পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/২২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

$3& কুইতেই শিখিয়াছি এবং আমাদের যান্থীকিছু শিক্ষা, সমস্তই পুথির শিক্ষা। বুলি ও পুঁথির বিবরের মধ্যে প্রবেশ করিয়া আমাদের দেশেও শিক্ষিতলোকের মধ্যে নিরাননা দেখা দিয়াছে । কোথায় হৃদ্যতা, কোথায় মেলামেশা, কোথায় সহজ হাস্তকৌতুক ! জীবনযাত্রার ভার বাড়িয়া গেছে বলিয়াই যে এতটা অবসন্নতা, তাহা নছে । সে একটা কারণ বটে, সন্দেহ নাই ; আমাদের সহিত সৰ্ব্বপ্রকার-সামাজিকযোগবিহীন আত্মীয়তাশূন্ত রাজশক্তির অহরহ অলক্ষ্য চাপও আর একটা কারণ ; কিন্তু সেই সঙ্গে আমাদের অত্যন্ত কৃত্রিম লেখাপড়ার তাড়নাও কম কারণ নহে। নিতান্ত শিশুকাল হইতে তাহার পেষণ আরম্ভ হয়—এই জ্ঞানলাভের সঙ্গে মনের সঙ্গে যোগ অতি অল্প, এ জ্ঞান আনন্দের জন্তও নহে—এ কেবল প্রাণের দায়ে এবং কতকটা মানের দায়েও বটে । আমরা মন খাটাইয়া সজীবভাবে যে জ্ঞান উপার্জন করি, তাহ আমাদের মজ্জার সঙ্গে মিশিয়া যায়—বই মুখস্থ করিয়া যাহা পাই, তাহ বাহিরে জড় হইয়া সকলের সঙ্গে আমাদের বিচ্ছেদ ঘটায় । তাহাকে আমরা কিছুতেই ভুলিতে পারি না বলিয়া অহঙ্কার বাড়িয়া উঠে— সেই অহঙ্কারের যেটুকু মুখ, সেই মামাদের একমাত্র সম্বল। নহিলে জ্ঞানের স্বাভাৰিক আননা আমরা যদি লাভ করিতাম-এ তবে এতগুলি শিক্ষিতলোকের মধ্যে অন্তত্ব গুটিকয়েককেও দেখিতে পাইতাম, র্যাহারা জ্ঞানচর্চার জন্ত নিজের সমস্ত প্রার্থকে খৰ্ব্ব করিয়াছেন । কিন্তু দেখিতে পাই, সারান্সের পরীক্ষয় প্রতিষ্ঠালাভ করিয়া বঙ্গদর্শন । [೬ಕಿ ಇ{ ಠiri ডেপুটিম্যাজিষ্ট্রেট হইয়া সমস্ত বিদ্যা আইনআদালতের অতলম্পর্শ্ব নিরর্থকতার মধ্যে চিরদিনের মত বিসর্জন করিতে সকলে ব্যগ্র এবং কতকগুলা পাস করিয়া কেবল হতভাগ কস্তার পিতাকে ঋণের পঙ্কে ডুবাইয়া মারাই তাহাদের একমাত্র স্থায়ী কীৰ্ত্তি হইয়া থাকে । দেশে বড় বড় শিক্ষিত উকিল-জজ-কেরাণীর অভাব নাই—কিন্তু জ্ঞানতপস্বী কোথায় ? কথায় কথায় কথা অনেক বাড়িয়া গেল । উপস্থিতমত আমার যেটুকু বক্তব্য, সে এই— বইপড়াটাই যে শেখ, ছেলেদের মনে এই অন্ধসংস্কার যেন জন্মিতে দেওয়া না হয় । প্রকৃতির অক্ষয়ভাণ্ডার হইতেই যে বইয়ের সঞ্চয় আহরিত হইয়াছে, অন্তত হওয়া উচিত এবং সেখানে যে আমাদেরও অধিকার আছে, এ কথা পদে পদে জানানো চাই। বইয়ের দৌরাত্ম্য অত্যন্ত বেশি হইয়াছে বলিয়াই বেশি করিয়া জানানো চাই। এদেশে অতি পুরাকালে যখন লিপি প্রচলিত ছিল,তখনো তপোবনে পুথিব্যবহার হয় নাই । তখনো গুরু শিষ্যকে মুখেমুখেই শিক্ষা দিতেন—এবং ছাত্র তাহা খাতায় নহে, মনের মধ্যেই লিখিয়া লইত । এমনি করিয়া এক দীপশিখা হইতে আর এক দীপশিখা জ্বলিত । এখন ঠিকটি এমন হইতে পারে না। কিন্তু যথাসম্ভব ছাত্রদিগকে পুথির আক্রমণ হইতে রক্ষা করিতে হইবে। পারতপক্ষে ছাত্রদিগকে পরের রচনা পড়িতে দেওয়া নহে—তাহার গুরুর কাছে যাহা শিখিবে, তাহাদের নিষ্ণুেকে দিয়া তাহাই রচনা করাইয়া লইতে হইবে—এই স্বরচিত গ্ৰন্থই তাঁহাদের গ্রন্থ। এমন হইলে, তাহারা মনেও করিবে না, গ্রন্থগুলা আকাশ