X o 8 বিপরীত কথা। এ কথা সত্য, প্রাচীনকালের সমস্ত জাতিই দীর্ঘকাল ধরিয়া শ্রতিপরম্পরায় গুহা-মতবাদকে রক্ষা করিয়াছিল, কিন্তু কিছুকাল পরে উহ লিপিবদ্ধও হইয়াছিল ; এইরূপ পাণ্ডুলিপি ও উৎকীর্ণ লিপি ইজিপস্তান, আসারীয়-ব্যাবিলোনীয়, চীনীয়, হিন্দু, পারসিক, ইহুদি-এই সকল জাতির মধ্যে প্রাপ্ত হওয়া যায়। আমি এ কথা স্বীকার করি, উহাদের মৰ্ম্মোদ ঘাটনের চাবিটি না পাইলে, ঐ সকল পাণ্ডুলিপির অর্থ বোধগম্য হওয়া কঠিন বা অসম্ভব ; কিন্তু ঐ সকল পুথি যে আছে এবং তাহার মধ্যে কতকগুণি গুহ ধরণের মতবাদ ও যে আছে তাহাতে সন্দেহ নাই । “গুহা-বৌদ্ধধর্মের” গ্রন্থকার আমাদিগকে এই কথা জানাইয়াছেন যে,- তিনি তাহার গ্রন্থের নাম “গুহা-বৌদ্ধধৰ্ম্ম” যে দিয়াছেন তাহার কারণ,--যদিও এই গুহাতন্ত্রের উপদেশ বহুপ্রাচীন যুগ হইতেই আরম্ভ হইয়াছিল, এবং গৌতম বুদ্ধের আবির্ভাবের বহুকাল পূৰ্ব্বে প্রচারিত হইয়াছিল,—কিন্তু গৌতম বুদ্ধ এই গুহাতন্ত্রের এতটা উন্নতি সাধনা করিয়াছিলেন যে এই গুহাতন্ত্র তাহারই নিজস্ব হইয়া পড়িয়াছে।” বস্তুতঃ গুহাতন্ত্র অতীব প্রাচীন কালের এবং ইহাও কাহারও অবিদিত নাই যে, সেই প্রাচীন কালে, কেবল দীক্ষিত ব্যক্তিরাই প্রকৃত ধৰ্ম্মমত জানিতে পারি ত । অতএব মিষ্টার সিনেট আমাদের নিক কিছুই নূতন বলেন নাই এবং এই কথা তিনি নিজেই স্বীকার করিয়াছেন। আর তিনি যে শাক্যমুনিকে এই গুহমতবাদের নবজীবনদাতা বলিয়। দাড় করাইয়াছেন, তাহার সঙ্গত কোন হেতু প্রদর্শন কর; র্তাহার পক্ষে কঠিন । তিনি যাহা বলিয়াছেন তাহার মধ্যে কোন প্রকৃত যুক্তি নাই । তিনি বলেন :-— বঙ্গদর্শন ১২শ বৰ্ম, জ্যৈষ্ঠ, ১৩১৯ “র্তাহার গ্রন্থ-প্রক্ষিপ্ত আলোকের সাহায্য ভিন্ন, প্রকৃত সত্যমুসন্ধায়ী সুধীগণ (মিষ্টার সিনেট সেই সকল সুধীগণকে সাহসী ও সামর্থ্য বান নামে অভিহিত করিয়াছেন এবং কতকগুলি প্রসিদ্ধ ভাষাভিজ্ঞ পণ্ডিতের নামোল্লেখ করিয়াছেন) ভারতীয় ধর্মগুলিরও সম্বন্ধে কিছুই বুঝিতে পরিবেন না। এই ঘোষণার পর,—সিনেট র্তাহার গ্রন্থের ভূমিকায় যে আশঙ্কা করিয়াছেন পাছে লোকে তঁহার কথা লঘুভাবে গ্রহণ করে, সে আশঙ্কা অমূলক বলিয়া মনে হয় না। স্পষ্টই দেখা যাইতেছে, যদি মিঃ সিনেট বড় বড় মুরোপীয় প্রাচ্যতত্ববেত্তা ও প্রাচ্য দেশীয় বড় বড় দার্শনিকদিগের কথা অগ্রাহ করেন এবং এই কথা বলেন যে, তাহার মতবাদগুলি কোন গ্রন্থে বা কোন পাণ্ডুলিপিতে পাওয়া যায় না, তাহা হইলে তর্কের মুখ এইখানেই ত আপনা হইতে বন্ধ হইয়। গেল। কিন্তু আমি ভাবিয়া পাই না, তিনি কিরূপে থিয়সফির লক্ষণ নির্দেশ করিবেন। এই থিয়সফি কোন অলৌকিক ব্যাপারের অস্তিত্ব স্বীকার করে না এবং বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাপদ্ধতিই উহার পত্তনভূমি। তথাপি, মিঃ সিনেট আমাদিগকে জানাইতেছেন যে, “এই বৈজ্ঞানিক দর্শন যাহা শিক্ষণ দেয় তাহাই প্রকৃত মতবাদ, তাহাই বৌদ্ধধৰ্ম্মের ভিতরকার জিনিস" । আরও তিনি এই কথা বলেন যে, "গুহ ধৰ্ম্মসংক্রান্ত যত সন্মিলনী আছে, তন্মধ্যে তিব্বতের ভ্রাতুমণ্ডলী সৰ্ব্বপ্রধান , তাহার সহিত কাহারও তুলনা হয় না।” এবং সিংহলদ্বীপ “ গুহ বৌদ্ধধৰ্ম্মের দ্বার সম্পূর্ণরূপে পরিযিক্ত”। আমি এক্ষণে স্পষ্টরূপে সপ্রমাণ করিব যে সিনেটের প্রদত্ত মতবাদগুলি পূৰ্ব্বোক্ত তিব্বতীয়- “যোগাচাৰ্য্য"সম্প্রদায়ের মতবাদ হইতে নিঃস্তত্ব। ( ক্রমশ ) শ্ৰীজ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর ।
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/১০৯
অবয়ব