পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় প্রথম খণ্ড.djvu/১১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয়-সংখ্যা । ] : প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতার আদর্শ। ৬৯ সম্পূর্ণ নহে । সাহিত্যে ও শিল্পে ভাবের अब्रिुङ, गन्त्रणङ ७ धैका श्रेष्ङहे ब्रध्নার সৌন্দর্য্য উদ্ভূত হইয়া থাকে। কিন্তু বর্তমান যুরোপে ভাব ও চিন্তার অপরিসীম বহুলতায়, রচনার এই মহৎ বিশুদ্ধ সারল্য রক্ষা করা উত্তরোত্তর কঠিন হইতেছে। আধুনিক যুরোপীয় সভ্যতার প্রত্যেক ংশে প্রত্যংশেই আমরা এই বিচিত্র প্রকৃতি দেখিতে পাই। নিঃসন্দেহ ইহার অসুবিধাও আছে । ইহার কোন একটা অংশকে পৃথক করিয়া দেখিতে গেলে, হয় ত, প্রাচীনকালের তুলনায় খৰ্ব্ব দেখিতে পাইব—কিন্তু সমগ্রভাবে দেখিলে, ইহার ঐশ্বৰ্য্য আমাদের কাছে প্রতীয়মান হইবে । যুরোপীয় সভ্যতা পঞ্চদশ-শতাব্দ-কাল টিকিয়া আছে এবং বরাবর অগ্রসর হইয়া চলিয়াছে । ইহা গ্ৰীকৃসভ্যতার দ্যায় তেমন দ্রুতবেগে চলিতে পারে নাই বটে,কিন্তু পদে পদে নব নব অভিঘাত প্রাপ্ত হইয়া এখনো ইহ সম্মুখে ধাবমান। অন্তান্ত সভ্যতায় এক ভাব-—এক আদশের একাধিপত্যে অধীনতাবন্ধনের স্বষ্টি করিয়াছিল, কিন্তু য়ুরোপে কোন এক সামাজিক শক্তি অপর শক্তিগুলিকে সম্পূর্ণ অভিভূত করিতে না পারায়, এবং ঘাতপ্রতিঘাতে পরস্পরকে সচেতন অথচ সংযত করিয়া রাখায়, য়ুরোপীয় সভ্যতায় স্বাধীনতার জন্ম হইয়াছে। ক্রমাগত বিবাদে এই সকল বিরোধি-শক্তি আপসে একটা বোঝাপড়া করিয়া সমাজে আপন থাপন অধিকার নির্দিষ্ট করিয়া লইয়াছে ; এইজন্ত ইহারা পরস্পরকে উচ্ছেদ করিবার ঈষ্ট সচেষ্ট থাকে না, এবং নানা প্রতিকুল পক্ষ আপন স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করিয়া চলিতে পারে । ইহাই আধুনিক যুরোপীয় সভ্যতার মূল প্রকৃতি, ইহাই ইহার শ্রেষ্ঠত্ব। গিজে বলেন, বিশ্বজগতের মধ্যেও এই বৈচিত্র্যের সংগ্রাম । ইহা সুস্পষ্ট যে, কোন একটি নিয়ম, কোন এক প্রকারের গঠনতন্ত্র, কোন একটি সরল ভাব, কোন একটি বিশেষ শক্তি, সমস্ত বিশ্বকে এক অধিকার করিয়া, তাহাকে একটিমাত্র কঠিন ছাচে ফেলিয়া, সমস্ত বিরোধী প্রভাবকে দূর করিয়া, শাসন করিবার ক্ষমতা পায় নাই। বিশ্বে নানা শক্তি, নানা তত্ত্ব, নানা তন্ত্র, জড়িত হইয়া যুদ্ধ করে, পরস্পরকে গঠিত করে, কেহ কাহাকে সম্পূর্ণ পরাস্ত করে না, সম্পূর্ণ পরাস্ত হয় না । অথচ এই সকল গঠন, তত্ত্ব ও ভাবের বৈচিত্র্য—তাহীদের সংগ্রাম ও বেগ, একটি বিশেষ ঐক্য—একটি বিশেষ আদর্শের অভিমুখে চলিয়াছে। যুরোপীয় সভ্যতাই এইরূপ বিশ্বতন্ত্রের প্রতিবিম্ব । ইহা সঙ্কীর্ণরূপে সীমা বদ্ধ, একরত ও অচল নহে। জগতে সভ্যতা এই প্রথম নিজের বিশেষ মূৰ্ত্তি বর্জন করিয়া দেখা দিয়াছে। এই প্রথম ইহার বিকাশ বিশ্বব্যাপারের বিকাশের দ্যায় বহুবিভক্ত, বিপুল এবং বহুচেষ্টাগত। যুরোপীয় সভ্যতা এইরূপে চিরন্তন সত্যের পথ পাইয়াছে, তাহা জগদীশ্বরের কার্য্যপ্রণালীর ধারা গ্রহণ করিয়াছে, ঈশ্বর যে পথ নিৰ্ম্মাণ করিয়াছেন, এ সভ্যতা সেই পথে অগ্রসর হইতেছে। এ সভ্যতার শ্রেষ্ঠতাতত্ত্ব এই সত্যের উপরেই নির্ভর করে ।