পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/২৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

રાજ8 দিলেন যে রঘুনাথপুরে তাহার সমকক্ষ ব্যক্তির অস্তিত্ব দিবাস্বপ্লবৎ অলীক এবং হাস্তোদীপক । সন্ধ্যার পরে গোশকটে আরোহণ করিয়া লামাজি সগৌরবে জজসাহেবকে “মদৎ” দিতে শুভযাত্রা করিলেন। রঘুনাথপুরের বহু ব্যক্তি-কেহ বা গুরুদয়ালের দুঃখে কাতর হইয়া, কেহ বা তামাসা দেখিবার জন্ত— বাবুসাহেবের সঙ্গে সঙ্গে চলিল। করুণহৃদয় তেওয়ারিজি হরিয়ার উদ্ধার সম্বন্ধে যথাসম্ভব সুব্যবস্থা করিবার জন্ত ইতিপূৰ্ব্বেই গুরুদয়ালকে সঙ্গে করিয়া মুঙ্গের রওনা হইয়াছিলেন। দুর্ভাগ্যক্রমে লালাজি দুইক্রোশ পথ অতিক্রম করিবার পরেই ভয়ানক ঝড়বৃষ্টি দেখা দিল । অনন্তোপায় লালাজিকে সিক্তবস্ত্রে সমস্তরাত্রি অনিদ্রায় অতিবাহিত করিতে হইল। রজনী বিগতপ্রায় হইলেও জলঝড় থামিবার কোন লক্ষণই দেখা দিল না । কিন্তু রাজার হুকুম অমান্ত করে কাহার সাধ্য ? কাজেই ম্রিয়মাণ শকটবাহকদ্বয়কে অব্যাহতি দিয়া কোনপ্রকারে গজেন্দ্রনিন্দী দেহভার রহন করিয়া বাবুসাহেবকে বৃষ্টি এবং কদম অতিক্রম করিয়া ষ্টেশন-অভিমুখে ধাবিত হইতে হইল । এই দুর্যোগে এবং এই পিচ্ছিলপন্থাঅতিক্রম-অবসরে একবারও যে লালজির পদস্বলন হয় নাই—এমন কথা বলিলে আমরা ধৰ্ম্মে পতিত হইব। কাজেই লালাজি যখন সুলতানগঞ্জ-ষ্টেশনে উপস্থিত হইলেন, তখন তাহার জাম্বদেশে গভীর বেদন—উদরদেশ কর্দমলিপ্ত এবং তাহার সাধের জরিখতুি রেশমি “আচকন” সিক্ত এবং মলিনতাগ্রস্ত। বঙ্গদর্শন । [ ৬ষ্ঠ বর্ষ, আশ্বিন। খে এবং যাতনায় লালাজির অক্ষিদ্বয় অধিকতর রক্তবর্ণ ধারণ করিয়াছিল এবং দীর্ঘশ্বাস তাহার বিপুলদেহকে প্রকম্পিত করিতেছিল। কাজেই পরদিন বেলা দশটার সময় লালাজি যখন জজসাহেবের গোচরে সমুপস্থিত হইলেন, তখন তাহার অবস্থা অতি শোচনীয় । কিন্তু শারীরিক এবং মানসিক উভয়বিধ যাতনা ভগবান এযার তাহার অদৃষ্টে লেখেন নাই। এতদিন পরে তাহার চিরাকাঙ্ক্ষিত সম্মানের স্থান প্রাপ্ত হইয়া পূৰ্ব্বরাত্রির সকল যাতনা লালা জগদম্বী সহায় বিস্মৃত হইলেন এবং বিশাল উদরের সম্মানরক্ষণ করিয়া যতদুর নত হওয়া চলে, ততদুর প্রণত হইয়া, জজসাহেবকে বন্দনাপূৰ্ব্বক তাহার পাশ্বে উপশেন করিলেন । আসন গ্রহণ করিয়া একবার বিজয়কটাক্ষে লালজি রঘুনাথপুরের জনমণ্ডলীর প্রশংসমান মুখগুলি দেখিয়া লইলেন। মকদ্দমা আরম্ভ হইল। “উকিলসরকার” মকদ্দমার মন্ম জুরিদ্বয়কে বুঝাইয়া দিতে লাগিলেন। সহস জজসাহেব গভীর নাসিকাগজ্জনশব্দে চকিত হইয়া পাশ্বে ফিরিয়া দেখিলেন, আহা আহ, কি অপরূপ মাধুরী । লালজির বিশাল গুম্ফ র্তাহার ততোধিক বিশাল উদরদেশ পর্শ করিয়াছে --তাহার স্বরূণী বহিয়া মদম্রাব হইতেছে এবং সমস্ত কক্ষ প্রতিধ্বনিত করিয়া সুমধুর গর্জন তাহার বিস্ফারিত নাসাবিবর হইতে থাকিয়া-থাকিয়৷ উথলিয়া উঠিতেছে। জজসাহেব বিরক্ত হইয়া'চীৎকার * করিয়া উঠিলেন, “ইয়ে কেয়া হায় বাবুঘাৰ ?” পেস্কারের বজ্ৰকণ্ঠে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিধ্বনি উঠিল, “ইয়ে কেয়ী হায় বাবুসাব ?” চমকিত