পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৫৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(t28 বঙ্গদর্শন। সেইখানেই স্বভাবত বারংবার হাত পড়ে বটে, কিন্তু ব্যথাকে বারংবার স্পর্শদ্বারা ব্যথিততর করিয়া তোলাই আরোগ্যের উপায় নহে । সেই বিশেষ বেদমাকে ভুলিয়া সমস্ত দেহের আভ্যন্তরিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নপ্রয়োগ করিলে যথাসময়ে এই বেদন ক্ষীণ হইয়া আসে । আমাদিগকেও এইরূপ চিকিৎসা অবলম্বন করিতে হইবে—দিনরাত্রি কেবল অমুখের প্রতিই সমস্ত লক্ষ্য নিবন্ধ রাখিলে আমাদের কল্যাণ হুইবে না । যেখানে আমাদের বল, যেখানে আমাদের গৌরব, সেখানেই সৰ্ব্বপ্রযত্নে আমাদের চেতনাকে জাগ্ৰত করিয়া তুলিলে তবেই আমাদের মধ্যে প্রকৃত স্বাস্থ্যসঞ্চার হইতে থাকিবে । কিন্তু এ সব ত গেল ভাবের কথা— কাজের কথা কি আমাদের সভার মধ্যে পাড়িবার কোনো স্থান নাই ? সাধারণভাবে মানুষের মধ্যে পরস্পর প্রতিস্থাপন কল্যাণকর, সন্দেহ নাই ; সাহিত্যিকদের মধ্যেও প্রতিবন্ধন যদি ঘনিষ্ঠ হয়, সে" ত ভাল কথা—কিন্তু বিশেষভাবে সাহি-' ত্যিকদের মধ্যেই প্রীতিবিস্তারের যে বিশেষ ফল আছে, তাহা মনে করি না। অর্থাৎ লেখকগণ পরস্পরকে ভাৰ্যবাদি লই যে তঁহাদের রচনাকার্য্যের বিশেষ উপকার ঘটে, এমন কথা বলা যায় না। 'ব্যবসায়হিসাবে সাহিত্যিকগণ বিচ্ছিন্ন, স্বস্বপ্রধান—তাহার পরম্পর পরামর্শ করিয়া, জোট করিয়া সাহিত্যের যৌথকারবার করেন না । তাহারা প্রত্যেকে নিজের প্রণালীতে, নিজের মন্ত্রে নিজের সরস্বতীর সেবা করিয়া থাকেন। যাহারা দশের পন্থা অনুসরণ कर्तिब्र পুথিগত বাধাময়ে কাজ সারিতে চান, s ૭% বর্ষ, कांग्लन ! দেবী কখনই তাহাদিগকে অমৃতফল দান করেন না। সাহিত্যে সাম্প্রদায়িকতা অনিষ্টকর। কার্যগতিকে র্যাহার এইরূপ একাধিপত্যদ্বারা পরিবেষ্টিত, কোনো কোনো স্থলে তাহাদের মধ্যে পরিচয় ও প্রীতির অভাব, এমন কি, ঈর্ষা-কলহের সম্ভাবনা ঘটে। এক ব্যবসায়ে প্রতিযোগিতার ভাব দূর করা দুঃসাধ্য। মনুষ্যস্বভাবে অনেক সঙ্কীর্ণতা ও বিরূপতা আছে, তাহার সংশোধন প্রত্যেকের আন্তরিক ব্যক্তিগত চেষ্টার বিষয়—কোনো কৃত্রিম প্রণালীদ্বারা তাহার প্রতিকার সম্ভবপর হইলে আমাদের অদ্যকার উদ্যোগের অনেক পূৰ্ব্বে সত্যযুগ ফিরিয়া আসিত । দ্বিতীয় কথা,মাতৃভাষার উন্নতি। গৃহের উন্নতি বলিলেই গৃহস্থের উন্নতি বুঝায়, তেমনি ভাষার উন্নতির অর্থই সাহিত্যের উন্নতি, সাহিত্যের শ্ৰীবৃদ্ধি ছাড়া অন্ত কোনো উপায়েই ভাষা সমৃদ্ধিলাভ করিতে পারে না। কিন্তু কি করিলে সাহিতের উন্নতিবিধান হইতে পারে, সে ভাবনা মনে উদয় হইলেও ভাবিয়া তাহার কিনারা পাওয়া কঠিন। অনাবৃষ্টির দিনে কি করিলে মেঘের আবির্ভাব হইবে, সে চিন্তা মনে আসে ; কিন্তু কি করিলে মেঘের সৃষ্টি হক্টতে পারে, তাহার সিদ্ধান্ত করা যায় না । কয়েকজনে দল বাধিয়া কেবল কয়েকটা রসারসিতে টান মারিলেই যে প্রতিভার রঙ্গক্ষেত্রে ঠিক আমাদের ইচ্ছামত সময়েই যবনিকা উঠিয়া যাইবে, এমনতর আশা করা যায় না। : তবে একটা কথা আছে। যেমন আমরা · মানুষ গড়িতে পারি না বটে,কিন্তু তাহার বসন । ভূষণ গড়িতে পারি, তেমনি সাহিত্যের গঠন