পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যষ্ঠ সংখ্যা । ] শকুন্তলা । 家し°○ ভাঙিবার মত,হইল। ঋষিশিষ্য শাঙ্গ রব রাজভবনে প্রবেশ করিয়া কহিলেন, “যেন অগ্নিবেষ্টিত গৃহের মধ্যে আসিয়া পড়িলাম।” শারদ্বত কহিলেন, “স্নাত ব্যক্তির তৈলাক্তকে দেখিয়া, গুচি ব্যক্তির অশুচিকে দেখিয়া, জাগ্ৰত জনের সুপ্তকে দেখিয়া এবং স্বাধীন পুরুষের বদ্ধকে দেখিয়া যে ভাব মনে হয়, এই সকল বিষয়ী লোককে দেখিয়া আমার সেইরূপ মনে হইতেছে।”—একটা যে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র লোকের মধ্যে আসিয়া পড়িয়াছেন, ঋষিকুমারগণ তাহ সহজেই অনুভব করিতে পারিলেন । পঞ্চম অঙ্কের আরম্ভে কবি নানা প্রকার অtভাসের দ্বারা অ মাদিগকে এই ভাবে প্রস্তুত করিয়া রাখিলেন যাহাতে শকুন্তলা-প্রত্যাথ্যান-ব্যাপার অকস্মাৎ অতিমাত্র আঘাত না করে | হংসপদিকার সরল করুণগীতে এই ক্রুরকাণ্ডের ভূমিকা হইয়। রহিল । তাহার পরে প্রত্যাখ্যান যখন অকস্মাৎ বজের মত শকুন্তলার মাথার উপরে ভাঙিয়া পড়িল, তখন এই তপোবনের দুহিতা বিশ্বস্ত হস্ত হইতে বাণাহত মৃগীয় মত বিস্ময়ে, ত্রাসে, বেদনায় বিহবল হইয়া ব্যাকুলনেত্ৰে চাহিয়৷ রহিল। তপোবনের পুষ্পরাশির উপর অগ্নি আসিয়া পড়িল । শকুন্তলাকে অন্তরেবাহিরে ছায়ায়-সৌন্দর্য্যে আচ্ছন্ন করিয়া বে একটি তপোবন লক্ষ্যে-অলক্ষ্যে বিরাজ করিতেছিল, এই বজ্রাঘাতে তাহা শকুন্তলার চতুর্দিক হইতে চিরদিনের জন্য বিশ্লিষ্ট হইয়৷ গেল, শকুন্তলা একেবারে অনাবৃত হইয়া পড়িল। কোথায় তাত কথ, মাতা গৌতমী, কোথায় অনস্বয়া-প্রিয়ংবদা, কোথায় সেই সকল তরুলতাপগুপক্ষীর সহিত মেহের সম্বন্ধ, মাধুৰ্য্যের যোগ, সেই সুন্দর, শাস্তি, সেই নিৰ্ম্মল জীবন ! এই এক মুহূর্বের প্রলয়াভিঘাতে শকুন্তলার যে কতখানি বিলুপ্ত হইয় গেল, তাহ দেখিয়া আমরা স্তম্ভিত হইয়া যাই । নাটকের প্রথম চারি অঙ্কে যে সঙ্গীতধ্বনি উঠিয়াছিল, তাছ। একমুহূর্তেই নিঃশব্দ হইয়া গেল ! তাহার পরে শকুন্তলার চতুর্দিকে কি গভীর স্তব্ধতা, কি বিরলতা ! যে শকুন্তল৷ কোমল হৃদয়ের প্রভাবে তাহার চারিদিকের বিশ্ব জুড়িয়া সকলকে আপনার করিয়া থাকিত, সে আজ কি একাকিনী ! তাহার সেই বৃহৎ-শূন্ততাকে শকুন্তলা আপনার একমাত্র মহৎ দুঃখের দ্বারা পূর্ণ করিয়া বিরাজ করিতেছে। কালিদাস যে তাহাকে কর্থের তপোবনে ফিরাইয়া লইয়া যান নাই, ইহা তাহার অসামান্ত কবিত্বের পরিচয় । তাহার পূর্বপরিচিত বনভূমির সহিত তাহার পূৰ্ব্বের মিলন আর সম্ভবপর নহে। কথtশ্রম হইতে যাত্রাকালে তপোবনের সহিত শকুন্তলার কেবল বাহবিচ্ছেদমাত্র ঘটিয়াছিল, দুষ্যস্তভবন হইতে প্রত্যাখ্যাত হইয়া সে বিচ্ছেদ সম্পূর্ণ হইল—সে শকুন্তল। আর রহিল না, এথন বিশ্বের সহিত তাহার সম্বন্ধপরিবর্তন হইয়া গেছে, এখন তাহাকৈ তাহার পুরাতন সম্বন্ধের মধ্যে স্থাপন করিলে অসামঞ্জস্ত উৎকট নিষ্ঠুরভাবে প্রকাশিত হইত। এথন এই দুঃখিনীর জন্য তাহার মহৎ দুঃখের উপযোগী বিরলতা আবশুক । সখীবিহীন নুতন তপোবনে কালিদাস শকুন্তলার বিরহদুঃখের প্রত্যক্ষ অবতারণা