্রশমিত হয় নাই। তিনি স্বগ্রীবকে ক্রুদ্ধকণ্ঠে ভৎসনা করিয়া রোষ ফুরিত ধরে ধন্থ লইয়৷ দাড়াইয়া ছিলেন । ভয়ে বানরাধিপতি তাহার কণ্ঠবিলম্বিত বিচিত্র ক্রীড়ামাল্য ছেদনপূর্বক তখনই রামচন্দ্রের উদ্দেশে যাত্র করিলেন । এতাদৃশ তেজস্বী ক্ষত্রিয়কে তেজत्रिनैो সীতা, যে কঠোর বাক্য প্রয়োগ করেন, সে কঠোর বাক্য তিনি কিরূপে সহ করিয়াছিলেন, তাহ জানিতে কৌতুহল হইতে পারে । মারীচরাক্ষস রামের স্বর অনুকরণ করিয়া বিপন্নকণ্ঠে “কোথা রে লক্ষ্মণ” বলিয়া চীৎকার করিয়া উঠিল । সীতা ব্যাকুল হইয়া তখনই লক্ষ্মণকে রামের নিকট যাইতে আদেশ করিলেন । লক্ষ্মপ রামের আদেশ লঙ্ঘন করিয়া যাইতে অসন্মত হইলেন এবং মরীচ যে ঐ রূপ স্বরবিকৃতি করিয়া কোন দুরভিসন্ধিসাধনের চেষ্টা পাইতেছে, তাহা সীতাকে বুঝাইতে চেষ্ট। করিলেন । কিন্তু সীতা তখন স্বামীর বিপদ৮ শঙ্কায় জ্ঞানশূন্তা, লক্ষ্মণকে সাশ্রুনেত্রে ও সক্রোধে বলিলেন, “তুমি ভরতের চর, প্রচ্ছন্ন জ্ঞাতিশত্রু, আমার লোভে রামের অনুবভী হইয়াছ, রামের কোন অশুভ হইলে আমি অগ্নিতে প্রবেশ করিব।” এ কথা শুনিস্থ। লক্ষ্মণ ক্ষণকাল স্তম্ভিত ও বিমূঢ় হইয়। দাড়াইয়া রহিলেন, ক্রোধে ও লজ্জায় তাহার গও আরক্তিম হইয়। উঠিল । তিনি বলিলেন—“দেবি, তুমি আমার নিকট দেবতাস্বরূপা, তোমাকে আমার কিছু বলা উচিত নহে । স্ত্রীলোকের বুদ্ধি স্বভাবতই ভেদকল্পী ; তাহারা বিমুক্তধৰ্ম্ম, ক্রর ও চপল । তোমার কথা তপ্ত লৌহশেলের মত আমার কর্ণে প্রবেশ করিতেছে, আমি কোনক্রমেই তাহা সহ করিতে পারিতেছি না । তোমার আজ নিশ্চয়ই মৃত্যু উপস্থিত, চারিদিকে অশুভলক্ষণ দেখিতে পাইতেছি—”এই বলিয়া প্রস্থান করিবার পূৰ্ব্বে সীতাকে বলিলেন, “বিশালাক্ষি, এখন সমগ্র বনদেবতারী তোমাকে রক্ষা করুন।” ক্ৰোধ-কুরিতাধরে