পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় সংখ্যা । ] মায়ে গিয়া বসিতে পারি। কোন প্রশ্ন নাই, জবাবদিহীনাই, সেই বিশ্বাস, সেই প্রেম, সেই সহজ আনন্দ ! কিন্তু হায়, জগৎসংসারে সেইটুকুমাত্র জায়গায় ফিরিবার পথ আর নাই ! এই ছাদে আশার পাশে মাছুরের একটুখানি ভাগ মহেন্দ্র একেবারে হারাই য়াছে। এতদিন বিনোদিনীর সঙ্গে মহেন্দ্রের অনেকটা স্বাধীন সম্বন্ধ ছিল ;–ভালবাসিবার উন্মত্ত সুখ ছিল, কিন্তু তাহার অবিচ্ছেদ্য বন্ধন ছিল না। এখন মহেন্দ্র বিনোদিনীকে সমাজ হইতে স্বহস্তে ছিন্ন করিয়া আনিয়াছে, এখন আর বিনোদিনীকে কোথাও রাখিবার, কোথাও ফিরাইয়া দিবার জায়গা নাই— মহেন্দ্রই তাহার একমাত্র নির্ভর । এখন ইচ্ছা থাক্ বা না থাকৃ, বিনোদিনীর সমস্ত ভার তাহাকে বহন করিতেই হইবে। এই কথা মনে করিয়া মহেন্দ্রের হৃদয় ভিতরেভিতরে পীড়িত হইতে লাগিল । তাহদের ছাদের উপরকার এই ঘরকরন, এই শান্তি, এই বাধাবিহীন দাম্পত্যমিলনের নিভৃত রাত্রি, হঠাৎ মহেন্দ্রের কাছে বড় আরামের বলিয়া বোধ হইল। কিন্তু এই সহজ মুলভ আরাম, যtহতে একমাত্র তাহারই অধিকার, তাহাই আজ মহেঞ্জের পক্ষে দুরাশার সামগ্রী । চিরজীবনের মত যে বোঝা সে মাথায় তুলিয়া লইয়াছে, তাহ নামাইয়া মহেন্দ্র একমুহূৰ্ত্তও হাফ ছাড়িতে পারিবে না। দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া মহেন্দ্র একবার আশার দিকে চাহিয়৷ দেখিল !... নিস্তব্ধ রোদনে বক্ষ পরিপূর্ণ করিয়া আশা তখনো নিশ্চল হইয়া বসিয়া আছে--রাত্রির অন্ধকার, চোখের বালি । ዓ® জননীর অঞ্চলের ন্যায়, তাহার লজ্জা ও বেদনা আবৃত করিয়া রাখিয়াছে মহেন্দ্র পায়চারি ভঙ্গ করিয়া কি বলিবার জন্ত হঠাৎ আশার কাছে আসিয়া দাড়াইল । সমস্ত শরীরের রক্ত আশার কাণের মধ্যে গিয়া শব্দ করিতে লাগিল, সে চক্ষু মুদ্রিত করিল। মহেন্দ্র কি বলিতে আসিয়াছিল, ভাবিয়া পাইল না,—তাহার কিই বা বলিবার আছে! কিন্তু কিছু একটা না বলিয়া আর ফিরিতে পারিল না । বলিল—“চাবির গোচ্ছাট কোথায় ?” . r চাবির গোচ্ছ ছিল বিছানার গদিটার নীচে। আশা উঠিয়া ঘরের মধ্যে গেলমহেন্দ্র ভাহার অনুসরণ করিল। গদির নীচে হইতে চাবি বাহির করিয়া অাশা গদির উপরে রাখিয়া দিল । মন্থেক্স চাবির গোচ্ছা লইয়া নিজের কাপড়ের আলমারিতে এক একটি চাবি লাগাইয়া দেখিতে লাগিল । আtশ। আর থাকিতে পারিল না, মৃদুস্বরে কহিল, “ ও অালমারির চাবি আমার কাছে ছিল না।” কাহার কাছে চাবি ছিল, সে কথা আশার মুখ দিয়া বাহির হইল না, কিন্তু মহেন্দ্র তাহা বুঝিল । আশা তাড়াতাড়ি ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল, ভয় হইল, পাছে মহেন্দ্রের কাছে অীর তাহার কান্না চাপ না থাকে। অন্ধকারে ছাদের প্রাচীরের এক কোণে মুখ ফিরাইয়া দাড়াইয়া উচ্ছসিত রোদনকে প্রাণপণে রুদ্ধ করিয়া সে কাদিতে লাগিল । কিন্তু অধিকক্ষণ র্কাদিবার সমর ছিল না। হঠাৎ মনে পড়ির গেল, মহেন্দ্রের আহারের সময় হইরাছে। দ্রুতপদে অtশ নীচে চলিয়া গেল