পাতা:বঙ্গভাষা ও সাহিত্য - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(S বঙ্গভাষা ও সাহিত্য অঞ্চলে হিন্দী-ভাষায় বিরচিত “গোপীচান্দকা পুথি”র প্রচলন আছে। মহারাষ্ট্র কবি মহীপতি (১৭১৫-১৭৯০ খৃঃ) এই প্রসঙ্গ লইয়া তাহার “সন্তলীলামৃত” ও পুণার আপ্লাজি গোবিন্দ “গোপীচান্দ-নাটক ( ১৮৬৯ খৃঃ) রচনা করিয়াছেন। যে বঙ্গীয় রাজাকে লইয়া সমস্ত ভারতবাসী এক সময়ে প্ৰমত্ত হইয়াছিল, বাঙ্গালীর নিকট সে কাহিনী অবশ্যই শ্রুতি-সুখাবহ ও আদৃত হইবে সন্দেহ নাই । स्रभणी : পূর্বে ধারণা ছিল, চৈতন্য-ভাগবতকার ৪৫০ বৎসর পূৰ্ব্বে বঙ্গদেশ প্ৰচলিত, যোগীপাল, ভোগিপাল, মহীপাল, প্রভৃতি পালরাজবর্গের গাথা সম্বন্ধে যে উল্লেখ করিয়াছিলেন, এই গোবিন্দচন্দ্রের গান তাহারই অঙ্গীয়, কিন্তু গোরক্ষবিজয় আবিষ্কারের পর আমাদের সে ধারণা পরিবৰ্ত্তিত হইয়াছে। গোবিন্দচন্দ্ৰ আদৌ পালরাজগণের কেহ ছিলেন। কিনা তাহা সন্দেহ-স্থল ; আমাদের বিশ্বাস তিনি পালরাজগণের কেহ নহেন। ইহঁর পিতামহের নাম সুবর্ণচন্দ্ৰ। আমরা বঙ্গীয় রাজা সুবর্ণচন্দ্রের নাম তাম্রশাসনে পাইয়াছি। তাম্রশাসনে আবার ত্ৰৈলোক্যচন্দ্রের নামও পাওয়া যায়। এই দুই নামই আমরা গোপীচন্দ্রের গানের কোন কোনটিতে পাইতেছি। শ্ৰীচন্দ্ৰদেবের তাম্রশাসনে উল্লিখিত অল্প-সংখ্যক নামের মধ্যে যখন দুইটি নাম গোপীচন্দ্রের পূর্বপুরুষদের নামের সঙ্গে ঐক্য হইতেছে, তখন মাণিকচন্দ্র, তথা গোপীচন্দ্ৰকে আমরা শ্ৰীচন্দ্র দেবের বংশীয় বলিয়া আমরা অনুমান করি। নবদ্বীপের সুবৰ্ণবিহার সম্ভবতঃ ইহারই প্রতিষ্ঠিত। ঐ বিহারের নিকট সুবর্ণচন্দ্রের রাজ-প্ৰাসাদের কিঞ্চিৎ অবশেষ এখনও বিদ্যমান ; এবং তথাকার একটি শিলালিপিতে যে তারিখ পাওয়া গিয়াছে, তাহা তাম্রশাসনের তারিখ সমৰ্থন করিতেছে। মাণিকচন্দ্ৰ বিবাহ-সূত্রে মেহেরু-কুলের (ত্রিপুরা রাজ্যের ) উত্তরাধিকার লাভ করেন এবং পিতৃরাজ্য বিক্রমপুর প্রাপ্ত হইয়া উভয় রাজ্যের উপর আধিপত্য স্থাপন করেন। র্তাহার রাজধানী পটিকা এখনও বিদ্যমান। ত্রিপুরার পার্শ্বে যে বিস্তৃত শৈল-মালা দৃষ্ট হয়, তাহা ময়নামতী নামে অভিহিত হইয়া থাকে। সুতরাং তিলকচন্দ্রের কন্যার নামের ইহা চিরস্থায়ী নিদর্শন স্বরূপ হইয়া আছে। গোবিন্দচন্দ্র এই বিশাল ভূখণ্ড ব্যতীত গৌড়ের সমীপবৰ্ত্তী উত্তরবঙ্গের অনেকাংশ ইজারা লইয়াছিলেন, এজন্য রঙ্গপুর প্রভৃতি অঞ্চলেও তাহার কীৰ্ত্তিকথা জাগরূঢ়। আমরা এই সমস্ত তত্ত্বই ময়নামতী বা, গোবিন্দচন্দ্রের গান হইতে সংগ্ৰহ করিয়াছি। মহীপাল প্ৰভৃতি পাল-রাজগণের গাথা এ পৰ্য্যন্ত সংগৃহীত হয় নাই। মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত যাদবেশ্বর তর্করত্ন, তেওতার স্বৰ্গীয় প্ৰাণশঙ্কর রায় চৌধুরী शंभू ५९९ অপরাপর কয়েকজন বিশিষ্ট ভদ্রলোকের মুখে শুনিয়াছি, যে রঙ্গপুর রাজ বংশীয়গণ এবং অপরাপর নিম্নশ্রেণীর মধ্যে এখনও মহীপালের গান প্ৰচলিত আছে, যাহারা এদেশে গোবিন্দচন্দ্ৰ কোন বংশীয় মহীপালের গান ।