পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৪১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবম সংখ্যা । ] —তাহ যেন যথাসম্ভব মর্ত্যসংস্পর্শবিহীন দেবলোকের আদশ । তাই, ভুবনেশ্বর-মন্দিরের চিত্রাবলীতে প্রথমে মনে বিস্ময়ের অপঘাত লাগে । স্বভাবত হর ত লাগিত না, কিন্তু আশৈশব ইংরাজিশিক্ষায় আমরা স্বর্গমর্ত্যকে মনে মনে ভাগ করিয়া রাথিয়ছি ৷ ‘ সৰ্ব্বদাই সন্তৰ্পণে ছিলাম, পাছে দেব-আদর্শে মানবভাবের কোন আঁচ লাগে ; পাছে দেবমানবের মধ্যে যে পরমপবিত্র স্বদুর ব্যবধান, ক্ষুদ্র মানব তাহা লেশমাত্র লঙ্ঘন করে । এখানে মানুষ দেবতার একেবারে যেন গায়ের উপর আসিয়া পড়িয়াছে—তাও যে ধূলা ঝাড়িয়া আসিয়াছে, তাও নয়। গতিশীল, কৰ্ম্মরত, ধুলিলিপ্ত সংসারের প্রতিকৃতি নিঃসঙ্কোচে সমুচ্চ হইয়া উঠিয়া দেবতার প্রতিমূৰ্ত্তিকে আচ্ছন্ন করিয়া রহিয়াছে । মন্দিরের ভিতরে গেলাম—সেখানে একটি ও চিত্র নাই, আলোক নাই, অনলস্কৃত ভূত অ-ফুটতার মধ্যে দেবমূৰ্ত্তি নিস্তব্ধ বিরাজ করিতেছে । ইহার একটি বৃহৎ অর্থ মনে উদর না হইয়। থাকিতে পারে না। মানুষ এই প্রস্তরের ভাষায় যাহা বলিবার চেষ্টা করিয়াছে, তাহা সেই বহু দুরকাল হইতে আমার মনের মধ্যে ধ্বনিত হইয়া উঠিল । সে কথা এই—-দেবত দুরে নাই, গির্জায় নাই, তিনি আমাদের মধ্যেই আছেন। তিনি জন্মমৃত্যু, সুখদুঃখ, পাপপুণ্য, মিলনবিচ্ছেদের মাঝখানে স্তন্ধভাবে বিরাজমান। এই ংসারই তাহার চিরন্তন মন্দির । এই সজীবসচেতন বিপুল দেবালর অহরহ বিচিত্র হইয়। মন্দিরের কথা । 8pషా রচিত হইয়া উঠিতেছে। ইহা কোনকালে নুতন নহে, কোনকালে পুরাতন হয় না । ইহার কিছুই স্থির নহে, সমস্তই নিয়ত পরিবৰ্ত্তমান– অথচ ইহার মহৎ ঐক্য, ইহার সত্যত, ইহার নিত্যতা নষ্ট হয় না, কারণ এই চঞ্চল বিচিত্রের মধ্যে এক নিত্যসত্য প্রকাশ পাইতেছেন । ভারতবর্ষে বুদ্ধদেব মানবকে বড় করিয়াছিলেন । তিনি জাতি মানেন নাই, যাগ- . যজ্ঞের অবলম্বন হইতে মানুষকে মুক্তি দিয়াছিলেন, দেবতাকে মামুষের লক্ষ্য হইতে অপস্থত করিয়াছিলেন । তিনি মানুষের আত্মশক্তি প্রচার করিয়াছিলেন । দয়া এবং কল্যাণ তিনি স্বর্গ হইতে প্রার্থনা করেন নাই, মানুষের অন্তর হইতেই তাহা তিনি আহবান করিয়াছিলেন । এমনি করিয়া শ্রদ্ধার দ্বারা, ভক্তির দ্বারা মানুষের অস্তরের জ্ঞান, শক্তি ও উদ্যমকে তিনি মহীয়ান করিয়া তুলিলেন । মানুষ ষে দান দৈবাধীন হীনপদার্থ নহে, তাহা তিনি ঘোষণা করিলেন । * এমন-সময় হিন্দুর চিত্ত জাগ্রত হইয়া কহিল—সে কথা যথার্থ—মানুষ দীন নহে, হান নহে ; কারণ, মামুষের যে শক্তি—যে শক্তি মামুযের মুখে ভাষা দিয়াছে, মনে ধী দিয়াছে, বাহুতে নৈপুণ্য দিয়াছে, যাহা সমাজকে গঠিত করিতেছে, সংসারকে চালনা করিতেছে, তাহাই দৈবী শক্তি । বুদ্ধদেব যে অভ্ৰভেদী মন্দির রচনা করিলেন, নবপ্রবুদ্ধ হিন্দু তাহারই মধ্যে র্তাহার দেবতাকে লাভ করিলেন । বৌদ্ধধৰ্ম্ম হিন্দুধৰ্ম্মের অন্তর্গত হইয়া গেল। মানবের