পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩০ করা একান্তই অসম্ভব। সে অদ্ভুত চেষ্টা সৰ্ব্বদাই বন্ধ্যার পুত্ৰশোকের ব্যথার ন্যায় কল্পিত ও অলীক হইবেই হইবে । কেবল সস্তানবতী রমণীই যেমন আপনার অস্তরের নাৎসল্য রসের অভিজ্ঞতার দ্বারা অপরের মাতৃ-স্নেহের বিবিধ প্রকাশের প্রকৃত মৰ্ম্ম নিৰ্দ্ধারণ করিতে পারেন ; সেইরূপ অনন্যসাধারণ সাধনসম্পদ-সম্পন্ন সদগুরুগণই নিজেদের গভীর আধাত্মিক অভিজ্ঞ । তার দ্বারা পুরাতন শাস্ত্রের প্রকৃত মৰ্ম্ম উদঘাটন করিতে সমর্থ হন। প্রত্যেক বিদ্যার শাস্ত্রই, বহুকালব্যাপীসাধনা দ্বারা যাহারা সেই বিদ্যাকে প্রকৃতভাবে অধিগত করিয়াছেন, সেইরূপ অধ্যাপক ও আচাৰ্য্যগণের শিক্ষার সত্যাসত্যের সাক্ষ্য দেয় ; আর এই সকল অধ্যাপক এবং আচাৰ্য্যগণও নিজেদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা বলে আপনাদের বিদ্যাসম্বন্ধীয় শাস্ত্রের সত্যাসত্য নিৰ্দ্ধারণে সমর্থ হন । অতএব ধৰ্ম্মশাস্ত্রের মৰ্ম্ম উদঘাটনে সদৃগুরুর প্রামাণ্য ও প্রয়োজন নাই, এ কথা বলিলে চলিবে কেন ? অথচ মাটিন লুথার-প্রবৰ্ত্তিত Protestant খৃষ্ঠা সাধনা ধৰ্ম্মসাধনে যেমন শাস্ত্রের ও স্বভিমতের সেইরূপ সদগুরুরও যে একটা সঙ্গত স্থান ও অধিকার আছে, ইহা অস্বীকার করে । ইহার ফলে প্রথমে ধৰ্ম্মশাস্ত্রের মৰ্ম্মনিৰ্দ্ধারণে প্রাক্কত জনের অসংস্কৃত বিচারবুদ্ধি এবং লৌকিক স্যায়ের ইন্দ্রিয়-প্রত্যক্ষ অনুমান ও উপমান এই প্রমাণদ্বয়ই একমাত্র কষ্টিপাথর হইয়া দাঁড়ায় এবং ক্রমে প্রাকৃত বুদ্ধি বিচারের প্রাবল্য হেতু শাস্ত্রের প্রামাণ্যমৰ্য্যাদাটুকুও একেবারে নষ্ট হইয়া যায় । এই রূপেই য়ুরোপে অষ্টাদশ ও উনবিংশ খৃষ্ট শতাব্দীর স্বাধীচিস্তার বা Free নাmu Thoএর এবং বঙ্গদর্শন [ ১২শ বৰ্ষ, শ্রাবণ ১৩১৯, যুক্তিবাদের বা Rationalismএর প্রতিষ্ঠা হয়। এই স্বাধীনচিন্তা ও যুক্তিবাদ প্রবল হইয়াই য়ুরোপীয় লোকচরিত্রে একটা অসংযত ও অসঙ্গত ব্যক্তিত্বাভিমান জাগাইয়া তুলে। এই ব্যক্তিত্বাভিমানই ফরাসীবিপ্লবের তরঙ্গমুখে সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতার নামে আত্মপ্রতিষ্ঠার ও আত্মচরিতার্থতালাভের চেষ্ট্র করে। আমার বুদ্ধি যাহা সত্য বলে তাঁহাই কেবল সত্য, সত্যের আর কোনো বাহিরের প্রামাণ্য নাই, আমার সংজ্ঞান বা Conscience যাহাকেভাল বলে তাঁহাই ভাল,—ইহার উপরে ভালমন্দের আর কোনো উচ্চতর বিচারক নাই—এই বস্তুকেই অষ্টাদশ ও উনবিংশ খৃষ্ট শতাব্দীর যুরোপীয় সাধন। স্বাধীন চিন্তার আদর্শ বলিয়া গ্রহণ করে। এই স্বাধীন চিখার প্রভাবেই য়ুরোপে স্বাধীনতার নামে একটা অসঙ্গত ও অসংযত ব্যক্তিত্বাভিমান জাগিয়া উঠে, এবং ইহার ফলে ক্রমে সমাজের গ্রন্থি শিথিল, ধৰ্ম্মের প্রভাব স্নান এবং আধ্যাত্মিক জীবনের শক্তি ও সত্য ক্ষয় পাইতে হারম্ভ করে । আধুনিক ভারতে ধৰ্ম্ম ও সমাজসংস্কার ইংরেজিশিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের নববিক্ষিত সম্প্রদায়ের উপরেও এই য়ুরোপীয় স্বাধীনচিন্তার ও যুক্তিবাদের প্রভাব অত্যন্ত প্রবল হইয় উঠে এবং তাহদের প্রাণে স্বাধীনতার নামে একটা অসংযত ব্যক্তিত্ব ভিমান জাগিয়া আমাদের বর্তমান ধৰ্ম্ম ও সমাজসংস্কারের সূত্রপাত করে। এই ধৰ্ম্ম ও সমাজসংস্কার-চেষ্টার বহুবিধ ভ্রম-ক্রট এবং অসম্পূর্ণতাসত্ত্বেও আধুনিক ভারতের ব্যক্তি গন্ত ও সামাজিক জীবনগঠনের জন্য তাই