পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৬০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૭હ8 সেই সন্তোগলোলুপ। জুলিয়েটই অকাতরে রোমিওর জন্য মরিতে পারিয়াছিল। রোমিওও মরিবার পূৰ্ব্বে জুলিয়েটের মৃতকল্প দেহে শেষ চুম্বন ও শেষ আলিঙ্গন না দিয়া থাকিতে পারে নাই। এই আসঙ্গলিঙ্গ মৃত্যুকালেও লোককে ছাড়িতে চাহে না। সন্তোগ একীকরণের প্রধান সহায়, যদি সে সম্ভোগ মাত্র ইন্দ্ৰিয়-চপলতার দ্বারা সাধিত না হইয়া প্রণয়ের দ্বারা সাধিত হয়। ষে ইঞ্জিয়-পরিতৃপ্তি ক্ষণিক উত্তেজনা গ্ৰন্থত, তাহা নীচ ও ঘূণ্য, কিন্তু যে আকর্ষণে আকৃষ্ট হইয় প্রণয়ীযুগল পরস্পরের আলিঙ্গনের জন্ত লীলায়িত হয়, তাহাকে কাব্যজগত হইতে বিসর্জন দিবার জো নাই। তা যদি দেওয়া যায়, তাহ হইলে ডেস্ডিমেীণ, শকুন্তলা এমন কি সীতা-সাবিত্রীকে পৰ্য্যন্ত কাব্য-জগত হইতে বিদায় লইতে হয়। তাই বলিয়াছিলাম যে, ভালবাসাকে আজকালকার সমালোচকেরা যতই ছাকিতে চেষ্ট করুন, ইহা হইতে আসঙ্গলিঙ্গারূপ কাঁটাগুকে একেবারে বাদ দেওয়া চলিবেই না । সাধে কি বৈজ্ঞানিক ভালবাসাকে একটা contagious disease (ছোয়াচে রোগ) ঠিক করিয়া зан-statis (Love bascilli) ista ব্যস্ত হইয়া পড়িয়াছেন। তা সমালোচক মহাশয়ের যতই হাওয়ায় হাত পা নাড়িবার পরামর্শ দিতে থাকুন, দার্শনিক “মদনমুখ চ পেটিকা” লিখিতে থাকুন, যদি ভালবাসার অস্তিত্ব জগতে ক্ষুণ্ণ থাকে, তাহা হইলে সাক্ষাৎ মহাদেবকে অপরাধী মদনকে পুনরুজ্জীবিত করিতে হইবে, এবং সে পক্ষে স্বরং দেবতারাই প্রার্থী হইবেন। বঙ্গদুশশ [ ১২শ বৰ্ষ, মাঘ ১৩১৯ স্বীকার করিতে বাধ্য নই যে, জয়দেবে ইন্দ্রিয়ের আকর্ষণ ও দৈহিক সম্ভোগের কথা বেশী মাত্রায় আছে। আছে বলিয়াই যে জয়দেব ভালবাসা বুঝিতেন না, তাহ নয়। ভিতরকার কথা ছাড়িয়া দিলেও, অর্থাং জয়দেবকে আদি বৈষ্ণব কবি ভাবিয়া বিচার না করিলেও, ইহা মানিতে .হইবে যে, জয়দেব একজন প্রেমিক কবি ও উচ্চ অঙ্গের প্রেমের কবি। জয়দেবের গীতগোবিন্দ নিরবচ্ছিন্ন কামের গান নহে, তাহা একটু তলাইয়া দেখিলেই বুঝা যাইবে। আজ এমন দিনকাল পড়িয়াছে যে, এ কথাটা বণিতেও একটু ভয় হইতেছে, কারণ জয়দেবে যে কিছু ভাল আছে, এ কথা বিশ্বাস করান নিতান্ত সহজ কাজ নহে। অনেকের ধারণা যে ইঞ্জিয়-লোলুপতাই জয়দেবের কবিতার সর্বস্ব এবং শুধু এই জন্তই আমরা জয়দেবকে তথা অন্যান্ত বৈষ্ণব কবিকে আদর করি। বাঙ্গালী চরিত্রের যথেষ্ট অবনতি হইয়াছে, সে বিষয়ে মতদ্বৈধ থাকিতে পারে না, কিন্তু তাই বলিয়া আমরা বাঙ্গালী এতই উচ্ছন্ন গিয়াছে যে, কবির কাব্যে কেবল এই কুৎসিৎ অংশটুকু ধরিয়াই কবিকে আমরা আদর করি, এ কথা আমি তো স্বীকার করিতে প্রস্তুত নহি। অথচ জয়দেবের আদর বঙ্গদেশে যথেষ্টই আছে তাহা দেখিতে পাই, এবং ইহাতে জান৷ যাইতেছে যে, বিলাতেও আজকাল তাহার প্রতিপত্তি হইয়াছে ও হইতেছে। আমরা যেন মনুষ্যত্ববর্জিত হইয়াছি, কিন্তু সেখানে তো মানুষ আছে, তাহারা কি দেখিরা জয়দেবকে আদর করিতে আরম্ভ