পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/২৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষষ্ঠ সংখ্যা। ] সাহিত্য-সমালোচনা ৷ ミ*○ মনের ভাবটা সত্য হইলেও বাহিরের প্রকাশটা সম্পূর্ণ তাহার অনুযায়ী ন হইতে পারে । এমন কি, মা-ও যখন সশব্দ বিলাপে পল্লীর নিদ্রাতঙ্গ। দুর করিয়া দেয়, তখন সে যে শুদ্ধমাত্র পুত্ৰশোক প্রকাশ করে, তাহু! নয়, পুত্ৰশোকের গৌরব প্রকাশ করিতে ও চায় । নিজের কাছে দুঃখ-মুখ প্রমাণ করিবার কোন প্রয়োজন হয় না-পরের কাছে তাহা প্রমাণ করিতে হয় । সুতরাং শোকপ্রকাশের জন্ত যেটুকু কাল্প। স্বাভাবিক, শোক প্রমাণের জন্ত তাহার চেয়ে স্থর চড়াইয়। না দিলে চলে না । ইহাকে কৃত্রিমতা বলিয়া উড়াইয় দিলে অদ্যায় হইবে । শোক প্রমাণ শোক প্রকাশের একটা স্বাভাবিক অঙ্গ । অামার ছেলের মূল্য যে কেবল আমার কাছে বেশি, তাহার বিচ্ছেদ যে কতগ1:ন মন্মাস্তিক ব্যাপার, তাহ পৃথিবীর আর কেহই যে বুঝিবে না, তাহার অভা বসত্ত্বে ও পুথি বার আর সকল{হ যে অত্যন্ত স্বচ্ছন্দচিত্তে অfই1রলি দ্রা ও আপিস-যাতায়াতে প্রবৃত্ত থাকিবে, শোক তুর মাতাকে তাহার পুত্রের প্রতি জগতের এই অবজ্ঞা অণঘাত করিতে থাকে । তখন সে নিজের শোকের প্রবলভার দ্বারা এই ক্ষতির প্রাচুর্য্যকে বিশ্বের কাছে ঘোষণা করিয়৷ তাহার পুত্রকে যেন গৌরবাস্থিত করিতে চায় । যে অংশে শোক নিজের, সে অংশে তাহার একটি স্বাভাবিক সংযম থাকে, যে অংশে তাহা পরের কাছে ঘোষণা, তাহ অনেক সময়েই সঙ্গত্তির সীমা লজঘন করে। পরের অসtড়চিত্তকে নিজের শোকের দ্বারা বিচলিত করিবার স্বাভাবিক ইচ্ছায় তাহার চেষ্টা অস্বাভাবিক উদ্যম অবলম্বন করে । কেবল শোক নহে, আমাদের অধিকাংশ হৃদয়ভাবেরই এই দুইটা দিকৃই আছে, একটা নিজের জন্ত, একটা পরের জন্ত । অামার হৃদয়ভাবকে সাধারণের হৃদয়ভাব করিতে পারিলে তাহার একটা সশস্ত্রনা, একটা গৌরব অাছে । আমি যাহাতে বিচলিত, তুমি তাহাতে উদাসীন, ইহা অামাদের কাছে ভ{ল লাগে না । কারণ, নানা লোকের কাছে প্রমাণিত ন হইলে সত্যতার প্রতিষ্ঠা হয় না । আমিই যদি আকাশকে হলদে দেখি, আর দশজনে না দেখে, তবে তাহাতে আমার ব্যাধিই সপ্রমাণ হয় । সেটা আমারই দুৰ্ব্বলতা । আমার হৃদয়বেদনায় পৃথিবীর যত বেশি লোক সমবেদন অনুভব করিবে, ততই তাহার সত্যত প্রতিষ্ঠিত হইবে । আমি যাহা একান্তভাবে অনুভব করিতেছি, তাহ যে অামার দুৰ্ব্বলতা, আমার ব্যাধি, আমার পাগলামি নহে, তাহা যে সত্য, তাহা সৰ্ব্বসাধারণের হৃদয়ের মধ্যে প্রমাণিত করিয়া আমি বিশেষভাবে সাস্বনা ও সুখ পাই । যাহা নীল, তাহ দশজনের কাছে নীল বলিয়া প্রচার করা কঠিন নহে, কিন্তু যাহা আমার কাছে স্থখ বা দুঃখ, প্রিয় বা অপ্রিয়, তাহা দশজনের কাছে মুখ বা দুঃখ, প্রিয় ব। অপ্রিয় বলিয়া প্রতীত করা দুরূহ। সে অবস্থায় নিজের ভাবকে কেবলমাত্র প্রকাশ করিয়াই খালাস পাওয়া যায় না ; নিজের ভাবকে এমন করিয়া প্রকাশ করিতে হয়,