পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৭৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૧૭8 রাধিকাকে কত বুঝাইল, কত অসুযোগ করিল, “তোর যে সবই উলট” বলিয়া কত তিরস্কার করিল, করিয়া তাহাকে প্রকৃতিস্থ করিল। কিন্তু সখীরও তো একটু রঙ্গ দেখিবার ইচ্ছা হয়, সে তাই আর কোনও কথা না কহিয়া চুপ করিয়া থাকিল। এদিকে শ্রীরাধার মান প্রাণের আকুলতর মুখে ভাসিয়া গিয়াছে, অথচ যাহাকে এইমাত্র তিরস্কার করিয়া বিদায় করিয়াছেন তাহাকে কি করিয়া ফিরাইবেন এই চিন্তাতে হৃদয় এখন মগ্ন হইয়াছে। সখী বুঝিতেছে অথচ কোনও কথা কহিতেছে না, বোধ হয় মনে মনে সে একটু হাসিয়া লইতেছে এবং মনে মনে বলিতেছে— বিদায় করেছ যারে নয়ন জলে । এখন ফিরাবে তারে কিসের ছলে ? ঐরাধার বড় বিপদ, এ বিপদে সখী ভিন্ন গতি নাই, অথচ সখীকে কিছু খুলিয়াও বলিতে পারিতেছেন না, মনের বাসনা দীর্ঘ নিশ্বাসে ও সখীর প্রতি বার বার সলজ্জ চাহনিতে প্রকাশ পাইতেছে। একটা হৃদয় যেন বিনা কথায় ফুটিয়া উঠিয়াছে, ছবিট বড় মনোরম মনে হয়, যেন এমনি অবস্থায় শ্রীরাধিকাকে আর একটুক্ষণ দেখিতে পাইলে আমাদের নয়ন সার্থক হইত। ঠিক এমনি ছবিটা আমরা বিদ্যাপতিতে দেখিতে পাই না, সেখানে সখীও রাধিকাকে দুকথা শুনাইয়াছে, রাধাও সখীকে অনুরোধ করিয়াছেন। এমনি ধারা নিৰ্ব্বাক্‌ নিবেদন, এমনি কথা না কহিয়া মনের তাব ব্যক্ত করিবার ছবি বিদ্যাপতিয়'মানে নাই, আছে ভাবী বিরহে, তাও বড় স্বৰূর, किङ्खु এই ছবিটাতে যে মনের ভাব ব্যক্ত হইয়াছে, তাহা অধিক জটিল। জয়দেব চিত্রাঙ্কণে যে বঙ্গদর্শন [ ১২শ বর্ষ, চৈত্র, ১৩১৯ বেশ সিদ্ধহস্ত তাহা এই চিত্র হইতে বুঝা যাইতেছে। 暴· সখী রাধিকার কাছে কোনও কথা বলুক আর না বলুক, সে যে শ্রীরাধার এই অবস্থার কথা ক্রকে কোনও উপায়ে জানাইয়াছিল সে বিষয়ে ভুল নাই, কারণ আমরা দেখিতে পাই যে তৎক্ষণাৎ শ্ৰীকৃষ্ণ শ্রীরাধার কাছে আসিয়া তাহার মানের অবশিষ্টাংশ ভাঙ্গিবীর জন্য অনেক কথা বলিতে লাগিলেন। বদসি যদি কিঞ্চিদপি দগুরুচি কৌমুদী হরতিদরতিমিরমতিঘোরম্। ফুর দধরসাধবে তব বদনচন্দ্রমা রেচয়তি লোচন-চকোরম্ ॥ অপরাধভীত শ্ৰীকৃষ্ণের মুখ ছদও পূৰ্ব্বে একেবুরেই খোলে নাই, কিন্তু এখন শ্রীরাধার কোপাপুনয়নসংবাদে র্তাহার কবিত্বের ফোয়ার খুলিয়া গিয়াছে, এখন কতক সাহসও বাড়িয়ছে এবং মনের কথা, প্রকাশ করিয়া বলিবার অবসরও মিলিয়াছে; মুখও খুলিয়াছে; অপরাধী রাণীর দরবারে হাজির হইয়া “আজি” করিয়াছেন, আমি দোষী তাহাতে “সত্যমেবাসি যদি স্বদতি ময়ি কোপিনী” তাহা হইলে আমায় সাজা দাও আমাকে লইয়া তোমার যাহা অভিরুচি হয় তাই কর “যেন বা তবতি মুখ জাতম্।” তুমি যে আমার সব— ত্বমসি মম ভূষণং ত্বমসি মম জীবৃনং पनि भन्न उद জলধিরত্নম্। আমার ভুল কি তুমি ক্ষমা করিবে না ? তুমি ত জান তুমি যাহাতে মুখে থাক আমি সেই কামনা লইয়াই জীবিত আছি।