পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] নয়। রাজত্ব হাতে আসিলে চাকরি ছাড়িয়া দেওয়া কঠিন ব্যাপার নহে, কিন্তু একবার বয়স উত্তীর্ণ হইয়া গেলে চাকরি পাওয়া সম্পূর্ণ অসম্ভব। ভবিষ্যতে অতুল সমৃদ্ধির অধীশ্বর কোন ব্যক্তি এরূপ পত্র পাইয়া ধৈর্য্য রক্ষা করিতে পারে? অনুকুল—অতুল সম্পদের অধিকারী, অসীম উন্নতির সাধক--অনুকুল ১০ টাকা বেতনের জমাদারের পদ গ্রহণ করিবে ? এরূপে তাহার মানহানি করিবার অধিকার কাহারো আছে ? অনুকূল পত্র হাতে করিয়৷ গৰ্জ্জিতে গৰ্জ্জিতে স্ত্রীর নিকট উপস্থিত হইয়৷ বলিল-“দেখ দেখি একবার তোমার বাবার আক্কেল ! আমাকে কি না জমাদারের কাজ করতে লিখছেন । আমাকে এ রকম করে অপমান করার কি প্রয়োজন ছিল ?” পত্নী তিলোত্তম। ইতিমধ্যেই লক্ষীর অগ্রদৃত রূপে স্বামীকে উপযুপিরি দুই কন্ঠ উপহার দিয়া আপনার মাতৃত্বের অধিকার পাকা করিয়া লইয়াছিলেন এবং উত্তরাধিকার স্বত্রে বোধ হয় পিতার অবিশ্বাসও র্তাহার চিত্তে কিয়ৎপরিমাণে সংক্রামিত হইয়াছিল ; সুতরাং পত্নী স্বামির তর্জনে ভীত না হইয়া বধুজনোচিত সঙ্কোচ ত্যাগ করিরা হাসিয়া বলিলেন “রাজ্য লাভের ত এখনো ৭ বৎসর দেরি ; ত গুদিন “তরুতলে” রাঙ্গুত্ব না করে কোন একটা কাজ কৰ্ম্ম করলে এমনিই বা কি ক্ষতি ?” অনুকূল আর সহ করিতে পারিল না। সেইদিনই সে খুড়িমাকে বলিয়া পত্নী ও কন্যান্ধয়কে তাহার শ্বশুয়ালয়ে পাঠাইয়। দিগ। ফলিত জ্যোতিষ ఫి రిలీ কস্তার মুখে সকল কথা শুনিয়া মনুষ্য চরিত্রজ্ঞ মাখন বাবু বলিলেন “তা হলে বাবাজির অদৃষ্টে অনেক দুঃখ আছে দেখচি।’ মুখে দুঃখে আশায় নিরাশায় পাঁচবৎসর কাটিয়া গেল। গ্রামের বারোয়ারি পুজার অবসানে অনুকূলের কতকগুলি নিষ্কৰ্ম্ম৷ বন্ধু তাহাকে বলিল—“ভাই তোমার শুভদিন ত নিকট হয়ে এলো। এই সময়টা দিনকতক আমোদ করলে হয় না?” বন্ধুবৎসল অল্পকূল কহিল “বেশত, বল কি করতে চাও।” বন্ধুরা বলিল—“যাত্রার দল করলে হয় না ? যাত্রার দলে যেমন পয়সা তেমনি আমোদ । মতিরায় ত যাত্রার দল করে, রীতিমত জমিদারি করে গেল ! দিব্যি এদেশ ওদেশ ঘুরে বেড়ান যাবে। খাওয়া দাওয়ারও জুত আছে। কি বল ভাই ? রাজার পার্ট তোযার বাধা রহিল।" কথাটা তাহারও নিতান্ত মন্দ লাগিলন । যতদিন আসল যাত্রা না হওয়া যায় ততদিন রাজার পার্ট করিয়া চালচলনটা পাকা করিয়া লইলে ক্ষতি কি ? মাসখানেকের মধ্যে সে উদ্যোণী বন্ধুবর্গের সাহায্যে পৈতৃক জমি জমা বাধা দিয় এবং মহাজনের কাছে হাওনোট কাটিয়া হাঙ্গার টাকা সংগ্ৰহ করিল। উদ্যোগ পৰ্ব্বট পরম উল্লাসেই কাটিয়া গেল। 'ছোকরা’ সংগ্রহ, গায়ক বাদক পরীক্ষা, পোষাক খরিদ প্রভূতি ব্যাপারে দিনগুলা নদীর খরস্রোতের মত দ্রুতবেগে বহিয়া চলিল। কিন্তু অবশেষে যমন সমস্ত আরোজন সম্পূর্ণ হইল তখন দেখা গেল যে সংগৃহীত