পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/২৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষষ্ঠ সংখ্য । ] নৌকাডুবি । ૨.૭૧ বন দেখি, সেখানে আমি অসংশয়ে থাকিতে পারি না—আমার এই একটা মস্ত দুৰ্ব্বলতা আছে, এ কথা আমাকে স্বীকার করিতেই হইবে । যাই হোক, যোগেন ত কালই আসিতেছে, সে-ও যদি সমস্ত দেখিয়া-গুনিয়া নিজের বোনের সম্বন্ধে নিশ্চিস্ত থাকে, তবে এ বিষয়ে আমি আর কোন কথা কহিব না।” রমেশের ব্যবহারসম্বন্ধে প্রশ্ন করিবার সময় আসিয়াছে, অন্নদীবাবু এ কথা একেবারে বোঝেন না, তাহ লহে –কিন্তু সন্দেহ না করিলেই নিশ্চিস্ত থাকা সম্ভয এবং নিশ্চিন্ত থাকিলেই সুস্থ থাকিবার আশা করা যায় । যাহা অগোচরে আছে, তাহাকে বলপূর্ণক আলোড়িত করিয়া তাহার মধ্য হইতে হঠাৎ একটা ঝঞ্চ) আবিষ্কারের সম্ভাবনায় তিনি স্বভাবত তাহাতে কিছুমাত্র আগ্রহবোধ করেন না । মুনিসিপ্যালিটির অtচরণসম্বন্ধে আশঙ্কণ ও মোতঙ্ককে প্রশ্রয় দিতে তিনি উৎসাহ অনুভব করেন, কারণ, কলিকাতা-সহর তাহার কহ্যা নহে—কিন্তু উদ্বেগকে তিনি যে-কোন প্রকারে হউক নিজের ঘরের মধ্য হইতে ঠেকাইয়। রাখিতে চান । কারণ সেখানে তাহার আবির্ভাব হইলে বন্ধুবান্ধবদের সহিত তাহার সম্বন্ধে কেবল আলোচনা করিয়৷ ক্ষান্ত থাকিবীর জে থাকে না—সে তাহার কুৰ্ব্বল পাকস্থলী এবং অনিদ্রাপীড়িত ললাটফলককে খাতির করিয়া চলিবে না, ইহা তিনি নিশ্চয় জানেন । এই কারণে অল্পদাবাবু যেখানে নিশ্চি স্তমনে সন্দেহ করিতে পারেন, সেখানে সন্দেহ করিতেই ভালবাসেন এবং যেখানে চিন্তা করা উচিত ও স্বাভাবিক, সেখানেই তিনি নিঃসন্দিগ্ধ থাকিতে ইচ্ছা করেন । অক্ষয়ের উপর তাহীর অত্যন্ত রাগ হইল । তিনি কহিলেন, “অক্ষয়, তোমার স্বভাবটা বড় সন্দিগ্ধ ! প্রমাণ না পাইয়া কেন gfū-” অক্ষয় আপনাকে দমন করিতে জানে, কিন্তু উত্তরোত্তর আঘাতে আজ তাহার ধৈর্য্য ভাঙিয়া গেল। সে উত্তেজিত হইয়া কহিল, “দেখুন অন্নদাবাবু, আমার অনেক দোষ আছে ! আমি সৎপাত্রের প্রতি ঈর্ষা করি, আমি সাধুলোককে সন্দেহ করি। ভদ্রলোকের মেয়েদের ফিলজফি পড়াইবার মত বিদ্যা আমার নাই এবং তাহাদের সহিত কাব্য আলোচনা করিবার স্পৰ্দ্ধা ও আমি রাখি না— আমি সাধারণ দশজনের মধ্যেই গণ্য –কিন্তু চিরদিন আমি আপনাদের প্রতি অনুরক্ত, আপনাদের অমুগত । রমেশবাবুর সঙ্গে আর-কেণন বিষয়ে আমার তুলনা হইতে পারে না—কিন্তু এইটুকুমাত্র অহঙ্কার আমার আছে, আপনাদের কাছে কোনদিন আমার কিছু লুকাইবার নাই ! আপনাদের কাছে আমার সমস্ত দৈহু প্রকাশ করিয়া আমি ভিক্ষণ চাহিতে পারি, কিন্তু সিঁদ কাটিয়া চুরি করা আমার স্বভাব নহে । এ কথার কি অর্থ, তাহ। কালই আপনার বুঝিতে পারিবেন।” >ዓል চিঠি বিলি করিয়া দিতে রাত হইয়া পড়িল । রমেশ শুইতে গেল, কিন্তু ঘুম হইল না । তাহার মনের ভিতরে গঙ্গাযমুনার মত শাদা-কালো দুই রঙের চিন্তাধারা প্রবাহিত হইতেছিল । দুইটার কল্লোল একসঙ্গে মিশিয়া তাহার বিশ্রামক্ষণকে মুখর করিয়া তুলিতেছিল।