পাতা:বঙ্গভাষা ও সাহিত্য - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গভাষা ও সাহিত্য مر কথার মধ্যে আমরা সমুদ্ৰ-যাত্রার সম্বন্ধে অনেক ঐতিহাসিক তথ্য জানিতে পাই। বর্ষার দুর্দিনে যখন দিঙামণ্ডল ব্যাপিয়া ঘনঘটার আবির্ভাব হইত, প্রবল ঝটিকার সঙ্গে বিদ্যুৎ স্ফুরিত হইতে থাকিত —তখন প্ৰবাসগত নিজজনের চিন্তায় বঙ্গললনার প্রাণ ব্যাকুল হইত, সেই ব্যাকুলতার প্রতিচ্ছায় আমরা দেবতাগণের নিকট তঁহাদের বহু আবেদন-নিবেদন ও চিন্তাকুল প্রার্থনায় পরিষ্কার রূপে বুঝিতে পারি। রূপ-কথাগুলিতে সমুদ্র যাত্রার প্রাক্কালে বণিক-সীমন্তিনীরা কিরূপে স্বীয় কেশদাম উন্মুক্ত করিয়া স্বামিগণের পা মুছাইয়া দিতেন, আলিপনা দ্বারা গৃহ-প্রাঙ্গণ রঞ্জিত করিতেন, নাবিকগণ কি ভাবে বণিককে জিজ্ঞাসা করিত, “পরিবার বর্গের জন্য সংস্থান করা হইয়াছে কিনা,-প্ৰত্যেকের | নিকট অনুমতি লওয়া হইয়াছে কিনা, তাহারা সকলে আহলাদ সহকারে সম্মতি দিয়াছেন। কিনা, ; দেবতাগণের ভোগের ব্যবস্থা ও দেবমন্দিরের “অষ্টচুড়া”৷ অলঙ্কত করা হইয়াছে কি না।’-সেই সকল বর্ণনা পড়িয়া মনে হয় যেন একটি অতীতযুগের যথাযথ চিত্ৰপট আমাদের চক্ষের নিকট উদঘাটিত হইতেছে। ডিঙ্গাগুলিকে তৈল সিন্দুর ও চন্দন পরান, তাহদের মধ্যে “মধুকরে”র বিশেষরূপ অঙ্গরা” করা, দিনরাত্ৰ জালিয়া রাখিবার জন্য পঞ্চদীপের ব্যবস্থা ও মণির ঝালর ও বণিকের নামাঙ্কি পতাকার অজস্র ব্যবহার-এ সকলই যেন প্রকৃত ঐতিহাসিক তথ্য বলিয়া মনে হয়। বণিকগণে কপটতা ও প্রতারণার নিম্নলিখিত বর্ণনার মধ্যেও যেন অনেকটা সত্য আছে বলিয়া বোধ হয় :- কোন হ বেনে দারচিনি দিতে দরমুজ বাহির করে। কোন হি বেনে কাহনের বস্তু বেচে সিন্ধার দরে ৷ কোন যে বেনে “খাণ্ডার” পাথর বাপিতে ভরিয়া থোয় । ওরে মহামাণিক্য, সাহি মাণিক্য কয়ে লোকেরে বিকোয় ৷” ( ঠাকুর দাদার ঝুলি, প্ৰথম সংস্করণ ২৯ - পৃ: )। প্ৰত্যেক জাহাজের গুলুয়ে এক একটি চামর থাকিত । বহু ঘূণ্টতে বাধা কাছি গুলির দৈর্ঘ্য সম্ব.ে এই সকল গল্পে অনেক কথা পাওয়া যায়। সমুদ্র যাত্রাকালে সাগবের পূজা এবং বহু ছাগ বর্ণি দিতে হইত । এই যুগে রাজপুত্র ও সদাগরের পুত্ৰ সামাজিক মৰ্য্যাদায় প্রায় সমকক্ষ। জাতিভেদ খুব প্রবন্ধ ছিল বলিয়া মনে হয় না, কারণ বিবাহ-সময়ে জাতি-সম্বন্ধে কোন কথাই উঠিত না । ভাটগণ পাত্র পাত্রীর চিত্ৰ লইয়া দেশ বিদেশে আনাগোনা করিত। তৃতীয় প্রমাণ—মুসলমানী বঙ্গ-সাহিত্যে পাওয়া যায়। বাঙ্গলা দেশের মুসলমানগণের পূর্ণ পুরুষেরা অধিকাংশই হিন্দু বা বৌদ্ধ ছিল। তঁহাদের অনেকেই ত্ৰয়োদশ-চতুৰ্দশ শতাব্দী কিংব তাহার অব্যবহিত পরবত্তীকালে মুসলমান SS" মুসলমান ধৰ্ম্মগ্রহণ করার পরে #ú i.