পাতা:বঙ্গভাষা ও সাহিত্য - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

कांदj-*|२|| (ć o So এক বৎসর পরে এই দানপত্র লিখিত হয়। কৃষ্ণচন্দ্র অনেক সময় কুমারহট্ট আসিতেন, তিনি রামপ্রসাদকে “কবিরঞ্জন’ উপাধি দিয়াছিলেন ও র্তাহাকে রাজ সভায় আনিতে আগ্ৰহ দেখাইতেন, কিন্তু বিষয়নিস্পৃহ কবি স্বীয় পল্লীতে বসিয়া শ্যামা-সংগীত গানে নিজে মুগ্ধ থাকিতেন ও অপর সকলকে মুগ্ধ করিতেন, তিনি কৃষ্ণচন্দ্রের অনুরোধ পালন করেন নাই। কবি লিখিয়াছেন, কুমারহট্ট, রামকৃষ্ণের মণ্ডপে তিনি সিদ্ধি কামনায় যোগ অনুষ্ঠান করিতেন, কিন্তু কোন দৈব ঘটনাহেতু সম্পূর্ণ সিদ্ধিলাভ করিতে পারেন নাই। এ বিষয়ে নিজের অপেক্ষা তাহার স্ত্রীর পুণ্যাবল বেশী ছিল বলিয়া কবি বারংবার উল্লেখ করিয়াছেন,-“ধান্ত দারা, স্বপ্নে তারা, প্রত্যাদেশ তারে। আমি কি অধম এত বিমুখ আমারে। জন্মে জন্মে বিকায়েছি পাদপদ্মে তব | কহিবার নাহে তাহা সে কথা কি ক’ব ।” কথিত আছে, রামপ্রসাদ জনৈক ধনী ব্যক্তিব সেরেস্তায় মুহুরিগিরি করিতেন। জমীদারী সেরেস্তার হিসাবের অরণ্যে পথহারা পান্থের ন্যায় কবি মধ্যে মধ্যে হিসাবপত্রের ধারে দুই একটি গান লিখিয়া শ্রম লাঘব করিতেন। একদিন জমীদার মহাশয় সেবেস্তা পরিদর্শনের সময় মুহুরির হিসাবের খাতায়,--“আমায় দে মা তসিলদারী। আমি নেমকহারাম নই। শঙ্করী।” প্রভৃতি পদ পড়িয়া চমৎকৃত হইলেন, ও কবিকে ৩০ টাকা পেন্সন দিয়া ঘরে যাইয়া শ্যামা সংগীত লিখিতে উপদেশ দিলেন । তদবধি কবি কুমারহট্ট গ্রামে তাহার সংগীতমুক্তাবলী ছড়াইতে লাগিলেন। শৃঙ্খল-বিমুক্ত পক্ষীর ন্যায় কবি প্রকৃতিব ক্ৰোড়ে প্রত্যাবৰ্ত্তন করিয়া সুধামাখা গানে জগৎকে সুখী করিলেন। প্রাগুক্ত ব্যক্তি ভিন্ন আর একজন ধনী ব্যক্তি র্তাহাকে কাব্য লিখিতে উৎসাহ দান করিয়াছিলেন, ইহার নাম রাজিকিশোর মুখোপাধ্যায়। ইনি কৃষ্ণচন্দ্ৰ মহারাজার পিসা শ্যামাসুন্দর চট্টোপাধ্যায়ের জামাতা ছিলেন ; কবি এই রাজকিশোব মুখোপাধ্যায়ের আদেশে “কালী কীৰ্ত্তন” রচনা আরম্ভ করেন ; সে কথা তিনি নিজেই লিখিয়াছেন,-“ঐরাজিকিশোরাদেশে শ্ৰীকবিরঞ্জন। রচে গান মোহান্ধের ঔষধ অঞ্জন ৷” ভারতচন্দ্র ও এই রাজিকিশোৰ মহাশয়ের গুণ জ্ঞাপক এক পংক্তি কবিতা লিখিয়াছেন – "মুখ রাজিকিশোর কবিত্ব কলাধার।”-( অন্নদামঙ্গল)। ১৭৭৫ খৃঃ অব্দে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের মৃত্যুতে সাত বৎসর পূর্বে যে বৎসর রোহিলাদিগকে উৎসন্ন করিয়া ইংরেজ সৈন্য প্রতিনিবৃত্ত হইয়াছিলেন, সেই বৎসর রামপ্ৰসাদের মৃত্যু হয়। কেহ কেহ বলেন রামপ্রসাদের রচিত ‘বিদ্যাসুন্দর’, তাহার “কালিকামঙ্গলে’র অন্তর্গত। এরূপ হওয়া বিচিত্র নহে। কারণ বিদ্যাসুন্দরকাব্যখানি কবিগণের সকলেই কালীনামাঙ্কিত মলাটে পুরিয়া শোধন করিতে চেষ্টা করিয়াছেন। কৃষ্ণরামের বিদ্যাসুন্দরের নাম “কালিকামঙ্গল’, ভারতচন্দ্রের বিদ্যাসুন্দর ‘অন্নদামঙ্গলের” অন্তবত্তী । এই মতের বিরুদ্ধে আমাদের একমাত্র ও অতি গুরুতর আপত্তি এই যে “কালিকামঙ্গল’ পাওয়া যায় নাই । ‘কালীকীৰ্ত্তন’ ও ‘কালিকামঙ্গল’ এক কাব্য