পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

यंत्रमर्थन । ها যথার্থ ইতিহাসের সন্ধান পাওয়া যায়। চতুর্থ তরঙ্গে গৌড়ীয় শৌর্য্য ও সাহসের যে আখ্যায়িকা বর্ণিত হইয়াছে, তাহার মূলে । ঐতিহাসিক সত্য নিহিত না থাকিলে, কবি কহলণ রামস্বামীর শূন্ত-মন্দির লক্ষ্য করিয়া “অদ্যপি মন্দির শূন্ত রহিয়াছে, অথচ ভূমণ্ডল গৌড়ীয় শৌর্য্যযশে পরিপূর্ণ হইয়াছে”—এরূপ কথা কদাচ লিপিবদ্ধ করিতেন না। ইহাকে গল্পমাত্র মনে করা অসম্ভব ; কারণ ইহার সহিত কাশ্মীরের একটি প্রসিদ্ধ মন্দিরধ্বংসের বিবরণ সংযুক্ত হইয়া রহিয়াছে, এবং বংশপরম্পরায় জনশ্রুতি সেই মূলঘটনাকে সঞ্জীবিত রাখিয়াছে। কবিকল্পনা নানা অলঙ্কারে মূলতথ্যকে সুসজ্জিত করিয়া থাকিলেও, প্রকৃত তথ্য একেবারে বিলুপ্ত হয় নাই। গৌড়াধিপতি কাশ্মীরে তীর্থদর্শনকালে কাশ্মীরাধিপতির চরহস্তে নিহত হইলে, গৌড়ীয়গণ ত্রিগ্রামীনামক গ্রামে উপনীত হইয়া মন্দিয় অবরোধ ও রামস্বামীর বিগ্রহমূৰ্ত্তি চুর্ণ করিবার পর কাশ্মীরসেনাহস্তে একে একে নিধন প্রাপ্ত হয়,—এই মূল-ঘটনাই গৌড়ীয় স্বামিভক্তি ও শৌর্য্যবীর্য্যের যথেষ্ট সাক্ষাদান করিতেছে। কবি তজ্জন্তই গৌড় ও কাশ্মীরের দূরত্ব, এক দেশ হইতে অন্ত দেশ আক্রমণের স্বাভাবিক ৰাধাবিঘ্ন ও পরলোকগত প্রভুর স্মৃতিমাত্র অৰলম্বন করিয়া আত্মবিসর্জনের চেষ্টাকে স্মরণ করিয়া গৌড়ীয় বীরবৃন্দকে স্বকৃত ইতিহাসে সাধুবাদ প্রদান করিরাছেন। কাশ্মীরাবরোধে যাত্রা করিলে সকলকেই মৃত্যুমুখে পতিত হইতে হইবে, ইহা জানিস্বাও গৌড়ীয়গণ প্রভুহত্যার প্রতিশোধ [४खाई লইবার জন্য দীর্ঘপথ অতিক্রম করিয়া প্রক্তিশোধগ্রহণান্তে পলায়ন না করিয়া আত্মবিসজর্জন করার গৌড়ীয় প্রকৃতির যে পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায়, তাহ সৰ্ব্বকালে ইতিহাসের নিকট সমাদরলাভের যোগ্য । কবি কহলশ সে সমাদর প্রদর্শন করায় তাহার সত্যামুরাগই পরিস্ফুট হইয়াছে। মুক্তাপীড়ের নৃশংসস্বভাব চিত্রিত করিবার জন্ত কল্পনা বলে কাহিনীরচনা করা উদ্দেশু হইলে, এরূপ কাহিনী রচিত হইত না । দুর্ভাগ্যক্রমে এই গৌড়েশ্বরের নাম বা বংশপরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায় না । মুক্তাপীড় ললিতাদিত্যের দিগ্বিজয়কাহিনী হইতে এই পৰ্য্যন্ত জানিতে পারা যায়—তৎকালে পুৰ্ব্বে কামরূপ, দক্ষিণে উৎকল, পশ্চিমে কলিঙ্গ ও কান্ত কুক্ত গৌড়ীয় হিন্দুসাম্রাজ্যের সীমারূপে পরিচিত ছিল। সুতরাং তৎকালে যাহার গৌড়ীয়নামে পরিচিত ছিল, তাহারা যে বঙ্গবাসী, তদ্বিষয়ে সন্দেহ নাই। কবি কহলণ তাহাদিগকে শুামলবর্ণের মনুষ্য বলিয়। বর্ণনা করায়, তাহা আরও পরিস্ফুট হইয়াছে। মুক্তাপীড় ললিতাদিত্যের দিগ্বিজয়কালে গৌড়জয়ের উল্লেখ না থাকায়,ভূগৗড়ের প্রাধান্ত ও শৌর্য্য আরও বিশদরূপে বিবৃত হইয়াছে। গৌড়ীয় বাহুবিক্রমের কথা উত্তরকালের গৌড়েশ্বরবর্গের তাম্রশাসনে উৎকীর্ণ দেখিয়া অনেকে তাহাকেও কবিকল্পনা বলিয়া ব্যাখ্যা করিরা থাকেন। কিন্তু ভারতবর্ষে একচ্ছত্র সম্রাটের শাসনক্ষমতা ধ্বংসপ্রাপ্ত হইবার পর, নানা ক্ষুদ্রসাম্রাজ্যের অভু্যদয় হইয়া পরস্পরের বিজয়কামনা যেরূপ প্রবল হইয়া