পাতা:বঙ্গভাষা ও সাহিত্য - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8br○ বঙ্গভাষা ও সাহিত্য কয়েক লক্ষ টাকা মাপা লইয়া আসেন, অথচ রাজবল্লাভের বিধবাবিবাহ প্রচলনের চেষ্টা চক্রান্ত করিয়া বিফল করেন। র্তাহার অনুচরগণের কেহ কেহ উপস্থিত ধূৰ্ত্ততায় তাহার সমকক্ষ ছিলেন ; নবাব যখন অগ্রদ্বীপে লোকজন বিনষ্ট হওয়ার সংবাদে ক্রুদ্ধ হইয়া প্রশ্ন করেন, “অগ্রদ্বীপ। কাহার ?” তখন অগ্রদ্বীপের মালিকের মোক্তার বিপদ আশঙ্কা করিয়া চুপ হইয়া রহিল, কিন্তু কৃষ্ণচন্দ্রের মোক্তার উপস্থিত হইয়া বলিলেন, “এ স্থল। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের”, তৎপর উপস্থিত বুদ্ধি দ্বারা লোকহত্যার একটা কৈফিয়ৎ দিয়া উক্ত স্থান কৃষ্ণচন্দ্রের রাজ্যান্তৰ্গত করিয়া লইলেন। বীরোচিত সৎসাহসের অভাব থাকিলেও কূট রাজনীতিতে কৃষ্ণচন্দ্ৰ অতি প্ৰাজ্ঞ ছিলেন। পরবত্তী সময়ে মুসলমান শাসন কূট রাজনীতি-আশ্রিত হইয়াছিল। মুসলমান দরবারের দুনীতিগুলি রাজা কৃষ্ণচন্দ্ৰ অনেকাংশে অনুসরণ করিয়াছিলেন ; এক সময় মোগলসম্রাট পুত্রের ব্যাধি নিজে গ্ৰহণ করিয়া নিজের প্রাণ দিয়া পুত্রকে বঁাচাইয়াছিলেন, এরূপ প্ৰবাদ আছে ; কিন্তু শেষ সময়ে মুসলমানসম্রাটগণের রাজপ্রাসাদ অস্বাভাবিক নিষ্ঠুরতার ক্রীড়া ক্ষেত্র হইয়াছিল-পিতার বিরুদ্ধে পুত্রের ষড়যন্ত্র, পুত্রের হস্তে পিতা বন্দী, ভ্রাতৃহনন প্রভৃতি পাতক মুসলমান-ইতিহাস কলুষিত করিয়াছে ; হিন্দুর চক্ষে এই সকল পাপ অতি অস্বাভাবিক ; কিন্তু কৃষ্ণচন্দ্রের যোগ্যপুত্ৰ শস্তৃচন্দ্র পিতা এবং জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার মৃত্যু রটাইয়া নিজে রাজত্ব লইয়াছিলেন ; কৃষ্ণচন্দ্র এই ব্যবহারে মৰ্ম্মপীড়িত হইয়া গঙ্গাগোবিন্দের নিকট দুই ছাত্র কবিতা লিখিয়াছিলেন-“পুত্র অবাধ্য, দরবার অসাধ্য। যা করেন গঙ্গাগোবিন্দ।” বস্তুতঃ পুত্রের বিশেষ দোষ নাই, তাহারও পড়া শুনা রাজসভার টোলেই হইয়াছিল ৷ কিন্তু কৃষ্ণচন্দ্র রাজ্য শাসনে ও সংরক্ষণে যেরূপ ক্ষমতা দেখাইয়াছেন, তাহা অতীব প্ৰশংসনীয় ; সিংহাসনারোহণের সময় তাহার ঋণ দশ লক্ষ টাকার উপর ছিল, ইহা ছাড়া বার লক্ষ টাকা নজরানার জন্য মহাবিদূজঙ্গ তঁহাকে বন্দী করিয়াছিলেন, তিনি এই সমস্ত ঋণ হইতে মুক্ত হইয়া তাহার রাজ্য অনেক পরিমাণে বাড়াইয়াছিলেন। তিনি “শিব-নিবাসকে” ইন্দ্রপুরীর মত সাজাইয়াছিলেন, র্তাহার উৎসাহে স্থপতি বিদ্যার উন্নতি হইয়া ছিল ; তঁাহার প্রতিষ্ঠিত কোন কোন দেবমন্দির এখনও বঙ্গদেশের গৌরব। একটির সম্বন্ধে লিখিত হইয়াছে :-“এমন সুন্দর সুপ্ৰশন্ত ও সুদৃঢ় পূজার প্রাসাদ এবং এরূপ উন্নত ও দৃঢ়তর মন্দির বঙ্গদেশের অন্ত কোন স্থানে দৃষ্ট হয় না”—(ক্ষিতীশবংশাবলী, ৬১ পৃঃ)। তাহার। পূৰ্বপুরুষগণের-বিশেষ তাহার-যত্নে কৃষ্ণনগরের কুম্ভকারগণ অপূৰ্ব্ব সুন্দর মূৰ্ত্তি গড়িতে শিখিয়াছিল, তাহার উৎসাহে শান্তিপুরের ধুতির যশঃ দেশবিখ্যাত । কৃষ্ণচন্দ্র নিজে সংস্কৃতে বিশেষ বুৎপন্ন ছিলেন। র্তাহার সভায় কেবল কবিগণের মাদর ছিল তঁহার রাজ্য শাসন ।