8:Ջ8 বঙ্গদর্শন । [ ৬ষ্ঠ বর্ষ, পৌষ । দেখায়, তাহারই কল্লোল বিশ্বের অন্তরতম বাণীকে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলে। নানাদিকে আমাদের নানা প্রবৃত্তি যে উদাম হইয়া ছুটিয়াছে, আমাদের মনকে তাহারা, একবার এপথে একবার ওপথে ছিড়িয়া লইয়া চলিয়াছে, ইহাদের সকলকে দৃঢ়রশ্মিদ্বারা সংযত করিয়া, সকলকে পরস্পরের সহিত সামঞ্জস্তের নিয়মে আবদ্ধ করিয়া অস্ত:করণের মধ্যে কর্তৃত্বলাভ কুরিলে, চঞ্চল পরিধির মাঝখানে অচঞ্চল কেন্দ্রকে স্থাপিত করিয়া নিজেকে স্থির করিতে পারিলে, তবেষ্ট এই বিশ্বচরাচরের মধ্যে যিনি শাস্তং, তাহার উপাসনা, তাহার উপলব্ধি সম্ভব হইতে পারে। জীবনের হ্রাসকে, শক্তির অভাবকে আমরা শান্তি বলিয়া কল্পনা করি । জীবনহীন শান্তি ত মৃত্যু, শক্তিহীন শান্তি ত লুপ্তি। সমস্ত জীবনের সমস্ত শক্তির অচলপ্রতিষ্ঠ আধারস্বরূপ যাহা বিরাজ করিতেছে, তাহাই শান্তি ; অদৃষ্ঠ থাকিয়া সমস্ত স্বরকে যিনি সঙ্গীত, সমস্ত ঘটনাকে যিনি ইতিহাস করিয়া তুলিতেছেন, একের সহিত অন্তের যিনি সেতু, সমস্ত দিনরাত্ৰি-মাসপক্ষ-ঋতুসংবৎসর চলিতে চলিতেও যাহার দ্বারা বিধৃত হইয়া আছে, তিনিই শাস্তম্। নিজের সমস্ত শক্তিকে যে সাধক বিক্ষিপ্ত না করিয়া ধারণ বরতে পারিয়াছেন, র্তাহার নিকটে এই পরম শাস্তস্বরূপ প্রত্যক্ষ । বাস্পই যে রেলগাড়ি চালায়, তাহা নহে, বাষ্পকে যে স্থিরবুদ্ধি লৌহপূখলে বদ্ধ করিয়াছে, সেই গাড়ি চালায়। গাড়ির কলটা চলিতেছে, গাড়ির চাকাগুলা ছুটিতেছে, তবুও গাড়ির মধ্যে গাড়ির এই চলাটাই কর্তা নহে, সমস্ত * চলার মধ্যে অচল হইয়া যে আছে, যথেষ্ট
পরিমাণ চলাকে যথেষ্টপরিমাণ না-চলার দ্বারা যে ব্যক্তি প্রতিমুহূর্তে স্থিরভাবে নিয়মিত করিতেছে, সেই কর্তা । একটা বৃহৎ কারখানার মধ্যে কোনো অজ্ঞলোক যদি প্রবেশ করে, তবে সে মনে করে, এ একটা দানবীয় ব্যাপার ; চাকার প্রত্যেক আবর্তন, লৌহ দণ্ডের প্রত্যেক আস্ফালন, বাষ্পপুঞ্জের প্রত্যেক উচ্চাস তাহার মনকে একেবারে বিভ্রান্ত করিতে থাকে, কিন্তু অভিজ্ঞব্যক্তি এই সমস্ত নড়াচড়-চলাফিরার মূলে একটি স্থির শাস্তি দেখিতে পায়— সে জানে ভয়কে অভয় করিয়াছে কে, শক্তিকে সফল করিতেছে কে, গতির মধ্যে স্থিতি কোথায়, কর্যের মধ্যে পরিণামটা কি। সে জানে এই শক্তি যাহাকে আশ্রয় করিয়া চলিতেছে, তাহা শাস্তি, সে জানে যেখানে এষ্ট শক্তির সার্থক পরিণাম, সেখানে ও শাস্তি । শাস্তির মধ্যে সমস্ত গতির, সমস্ত শক্তির তাৎপর্যা পাষ্টয়া সে নির্ভয় হয়, সে অনিন্দিত হয় । এই জগতের মধ্যে যে প্রবল প্রচণ্ড শক্তি কেবলমাত্র শক্তিরূপে বিভীষিকা, শাস্তং’ তাহাকেষ্ট ফলে-ফুলে প্রাণে-সৌন্দর্য্যে মঙ্গলময় করিয়া তুলিয়াছেন । কারণ, যিনি শাস্তং, তিনিই শিবম। এই শান্তস্বরূপ জগতের সমস্ত উদামশক্তিকে ধারণ করিয়া একটি মঙ্গললক্ষ্যের দিকে লইয়া চলিয়াছেন। শক্তি এই শাস্তি হইতে উদগত ও শাস্তির দ্বারা বিধৃত বলিয়াই তাঁহা মঙ্গলরূপে প্রকাশিত। তাহা ধাত্রীর মত নিখিলজগৎকে অনাকাল হটতে অনিদ্রভাবে প্রত্যেক মুহুর্তেই 'রক্ষা করিতেছে। তাহা সকলের মাঝখানে আসীন হইয়া বিশ্বসংসারের ছোট হইতে বড় পর্যন্ত み \.