পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় সংখ্যা । ] ভান্ধিয়াছে, তাহা দক্ষিণে-বামে একটু কাং হইলেই একেবারে জলের মধ্যে গিয়া পড়িতে হইবে । অতএব বড়ই স্থির হইয়া হাল ধরা চাই, একটু ভুল, একটু নাড়াচাড় সহিবে না। এ অবস্থায় কোন রমণীর হৃদয় না কম্পিত হয় ? পরের মন সম্পূর্ণ বশে রাখিতে যেটুকু লীলাখেলা চাই, যেটুকু অন্তরালের প্রয়োজন, এই সঙ্কীর্ণতার মধ্যে তাহার অবকাশ কোথায় ? একেবারে মহেঞ্জের সহিত মুখোমুখি করিয়া তাহাকে সমস্ত জীবন যাপন করিতে প্রস্তুত হইতে হইবে। প্রভেদ এই যে, মহেন্দ্রের কুলে উঠিবার উপায় আছে, কিন্তু বিনোদিনীর তাহা নাই । বিনোদিনী নিজের এই অসহার অবস্থা যতই সুস্পষ্ট বুঝিল, ততই সে মনের মধ্যে বলসঞ্চয় করিতে লাগিল । একটা উপায় তাহাকে করিতেই হইবে, এ ভাবে তাহার চলিবে না । যে দিন বিহারীর কাছে বিনোদিনী নিজের প্রেম নিবেদন করিয়াছে, সে দিন হইতে তাহার ধৈৰ্য্যের বাধ ভাঙিয়া গেছে। যে উদ্যত চুম্বন বিহারীর মুখের কাছ হইতে সে ফিরাইয়া লইয়া আসিয়াছে, জগতে তাহ কোথাও আর নামাইয়া রাঁখিতে পারিতেছে না, পূজার অর্ঘ্যের ন্তায় দেবতার উদ্দেশে তাহা রাত্রিদিন বহন করিয়াই রাখিয়াছে। বিনোদিনীর হৃদয় কোন অবস্থাতেই সম্পূর্ণ হাল ছাড়িয়া দিতে জানে না – নৈরাশুকে সে স্বীকার করে না। তাছার মন অহরহ প্রাণপণ বলে বলিতেছে, আমার” এ পূজা বিহারীকে গ্রহণ করিতেই হইবে।” বিনোদিনীর এই দুৰ্দ্ধান্ত প্রেমের উপরে চোখের বালি ) ፃ¢ তাহার আত্মরক্ষার একান্ত আকাঙ্ক্ষী ধোগ দিল। বিহারী ছাড়া তাহার আর উপায় নাই। মহেন্দ্রকে বিনোদিনী খুব ভাল - করিয়াই জানিয়াছে—তাহার উপরে নির্ভর করিতে গেলে সে ভর সয় নী—তাঁহাকে ছাড়িয়া দিলে তবেই তাহাকে পাওয়া যায়, তাহাকে ধরিয়া থাকিলে সে ছুটিতে চায়। কিন্তু নারীর পক্ষে যে নিশ্চিত্ত বিশ্বস্ত নিরাপদ নির্ভর একান্ত অবিশুক, বিহারীই তাহ দিতে পারে । আজ আর বিহারীকে ছাড়িলে বিনোদিনীর একেবারেই চলিবে না । গ্রাম ছাড়িয়া আসিবার দিন তাহার নামের সমস্ত চিঠিপত্র নূতন ঠিকানায় পাঠাইবার জন্ত মহেন্দ্রকে দিয়া বিনোদিনী ষ্টেশনের সংলগ্ন পোষ্ট আপিসে বিশেয করিয়া বলিয়া আসিয়াছিল "বিহারী যে একেবারেই তাহার চিঠির কোন উত্তর দিবে না, এ কথা বিনোদিনী কোনমতেই স্বীকার করিল না— সে বলিল, “আমি সাতটা দিন ধৈর্য্য ধরিয়৷ উত্তরের জন্ত অপেক্ষা করিব, তাহার পরে দেখা যাইবে।” এই বলিয়া বিনোদিনী অন্ধকারে জানালা খুলিয়া গ্যাসালোকদীপ্ত কলিকাতার দিকে অন্তমনে চাহিয়া রহিল । এই সন্ধাবেলায় বিহারী এই সহরের মধ্যেই আছেইহারই গোটাকতক রাস্তা ও গলি পার হইয়া গেলেই এখনি তাহার দরজার কাছে পৌঁছান যাইতে পারে - তাহার পরে সেই জলের কলওয়ালা ছোট আঙিনা, সেই সিড়ি, সেই সুসজ্জিত পরিপাটী আলোকিত নিভৃত ঘরটি—সেখানে নিস্তন্ধ শাস্তির মধ্যে বিহারী একলা কেদারায় বসিয়া আছে—হয় ত কাছে