পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/১৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Y38 অন্তঃকরণ একটা কিছু অভাব বোধ করিয়া ছিল,—একটা-কিছু চায়, সেইজন্যই আমরা দেশের সেই ক্ষুধা নিবৃত্তি করিতে একত্র হইয়াছি, এই কথাই সত্য। আমরা চাই—কিন্তু কি চাই, তাহ বাহির করা যে সহজ, তাহা মনে করি না । এই সম্বন্ধে সত্য-আবিষ্কারের পরেই আমাদের উদ্ধার নির্ভর করে। যদি ভুল করি, যেটা হাতের কাছেই আছে,—আমরা যেটাতে অভ্যস্ত, জড়ত্ববশত যদি সেইটেকেই সত্য মনে করি, তবে বড়-বড় নাম আমাদিগকে বিফলতা হইতে রক্ষা করিতে পারিবেন না । এইজন্ত শিক্ষাপরিষদের প্রতিষ্ঠাতাগণ যখন উদ্যোগে প্রবৃত্ত আছেন, তখন দেশের সর্বসাধারণের তরফ হইতে নিজের চিত্ত,—নিজের অভাব বুঝিবার জন্য একটা আলোচনা হওয়া উচিত। সেই আলোচনাকে জাগাইয়া তোলাই আমার এই রচনার প্রধান উদ্দেশু। এই উপলক্ষ্যে, যে ভাবটি আমার মনের সম্মুখে জাগ্রত হইয়া উঠিয়াছে, তাহাকে দেশের দরবারে উপস্থিত করা আমার কর্তব্য । যদি শিক্ষিতসমাজের প্রচলিত সংস্কারের সঙ্গে ইহার বিরোধ বাধে, তবে ইহা গ্রাহ হইবে না, জানি। যদি গ্রাহ না হয়, তবে আপনাদের একটা স্থবিধ আছে—আপনার সমস্তটাকে কবিকল্পনার আকাশকুসুম বলিয়া অতি সংক্ষেপেই বর্জন করিতে পারবেন এবং আমিও ব্যর্থ কবিদের সাত্মনাস্থল “পষ্টরিট” অর্থাৎ কোনো একটা মেনির্দিষ্ট উত্তরকালের মধ্যে আমার অনাদৃত প্রস্তাবটির ভাবী সদগতি কল্পনা করিয়া আশ্বাসলাভের চেষ্টা করিব। বঙ্গদর্শন। [ ৬ষ্ঠ বর্ষ, আষাঢ়। কিন্তু তৎপুৰ্ব্বে আজ আপনাদের নিকটে বহুলপরিমাণে ধৈর্য্য ও ক্ষম সামুনয়ে প্রার্থনা করি। o ইস্কুল বলিতে আমরা যাহা বুঝি, সে একটা শিক্ষা দিবার কল। মাষ্টার এই কারখানার একটা অংশ। সাড়েদশটার সময় ঘণ্টা বাজাইরা কারখানা খোলে। —কল চলিতে আরম্ভ হয়, মাষ্টারেরও মুখ চলিতে থাকে। চারটের সময় কারখানা বন্ধ হয়, মাষ্টারকলও তখন মুখ বন্ধ" করেন; ছাত্রেরা দুইচারপাত কলে-ছাট বিদ্যা লইয়া বাড়ী ফেরে। তার পর পরীক্ষার সময় এই বিস্তার যাচাই হইয় তাহার উপরে মার্ক পড়িয়া যায়। কলের একটা সুবিধা, ঠিক মাপে ঠিক ফরমাস দেওয়া জিনিষটা পাওয়া যায়—এক কলের সঙ্গে আর-এক কলের উৎপন্ন সামগ্রীর বড়-একটা তফাৎ থাকে না, মার্ক দিবার সুবিধা হয় । , কিন্তু এক মানুষের সঙ্গে আর-এক মামুষের অনেক তফাৎ। এমন কি, একই মানুষের এক দিনের সঙ্গে আর-এক দিনের ইতরবিশেষ घटप्ले ! তবু, মামুষের কাছ হইতে মানুষ যাহা পায়, কলের কাছ হইতে তাহ পাইতে পারে না। কল সম্মুখে উপস্থিত করে, কিন্তু দান করে না—তাহা তেল দিতে পারে, কিন্তু আলো জালাইবার সাধ্য তাহার'নাই। যুরোপে মানুষ সমাজের ভিতরে থাকিয়া মানুষ হইতেছে, ইস্কুল তাহার কথঞ্চিৎ হায্য করিতেছে। লোকে যে বিদ্যা লাভ কয়ে, সে বিষ্ঠাটা সেখানকার মানুষ হইতে বিচ্ছিন্ন নছে—সেইখানেই তাহার চর্চা হইতেছে,