পাতা:বঙ্গভাষা ও সাহিত্য - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অষ্টম অধ্যায়ের পরিশিষ্ট 8b め কবিগণের লেখনীৰ সাধারণ সম্পত্তি; দেবদেবীর ভাণ করিয়া কাব্যপটে বঙ্গীয় গৃহস্থালীর দৃশ্য উদঘাটীত হইয়াছে; বঙ্গীয় প্রাচীন পুথির অনেকগুলি যখন মুদ্রিত হইবে, তখন পাঠক এই বাধা বিষয়গুলি কোন কবির হস্তে কিরূপভাবে বর্ণিত হইয়াছে, তাহা নিরূপণ করিতে সুবিধা পাইবেন। আমরা যে অধ্যায়ের সন্নিহিত হইতেছি, তাহার আভাস এই অধ্যায়বর্ণিত নানা পুস্তকেই প্রচুর পরিমাণে পাওয়া গিয়াছে; চণ্ডীর চৌত্ৰিশ অক্ষরা স্তুতি (চৌতিশা)। অনেকগুলি প্রাচীন পুথিতে দেখা যায় ; এই “চৌতিশী” শুধু শব্দ লইয়া খেলা,-উহা অনেক স্থলে শ্রুতিকটু হইয়াছে, যথা—টিটকারী টকারে হইনু পরাজয়ী। টঙ্কারিয়া রক্ষা কর মোরে কৃপাময়ী।” এই কোমল গীতি কবিতার দেশে শ্রুতি-কটুতার অপরাধে কবির ফাঁসি হইতে পারে, জয়দেব এই আজ্ঞা দিতেন। যাহা হউক শ্রুতিকটুতা সত্ত্বেও এইরূপ শব্দ লইয়া খেলা হইতে ভাষা সাজাইবার চেষ্টা আরব্ধ হয়। মাধবাচাৰ্য্যের চণ্ডীতে “ঘুঢ়াও মনের রোধ, কর পতি পরিতোষ, দিয়াত বিরাটসুত দান।” পাওয়া যায়, এই মুন্সীয়ানা ক্রমেই বৃদ্ধি পাইয়াছিল। এই চেষ্টার বিকাশ পরবত্তী অধ্যায়ে দ্রষ্টব্য। প্ৰকৃত প্রেমরসের অভাব হইলে হীরামালিনীগিরি আরম্ভ হয়, কবিকঙ্কণ চণ্ডী হইতেই লিপিচাতুৰ্য্যের হস্তে কবিতাসুন্দরীর ভ্রষ্টামীর পূৰ্বাভাষ পাওয়া যায় নিম্নলিখিত অংশটি দেখুন--"অশোক কিংশুক ফুল, হইল যেন চক্ষুশূল, কেতকী কুসুম কাণকুন্ত। বৈরি কুসুমবাণ, অস্থির করাধ প্ৰাণ, ঝাট নাশ যাওরে বসন্ত। গুইলে নলিনীদলে, কলেবর মোর জ্বলে, জল দিলে নহে প্ৰতিকার। মালয়ের সমীরণ, অগ্নিকণা বরিষণ, পতি বিনে জীবন অসার ॥” কবিকঙ্কণ চণ্ডীতেই আমরা ভারতচন্দ্ৰী উপমার প্রথমোদ্যম দেখিতে পাই—“গৌরীবাদন শোভা, লিখিতে না পারি। কিবা, দিনে চন্দ্ৰ নাহি দেয় দেখা। স্নানচন্দ্র এই শোকে, না বিচারি সর্বলোকে, মিছে বলে কঙ্কণের রেখা। গৌরীর দশন রুচি, দেখি দাড়িম্ব বিচি, মলিন হইলা লজ্জাভরে। হেন বুঝি অনুমানে, এই শোক করি মনে, পঙ্ককালে দাড়িম্ব বিন্দরে।” পরবর্তী অধ্যায়ে এই বাক্য কলা ও লিপিচাতুরীর জাঁকালো বিকাশ দেখিতে পাইব । কৃষ্ণচন্দ্রীয় যুগের পূর্বাভাষ্য।