পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৫২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একাদশ সংখ্যা । ] করে, অামাদের বোধশক্তিকে উদ্বোধিত করিয়া তুলে । পুরাতন মহাসত্য এইরূপ নব নব উপলব্ধির দ্বারাতেই মঙ্গুষ্যের মধ্যে সজীব হইয়া, নুতন হইয়া বিরাজ করে । নব নব বসন্ত নব নব পুষ্প স্বষ্টি করে না —সেরূপ নূতনত্বে আমাদের প্রয়োজন নাই। আমরা আমাদের চিরকালের পুরাতন ফুলগুলিকেই বর্ষে বর্ষে বসন্তে বসন্তে নুতন করিয়া দেখিতে চাই। সংসারে যাহা-কিছু মহোত্তম, যাহা মহার্যতম, তাহা পুরাতন, তাহা সয়ল, তাহার মধ্যে গোপন কিছুই নাই ; র্যাহাঁদের অভু্যদয় বসন্তের হ্যায় অনিৰ্ব্বচনীয় জীবন ও যৌবনের দক্ষিণসমীরণ মহাসমুদ্রবক্ষ হইতে সঙ্গে করিয়া আনে, তাহারা সহসা এই পুরাতনকে অপূৰ্ব্ব করিয়া তোলেন—অতি পরিচিতকে নিজজীবনের নব নব বর্ণে, গন্ধে, রূপে সজীব, সরস, প্রস্ফুটিত করিয়া মধুপিপাস্থগণকে দিগৃদিগন্ত হইস্তে আকর্ষণ করিয়া আনেন । অতএব নুতন আবিষ্কার মানুষের কাছে যত গৌরবের, পুরাতনকে উপলব্ধি মাহুষের কাছে তদপেক্ষ অল্প গৌরবের নহে। মনুষ্য সমাজে কাব্যের সমাদর তাহার প্রমাণ । যাহ-কিছু মামুসের চির কালের সামগ্ৰী, কাব্য তাহণকেই মানুষের উপলব্ধির কাছে চিরদিন নুতন করিয়া রাখে। এই যে স্বৰ্য্যোদয়-স্বৰ্য্যশস্ত, এই যে নিশীথনক্ষত্রসভার নিস্তব্ধতা, এই যে ঋতুপৰ্য্যায়ের প্রাণभग्न সৌন্দর্য্যময় বৈচিত্র্য, এই যে জন্মমৃত্যুর নিঃশব্দ গীতায়াত, সুখদুঃখের অনন্ত আবর্তন, প্রবৃত্তির তরঙ্গলীলা, স্বেচ্ছপ্রেমের অবসানহীন সংখ্যাবিহীন ংসাঞ্চৰ্যাপী অাকর্ষণপাশ, ধৰ্ম্মপ্রচার । (S్చనీ ইহাদের দ্বারা আমরা নিরস্তর বেষ্টিত হইয়া আছি- অথচ নিয়ত অভ্যাসে ইহাদের অপরিমেয় রহস্য, ইহাদের অপরিসীম বিস্ময়করত। অণমাদিগকে স্পর্শ করে না । সংসারে মাঝে মাঝে এমন লোক জন্মে, অভ্যাস যাহাকে আচ্ছন্ন করিতে পারে না, নিখিল বিশ্বের রসসমুদ্র তাহার প্রত্যেক তরঙ্গের দ্বার। যাহার চিত্তকে অব্যবহিতভাবে আহত করে, জাগ্রত করে, ধবনিত করিয়া তোলে ; সেই কবির অনুভূতির ভিতর দিয়াই, আমরা যে বিশ্বের মধ্যে আছি, সেই বিশ্বকে হৃদয়ের মধ্যে লাভ করি ; যাহা চিরদিনের স্থলভতম সামগ্ৰী, তাহা যে কি পরম পদার্থ, তাহ জানিতে পারি ; জন্ম হইতে মৃত্যু পৰ্য্যন্ত যাহাকে প্রতিদিন পাইয়া প্রতিদিনই হারাইয়াছি, সেই মহাশ্চর্য্য নিখিলের রসম্পর্শ আমাদের বোধগম্য হয় । কিন্তু যাহার স্বভাবত এই নুতন-অমুভূতির ক্ষমতা নাই, সে যদি কেবলমাত্র হিতকামনায় অথবা যশঃপ্রার্থী হইয়া কাব্যরচনায় প্রবৃত্ত হয়, তবে সে অনিষ্ট করে। চিরপুরাতন তাহার হাতে চিরনদ্বীন না হইয়া জীর্ণতর হইয়া উঠে । কবির হস্তে যে ভাষা ভাবের বৌবনসঞ্চার করে, অকবির হস্তে সেইগুলিই ভাবকে জরাক্রান্ত করিয়া তুলে । সেই শব্দবিদ্যাস পাঠকদের অভ্যস্ত হইয়া যায় এবং সেই অভ্যস্ত প্রাণহীন শব্দের বেষ্টনে ভাবের সজীবতা থাকে না । ধৰ্ম্মপ্রচারসম্বন্ধে এ কথা বিশেষরূপে খাটে । আমরা ধৰ্ম্মনীতির সর্বজনবিদিত সহজ সত্যগুলি এবং ঈশ্বরের শক্তি ও করুণা প্রত্যহ পুনরাবৃত্তি করিয়া সত্যকে কিছুমাত্র