৪র্থ সংখ্যা ] নাথ যে ঘোর বিপাকে পতিত হন, সেরূপ ৰূপাকে পড়িয়া অতি অল্প লোকেই আবার মাথা তুলিয়া দাড়াইতে পারিত। ধন-মানের আশা করিয়াই সংসারে প্রবেশ করিয়াছিলেন, সহসা ধন-মান-পদ সকল হারাইয়া, নিরতিশয় দারিদ্র্যের মধ্যে পড়িয়া গেলেন। যাহা কিছু পৈতৃক সম্পত্তি ছিল,তাহার পদচ্যুতির আদেশের বিরুদ্ধে বিলাত আপীল করিতে যাইয়া, তাহাও একরূপ নিঃশেষ হইয়া গেল। পৈতৃক ভদ্রাসনের নিজের অংশটুকু মাত্র অবলম্বন করিয়া, দারিদ্র্যের বিভীষিক মাথায় লইয়া, সুরেন্দ্রনাথ আবার কলিকাতায় আসিয়া দীড়াইলেন। স্বরেন্দ্রনাথ রাজকৰ্ম্মেই জীবন অতিবাহিত করিবেন ভাবিয়া, তাহারই উপযুক্ত শিক্ষা লাভ করিয়াছিলেন ; কোনো প্রকারের ব্যবসায়িকবিদ্যালাভ করেন নাই। রাজদ্বরে লাঞ্ছিত হইয়া অন্যত্র তাহার বিদ্যার ও যোগ্যতার উপযুক্ত কৰ্ম্ম লাভ করাও তখন সম্ভব ছিল না। কিন্তু পদচু্যত এবং একরূপ হৃতসৰ্ব্বস্ব হইয়াও স্বরেন্দ্রনাথ কিছুতেই দমিয়া গেলেন না। আপনার পুরুষকারের প্রভাবে সমুদায় প্রতিকূল অবস্থাকে উপেক্ষ করিয়া নৃতন ক্ষেত্রে নূতন কৰ্ম্মজীবন গড়িতে আরম্ভ করিলেন। কিছু দিন পূৰ্ব্বে যে ব্যক্তি আসিষ্ট্যান্ট ম্যাজিষ্ট্রেট রূপে ইংরেজ রাজপুরুষদিগের সমকক্ষ হইয়াছিলেন, তিনিই এখন সীমান্য বেতনে মেট্রোপলিটন কলেজে অধ্যাপকের কৰ্ম্ম গ্রহণ করিয়া আপনার জীবিকা অর্জন করিতে লাগিলেন। এরূপ অবস্থায় পড়িলে অনেক লোকই একেবারে ভাঙ্গিয়া চুরিয়া যাইত । পুনরায় আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করিবার যে শক্তি ও উদ্যম আবশ্যক, २ চরিত-চিত্র ২২৩ অনেক লোকেই তাহ। আর সংগ্ৰহ করিতে পারিত না। কিন্তু দমিয়া যাওয়া কাহাকে বলে, স্বরেন্দ্রনাথ ইহা একেবারেই জানেন না। জীবন-সংগ্রামে স্বরেন্দ্রনাথ সময় সময় হটিয়া গিয়াছেন, কিন্তু কখনই পরাভূত হন নাই । ইহা তাহার প্রকৃতিগত উচ্চ অঙ্গের রাজসিকতারই ফল। জীবের জীবনী-শক্তি একদিকে ব্যাঘাত পাইলে যেমন আর একদিকে আপনাকে গড়িয়া তুলিতে চেষ্টা করে, স্বরেন্দ্রনাথের বলবতী কৰ্ম্মস্পৃহাও এই রূপে যখনই একদিকে প্রতিকূল অবস্থার দ্বারা প্রত্যাহত হইয়াছে তখনই অপূৰ্ব্ব কুশলতা সহকারে, আপনার অন্তঃপ্রকৃতির প্রেরণাতেই যেন, অজ্ঞাতসারে নূতন পথে যাইয়া আত্মচরিতার্থতা লাভের চেষ্টা করিয়াছে। রাজকৰ্ম্মে প্রতিষ্ঠা লাভ করিবার আশায় স্বরেন্দ্রনাথ প্রথম সংসারে প্রবেশ করিয়াছিলেন। সে আশা যখন অকালে সমূলে উৎপাটিত হইয়া গেল, তখন তিনি স্বদেশের রাষ্ট্রীয় জীবনের বৃহত্তর কৰ্ম্মক্ষেত্রে আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করিতে কৃতসংকল্প হইয়া, সেই দিকে আপনার শরীর মনের সমুদায় শক্তি নিয়োগ করিতে আরম্ভ করিলেন। সুরেন্দ্রনাথের যোগসিদ্ধি স্বরেন্দ্রনাথের মধ্যে কখনো ধৰ্ম্মজীবনের কোনো প্রকারের যাহা আড়ম্বর দেখা যায় নাই। তিনি ঈশ্বর মানেন ; কিন্তু সার্থক বা নিরর্থক ঈশ্বর-প্রসঙ্গে কখনো কালাতিপাত করেন বলিয়া শুনা যায় নাই । স্বদেশের বা বিদেশের ধৰ্ম্মশাস্ত্রের বা তত্ত্ববিদ্যার সঙ্গে র্তাহার যে কোনো প্রকারের সাক্ষাৎ ও ঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিল বা আছে, এমনও কোনো