তৃতীয় সংখ্যা । ] তাই, অস্ত নগরে ও গ্রামে, রাজপথে ও নদীতটে অহরহ “বন্দে মাতরং” নিনাদিত হইতেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই “বন্দে মাতরং” ব্যাপারে এক্ষণ একটা দোষ আসিয়া পড়িয়াছেশ বঙ্কিমবাবু জ্ঞানী। তিনি বিশেষ কৰুি আনন্দমঠে সতর্ক করিয়া দিয়াছেন যে, যতদিন জ্ঞানে ও বলে ইংরেজের সহিত সমান হুইতে না পার, ততদিন ইংরেজের সহিত বিবাদ করিও না ; –বিবাদ করা দুরে থাকুক, তাহাদিগকে শিক্ষাগুরু বলিয়া মানিয়া, তাহাদিগের নিকট জ্ঞানলাভ করিবে,~~বলসংগ্ৰহ করিবে। কিন্তু বঙ্গদেশের দুরদৃষ্টক্রমে, বঙ্গচ্ছেদের দারুণ ব্যথা পাইয়া বঙ্গবাসী অদ্য যন্ত্রণায় অস্থির হইয়া, বঙ্কিম যাহা করিতে নিষেধ করিয়াছেন, তুধুনা বঙ্কিমের “বন্দে মাতরং” গাহিতে গাহিতে বঙ্গবাসিগণ তাহাই করিতেছেন ;—ইংরেজের সহিত যাহাতে অসদ্ভাব হইবার বিশেষ আশঙ্কা, তাহাই নানাবিধ অনিষ্টজনক আড়ম্বরের সহিত ঘোষণা করিতেছেন –নিজেদের নিতান্ত দুৰ্ব্বল জানিয়াও মৰ্ম্মাহত নৈরাখের উদভ্ৰাস্ত তাড়নায় আত্মনিগ্ৰহ ডাকিয়া আনিতেছেন । আনন্দমঠের শিক্ষা এই যে, বর্তমান রাজনৈতিক আন্দোলনের কথা দূরে থাকুক্, সত্যানন্দের দ্যায় আত্মোৎসর্গ এবং সস্তানগণের হ্যায় প্রাণপণ সংগ্রামও অকালে হওয়ায় স্বদেশকে উদ্ধার করিতে পারিল না ও পরিবে না। বুৰ্ত্তমান আন্দোলনপ্রণালীসম্বন্ধে আনন্ম বঙ্কিমবাবু নীরব। তাহাতে কি বুঝিতে হইবে ? তিনি মনে করিতেন, ইহা গভীর ভ্রান্তি, মৰ্ম্মত্ত্বদ মৃগতৃষ্ণক। তিৰি আনন্দমঠে বলিতেছেন—“ও পথ ছাড়। আনন্দমঠ ও স্বদেশপ্রেম । ృe :) মাতাকে পূজা করিতে শেখ, এক মায়ের সন্তান বলিয়া স্বদেশীগুণকে ভাই মনে করিয়া ভালবাসিতে শেখ। ধনের গৰ্ব্ব, বিদ্যার গৰ্ব্ব, বর্ণভেদের গৰ্ব্ব ছাড়িয়া সকলে এক হও, এক হয়ে মাকে পূজা কর। আত্মোৎসর্গ শিক্ষা কর, কিন্তু যতদিন সাহেবদিগের সমকক্ষ না হও, সাহেবদিগের সহিত বিবাদ করিওঁ না। যখন ইংরেজের সমকক্ষ হুইবে, তখনকার আনন্দমঠ তখনকার গ্রন্থকার রচনা করিবেন।” তিনি আরও বলেন– “যাহাই কর, স্বদেশের মঙ্গলের জন্ত প্রতি চাই, ঐক্য চাই, আত্মোৎসর্গ চাই, আর সৰ্ব্বোপরি চাই ধৰ্ম্ম । এক্ষণ অশান্তি ও বিবাদ কেবল অমঙ্গল। এক্ষণ বিবাদের সময় নহে, এক্ষণ শিক্ষার সময়, এক্ষণ তপস্তার সময়, এখন বরপ্রার্থনার সময় নহে । ব্রত অবলম্বন কর, সন্ন্যাসী হও, জ্ঞানী হও, শক্তিশালী হও । সকলে—জমিদার ও কৃষক, ইতর আর ভদ্রলোক নরনারী, – সকলে মাকে পূজা কর। দেখিবে,-জ প্রসন্ন হইবেন, ভগবান, দয়া করিবেন,—স্বৰ্গ হইতে নামিয়া হাত ধরিয়া তোমাকে তুলিবেন । তখন ইংরেজ তোমাকে ভাই বলিবে, দাস বা 'নিগার বলিবে না।” যে আনন্দমঠের “বন্দে মাতরম্ আপনার দলে দলে গাহিয়৷ আনন্দিত হইতেছেন, উল্লসিত হইতেছেন, হৃদয়শোণিত • পাত করিতেছেন, তাহার প্রধান উপদেশ এই । আপনাদিগের মহত্ব, আসুরিকতা, স্বদেশপ্রেম ভক্তিপ্রণত মস্তকে আঁমি স্বীকার করি। কিন্তু আমার বিশ্বাস, বিদেশীয় দ্রব্যের বর্জনদ্বারা ইংরেজদিগকে জব্দ করিব অথবা ইংরেজদিগকে সৎপ্রবৃত্তি দিব, এই যে একটা ভাব
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/১০৮
অবয়ব