পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৩৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপ্তম সংখ্যা। ] একটা অপার্থিব প্রতিমা খাড়া করিয়া তুলিল। মানুষ মডেলের অপেক্ষই রাখিল ন! | অতএব দেখা যাইতেছে, যে একই মানসপ্রতিমা তিন শিল্পেরই লক্ষ্য, সেই একই মানসদেবতা তিনেতেই বিদ্যমান। ত্রিমূৰ্ত্তি যেমন তিনই এক, একই তিন, ইনিও তাই। আমাদের দেশে ইনি ভোলানাথ মূৰ্ত্তিতে বিরাজমান, এককালে সংসারত্যাগী,কেমন যেন পাগলাটে। গ্রীসে ইনি পুরুষোত্তম, খ্রসৌন্দৰ্য্যসেবিত; আর জাপানে ইনি স্বষ্টিকৰ্ত্ত, যা মনে করেন, তাই হয় । এ ছাড়া, এই কলিকালে আর এক শিল্পদেবতা বলা চলে না—উপদেবতা আমাদের মধ্যে আপনার প্রভাব বেশ বিস্তার করিতেছেন, পূৰ্ব্বোক্ত ত্ৰিমূৰ্ত্তির সঙ্গে ইনি সম্পূর্ণ তফাৎ। লক্ষ্মীঠাকুরাণী যেমন- কাহার ও কাহারও ঘরে টাকার থলিরূপে পুজিত, এই শিল্প-উপদেবতাটিও তেমনি ধনদরূপে ইউরোপের ঘরে ঘরে উপাসিত এবং নবশিক্ষিত আমাদের মধ্যেও বেশ আদরে-যত্নে পূজা পাইতেছেন। এই আজকালকার ইউরোপীয় কলাবিদ্যা পণ্যশালার বেশভুষার চাক্‌চিক্যে সাজিয়া-গুজিয়া বাধাদরে এবং লোকবিশেষে চড়া দরও আপনাকে বিক্রয় করেন । ইনিও বলেন, স্বৰ্গকামনাই ইহার চরম লক্ষ্য, কিন্তু টাকার থলি টেকে লইয়া ; কাজেই যাহারা টাকা দিবে, তাহদের আগে সন্তুষ্ট কর এবং পার তো সময়মত হরিনামটা করিঙ্গ লইও । ইহাকে দেখিলে চিনিতে • পরিবে, গড়ের মাঠে ইনি খাস বিলাতি আমদানি ডক্ষরীনমূৰ্ত্তিতে বিদ্যমান এবং আমাদের শিল্পে ত্রিমূৰ্ত্তি। 98속 ঠাকুরঘরেও কাৰ্ত্তিকটি সাজিয়া ইনিই বসিয়া আছেন। জাপানে ইনি এখনও বড় দেখা দেন নাই, কিন্তু জাপান আর কিছুদিন সাহেবিদলে মিশিলে কি হইত বলা যায় না । পুণ্যশেষে পুণ্যবান যেমন স্বর্গভ্রষ্ট হন, তেমনি সেই প্রাচীন গ্রীকৃশিল্প লক্ষ্যভ্রষ্ট হইয়৷ এই শিল্পে দাড়াইয়াছে, অতএব আমরা ইহাকে ভ্ৰষ্টশিল্প বলিতে পারি। গ্রীকৃশিল্প আৰ্য্যশিল্পের মত মর্ত্যলোক হইতে আপনাকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন রাখে নাই ;–সে নরদেবের উপাসনা শিথিয়tছিল, দেবতাকে দেখিতে চায় নাই, তাই তার দুর্দশ । ঘরের দেওয়ালে চিত্র করিবার সময় শিল্পীকে যেমন একমাত্র। চড়াইয়া রং লাগাইতে হয়—কালে সেটুকু মরিয়া ঠিক দাড়াইবে - সেইরূপ শিল্পের লক্ষ্য পার্থিব হৃষ্টতে একধাপ উচ্চে না রাপিলে চলে না ; এটুকু আমাদের শিল্পাচার্যের বেশ বুঝিয়াছিলেন । তাহার জানিতেন, নরদেব হইতে নরে নামিতে বিলম্ব হয় না—কিন্তু স্বৰ্গ হইতে মর্ত্যে পতন স্থাপ প্রবল ন হইলে শীঘ্র ঘটে না । মানবশিল্পে মানুষভাব থাকিবেই, সেটা স্বাভাবিক, কিন্তু সেই মানুষভাবকে প্রশ্রয় দিলে একদিন দেবসেনাপতি যে কাপ্তেনবাবুতে নামিবেন, এ সত্যটা শুক্রাচাৰ্য্য প্রভৃতি শিল্পাচার্য্যের বেশ হৃদয়ঙ্গম করিয়া শিল্পীর আদর্শ যতটা পারেন উচ্চে তুলিয়া দিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন এবং সেইজন্তই দেবতার দিকে আঁতটা ঝোক দিয়াছিলেন । ঋষিবাক্যের সত্যতা, গ্ৰীক এবং আর্য্য শিল্পের মধ্যে কোনটার কিরূপ পতন হইয়াছে আলোচন কুরিলেই, বেশ উপলব্ধি হইবে। জাপানের শিল্পকে আমরা ইহার