পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

- বঙ্গবিজেতা । آسان থাকিতেও পায়ে । ভৎক্ষণাৎ আবার মনে হইল, এ মুখ আমি পূৰ্ব্বে দেখিয়াছি, এ স্বর তামি পূৰ্ব্বে শুনিয়াছি, নাবিক অবশুই পুরাতন ভৃত্য হইবে । নাবিক সুরেন্দ্রনাথের আন্তরিক ভাব কিছু কিছু বুঝিতে পারিল । কিছু কষ্টে আত্মসংযম করিয়া তান্য কথা আরম্ভ করিল। অনেকক্ষণ তন্য কথাবাৰ্ত্ত হইতে লাগিল । সুরেন্দ্রনাথ দেখিলেন, নাবিক নীচ ব্যবসায়ী হইয়াও ভদ্রলোকের মত তালাপ পরিচয় শিখিয়াছে,—অনেক বিষয়ে বিলক্ষণ বুদ্ধিও প্রদর্শন করিতেছে ও অনেক প্রকায় লোকের সহিত সহবাসে বিলক্ষণ সংসারজ্ঞানও লাভ করিয়াছে। দুই এক ঘণ্টা কথোপকথনে মনুষ্য-হৃদয়ের তলচারি প্রবৃত্তি সকলের বিশেষ জ্ঞান প্রকাশ করিতে লাগিল । সুরেন্দ্রনাথ সেই কথোপকথনে অতিশয় সস্তুষ্ট হইলেন,—মনে যে সংশয় হইয়াছিল তাহ একেবারে দূর করিলেন, নাবিকের উপর যৎপরোনাস্তি প্রীত হইলেন । নাবিক মধ্যে মধ্যে আপনায় বিষয় ও দুই একটী কথা বলিতে লাগিল, মানবজাতির আশা ভরস, সুখ দুঃখ, পাপ পুণ্যের কথা বিস্তর বলিতে লাগিল,—সুরেন্দ্রনাথের কর্ণে যেন সুধাবর্ষণ হইতে লাগিল । নৌকা প্রায় এক ক্রোশ ভাসিয়া গেল, গঙ্গার জল উজ্জল চন্দ্রালোকে ঝকমক করিতেছে, আকাশে দুই এক খণ্ড শুভ্র মেঘ দেখা যাইতেছে, কখন কখন চন্দ্রকে ঈষৎ আবরণ করিতেছে, আবার বায়ুতে তাড়িত হওয়াতে চন্দ্রের পুণ্য-জ্যোতিঃ নদীর প্রশাস্তু বক্ষে পতিত হইতেছে। আকাশ গভীর নীলবর্ণ, দুই একটা তার লজ্জা বর্তী নববধূর ন্যায় কখন কখন মুখ দেখাইতেছে । জগতে । সমস্ত জীব নিস্তব্ধ, কেবল কখন কখন দূর হইতে একটা গীত বায়ুমার্গে ভাসিয়া আসিতেছে, তার সেই বিস্তীর্ণ গঙ্গা-বারিতে ও পাশ্বস্থ শুভ্র সৈকতে প্রতিধ্বনিত হইতেছে । গঙ্গায় হার একটী নৌকাও চলিতেছে না । কেবল সুরেন্দ্রনাথের ক্ষুদ্র তরী তত্ত্ব তত্ত্ব শব্দে ভাসিতেছে । হঠাৎ নাবিক আপন কথোপকথন সাঙ্গ করিয়৷ একদৃষ্টি নিরীক্ষণ করিতে লাগিল । সুরেন্দ্রনাথ সেই দিকে দৃষ্টি করিলেন,—দেখিলেন রক্ষের মধ্য হইতে একটা আলোক নির্গত হইতেছে । নাবিক অনেকক্ষণ সেই দিকে দৃষ্টি করিয়া বলিল, “ ঐ যে আলোক দেখিতেছেন, ঐ আমার গৃহ, আর উহার অনতিদূরে যে নিকুঞ্জ দেখিতেছেন, ঐ স্থানে আমার হৃদয় সংস্থাপিত আছে । ” নাবিকের গম্ভীরভাবে চমকিত হইয়া সুরেন্দ্রনাথ তাহার মুখের দিকে দৃষ্ট করিলেন, দেখিলেম তাহার চক্ষুতে, অশ্রুবিন্দু টল্‌ টল্‌ করিতেছে।