পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩১৬ করিয়া তুলিয়াছে—আমাদের মনকে শেষ পর্য্যন্ত তরঙ্গিত করিয়া রাখিয়াছে । কাব্যে যে নয় রস আছে, অনেক কবিই সেই ঈর্ষাম্বিত নয় রসকে নয় মহলে পৃথকৃ করিয়া রাখেন, —দ্বিজেন্দ্রলালবাবু অকুতেভয়ে এক মহলেই একত্রে তাহীদের উৎসব জমাইতে বসিয়াছেন । করুণ, মাধুর্য্য, বিস্ময়, কখন্‌ কে কাহারগায়ে আসিয়া পড়িতেছে, তাহার ঠিকানা নাই । এইরূপে মন্দ্র কাব্যের প্রায় প্রত্যেক কবিতা নব নব গতিভঙ্গে যেন নৃত্য করিতেছে, কেহ স্থির হইয়। নাই ;--ভাবের অভাবনীয় আবৰ্ত্তনে তাহার ছন্দ ঝঙ্কৃত হইয়া উঠিতেছে এবং তাহার অলঙ্কারগুলি হইতে আলোক ঠিকািরয়া পড়িতেছে । কিন্তু নৰ্ত্তনশাল। নটীর সঙ্গে তুলন। করিলে মন্দ্রকাব্যের কবিতাগুলির ঠিক বর্ণনা হয় না। কারণ ইহার কবিতাগুলির মধ্যে পৌরুষ আছে। ইহার হাস্য, বিষাদ, বিদ্রুপ, বিস্ময়, সমস্তই পুরুষের—তাহাতে চেষ্টাহীন সৌন্দর্য্যের সঙ্গে একটা স্বাভাবিক সবলতা আছে। তাহাতে হাবভাব ও সাজসজ্জার প্রতি কোন নজর নাই । বরং উপমা দিতে হইলে শ্রাবণের পূর্ণিমারাত্রির কথা পাড়া যাইতে পারে। আলোক এবং অন্ধকার, গতি এবং স্তব্ধতা, মাধুর্য্য ও বিরাটভাব আকাশ জুড়িয়া অনায়াসে মিলিত হইয়াছে । আবার মাঝে মাঝে এক-এক-পস্লা বৃষ্টিও বাতাসকে আর্দ্র করিয়া ঝরঝরশব্দে ঝরিয়া পড়ে । মেঘেরও বিচিত্র ভঙ্গী ;--তাছা কখনো চাদকে অদ্ধেক ঢাকিতেছে, কখন পুরা ঢাকিতেছে, কখনো বঙ্গদর্শন । তাহার কাব্যে হাস্ত, . [ ২য় বর্ষ, কাৰ্ত্তিক । বা হঠাৎ একেবারে মুক্ত করিয়া দিতেছেকখনো বা ঘোরঘটায় বিদ্যুতে ফুরিত ও গর্জনে স্তনিত হইয়। উঠিতেছে। দ্বিজেন্দ্রলালবাবু বাংলাভাষার একটা নূতন শক্তি আবিষ্কার করিয়াছেন। প্রতিভা সম্পন্ন লেখকের সেই কাজ । ভাষাবিশেষের মধ্যে যে কতটা ক্ষমতা আছে, তাহা তাহারাই দেখাইয়া দেন-পূৰ্ব্বে যাহার অস্তিত্ব কেহ সন্দেহ করে নাই,তাহাই তাহারা প্রমাণ করিয়া দেন । দ্বিজেন্দ্রলালবাবু বাংলা কাবাভাষার একটি বিশেষ শক্তি দেখাইয়া দিলেন । তাহা ইহার গতিশক্তি । ইহাঁ যে কেমন দ্রুতবেগে, কেমন অনায়াসে ভাষা হইতে ভাষাস্তরে, ভাব হইতে ভাবাস্তরে চলিতে পারে, ইহার গতি যে কেবল মাত্র মৃত্নমস্থর আবেশভারাক্রাপ্ত নহে, তাই কবি দেখাইয়াছেন । ছন্দসম্বন্ধেও যেন স্পদ্ধাভরে কবি যথেচ্ছ ক্ষমতা প্রকাশ করিয়াছেন । তাছার “আশাকৰ্বাদ” ও “উদ্বোধন” কবিতায় ছন্দকে একেবারে ভাঙিয়া-চুরিয়া উড়াইয়া দিয়া ছন্দোরচনা করা হইয়াছে । তিনি যেন সাংঘাতিক সঙ্কটের পাশ দিয়া গেছেন—কোথাও যে কিছু বিপদ ঘটে নাই, তাছা বলিতে পারি না। কিন্তু এই দুঃসাহস কোন ক্ষমতাহীন কবিকে আদৌ শোভা পাইত না। এইবার নমুনা উদ্ধৃত করিবায় সময় আসিয়াছে। কিন্তু আমরা ফুল ছিড়িয়া বাগানের শোভা দেখাইবার আশা করি না । পাঠকগণ কাব্য পড়িবেন-কেৰল সমালোচনা চাখিয়া ভোজের পূর্ণমুখ নষ্ট করি বেন না। ’ *