পাতা:বঙ্গভাষা ও সাহিত্য - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চরিত-শাখা সুখকর হইলেও সৰ্ব্বৈব মিথ্যা । সন্ন্যাসের পুর্ব রাত্রে তিনি বিষ্ণুপ্রিয়ার ঘরে ছিলেন না, তখন তিনি মহাভাবাবিষ্ট, প্রেমোন্মাদ-বিষ্ণুপ্রিয়ার প্রেম তখন তাহাব মনের গভীর বহু দূরে। কোগ্রামের নিকটবৰ্ত্তী কঁকড়া গ্রামের ( গুস্করা ষ্টেশনের নিকট) বিখ্যাত চৈতন্যমঙ্গলগায়ক প্ৰাণকৃষ্ণ চক্ৰপত্তাঁর বাড়ীতে লোচনের স্বহস্তলিখিত চৈতন্যমঙ্গল আছে। প্ৰাণকৃষ্ণ বলেন, “লোচনের আঁখির উঠানযোড়া কএর মত ।” লোচন যে প্রস্তরখণ্ডের উপর বসিয়া চৈতন্যমঙ্গল লিখেন, তাহা এখনও আছে। চৈতন্যমঙ্গলও তিন খণ্ডে বিভক্ত, কিন্তু ইহা চৈতন্যভাগবত হইতে অনেক ছোট, চৈতন্যভাগবতের অৰ্দ্ধাংশের তুল্য হইবে । লোচনদাস ১৫৮৯ খৃঃ অব্দে ৬৬ বৎসর বয়সে তিরোহিত হন। চৈতন্যমঙ্গল ভিন্ন ইহার ‘দুল্ল ভূসার’ নামক অপর একখানি পুস্তক আছে ; তাহাতে দেহতত্ত্ব সম্বন্ধে সহজিয়া ধরণের অনেক কথা আছে। এতদ্ব্যতীত লোচনদাস বহুসংখ্যক সুমিষ্ট পদ রচনা করেন। এস্থলে বলা আবশ্যক, বটতলার ছাপা চৈতন্যমঙ্গল নিতান্ত অসম্পূৰ্ণ ; উহাতে আত্মপরিচয়টি নাই, এবং তদ্ভিন্ন অন্যান্য কতকগুলি স্থানও বজ্জিত হইয়াছে। মহাপ্রভুর তিরোধান সম্বন্ধে হস্ত-লিখিত পুস্তকে, এই বিবরণটি পাওয়া যায়, তাহা বটতলার ছাপা পুস্তকে নাই। বঙ্গবাসীর সংস্করণেও আছে। লোচনের হস্তলিপি । 欧研吻颈5叫甘 মুদ্ৰিত চৈতন্যমঙ্গল অসম্পূর্ণ। 'বৃন্দাবন কথা কহে ব্যথিত অন্তরে। সন্ত্রমে উঠিয়া প্ৰভু জগন্নাথ দেখিবারে ৷ ক্ৰমে ক্ৰমে গিয়া উত্তরিলা সিংহ স্বারে সঙ্গে নিজ জন যত তেমনি চলিল। সত্বরে চলিয়া গেল মন্দির ভিতরে। নিরখে বদন প্ৰভু, দেখিতে না পায়। সেইখানে মনে প্ৰভু চিন্তিলা উপায়। তখনে দুয়ারে নিজ লাগিলা কপাট । সত্বরে চলিয়া গেল অন্তরে উচাট। আষাঢ় মাসের তিথি সপ্তমী দিবসে। নিবেদন করে প্রভু ছাড়িয়া নিশ্বাসে ৷ সত্য ত্ৰেতা দ্বাপর লে কলিযুগ আর । বিশেষতঃ কলিযুগে সংকীৰ্ত্তন সার। কৃপা করি জগন্নাথ পতিতপাবন। কলিযুগ আইল এই দেহত শরণ। এ বোল বলিয়া সেই ত্ৰিজগতরায়। বাহু ভিড়ি আলিঙ্গন তুলিল হিয়ায়। তৃতীয় প্রহর বেলা রবিবার দিনে। জগন্নাথে লীন প্ৰভু হইল আপনে। গুঞ্জবাড়ীতে ছিল পাণ্ড যে ব্ৰাহ্মণ। দেখিয়া সে কি কি বলি আইল তখন। বিপ্ৰে দেখি ভক্ত কহে শুনহ পড়িছা । বুঢ়াহ কপাট প্ৰভু দেখি বড় ইচ্ছা। ভক্ত আৰ্ত্তি দেখি পড়িছা কহয় তখন। গুঞ্জ বাড়ীর মধ্যে প্রভুর হৈল আদর্শন। সাক্ষাৎ দেখিল গৌর প্রভুর মিলন। নিশ্চয় করিয়া কহি শুন সৰ্ব্বজন৷ এ বোল শুনিয়া ভক্ত করে হাহাকার। শ্ৰীমুখ চন্দ্ৰিম প্রভুর না দেখিব আর ॥” এই বিবরণের সঙ্গে ভক্তিরত্নাকরে প্রদত্ত বিবরণের ঐক্য নাই। 8 R