পাতা:বঙ্গভাষা ও সাহিত্য - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৬৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট VSS) চারিটি ছত্ৰে গৌরাঙ্গ দেবের যে চিত্র আঁকিয়াছেন—তাহা স্বর্গীন মাধুৰী ও করুণায় ভরপুর। কঙ্ক ঘোর বিপদে পড়িয়া স্বপ্ন দেখিতেছেন-যেন অমানিশি পৃথিবীকে গ্ৰাস করিয়াছে, যেন কেহ তঁাহাকে শাশ্মানে ফেলিয়া দিয়াছে - অগ্নির শিখার সঙ্গে পিশাচদের লেলীহান। জিহবা তাহার দিকে প্রসারিত, পিশাচেরা তাণ্ডব নৃত্য করিতেছে-দুঃসহ কষ্টে ও ভয়ে কঙ্ক পরিত্ৰাহি ডাকিতেছেন—এমন সময় কে এক রক্ত-গৌরবর্ণ মহাপুরুষ কাঞ্চন-বিগ্রহের ন্যায় ধীর ও স্থির তাহাকে আসিযা বঁাচাইয়া দিলেন এবং তাহার সহিত দেখা করিবার স্বপ্নাদেশ দিয অদৃশ্য হইলেন। কঙ্ক চৈতন্তের পায্যের নুপূরধ্বান শুনিবার জন্য সমস্ত ত্যাগ করিয়া প্ৰবাসী হইলেন । কঙ্ক ঐতিহাসিক ব্যক্তি, তাহার আত্ম-বিবরণ তদীয় বিদ্যাসুন্দরে প্রদত্ত হইয়াছে - তাহার বর্ণিত ঘটনার সহিত এই পালা গান রেখায় রেখায় মিলিয়া যায়। তিনি চৈতন্যের সমকালবৰ্ত্তী। এই পালা গানগুলির মধ্যে মধ্যে যে কবিত্ব আছে, তাহ বঙ্গের সমস্ত পল্লী-সৌন্দৰ্য্যকে মনোজ্ঞ আকার দিয়া দেখাইতেছে। আমরা উল্লেখ করিয়াছি, বর্ষ বর্ণনা করিতে যাইয়া এক কবি লিখিয়াছেন- মাথার উপর বজ্ৰপাত হইতেছে-বর্ষণের বিবাম নাই- সেদিকে ভ্ৰক্ষেপ নাই, “বউ কথা কও।” বলিয়া অনুনয় করিয়া পাখীটা তাহার মানিনী স্ত্রীর মান ভাঙ্গাইবার জন্য কঁাদিয়া কঁাদিয়া পথে পথে ঘুরিতেছে। আর একজন লিখিয়াছেন শুভ্ৰ জোছনায় পৃথিবী ভরিয়া গিয়াছে, যেন কেহ আকাশ হইতে মুঠি মুঠি বেল ফুল ভূতলে ফেলিতেছে। কেহ লিখিতেছেন বিদ্যুৎ ছটায় সোনার খোদকারী করা ভৃঙ্গ হাতে লইয়া বর্ষ। পৃথিবীতে নামিতেছে। এইরূপ সুন্দর উপমার অবধি নাই। আমাদের ক্ষুদ্রায়তন অধ্যায়ে এই পল্লীগাথার জন্য আর বেশী স্থান করিতে পারিলাম না। এ পৰ্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় মৎসংগৃহীত ও মৎসম্পাদিত ৫৬টি পালাগান প্রকাশ করিয়াছেন, তন্মধ্যে “আঁধা বঁধু’র সুরে যে অপূর্ব মাদকতা ও স্বাধীনতার বৈকুণ্ঠধাম পরিকল্পিত হইয়াছে—তাহার উদাহরণ জগতে বিরল। কুল, শীল, জাতি, মান, ধৰ্ম্ম ও শাস্ত্রের অনুশাসন,— এই সকল লৌকিক সংস্কারের অজেয় দুৰ্গ— পুষ্প-ধনুর কোমল শরে ভিত্তি সহ ধ্বসিয়া পড়িয়াছে।--অথচ ইহাতে রণ দুন্দুভি বাজে নাই, সহজ ও কোমল ভাবের আকর্ষণ যে ভাবে লৌহ প্ৰাচীর ভেদ করিতে পারে-সেইভাবে প্রেম সমস্ত লৌকিক সংস্কার ভঙ্গিয়া ফেলিয়াছে। যেমন পাষাণ ভেদ করে ক্ষুদ্র গুল্ম, দুৰ্জয় স্রোতের বিরুদ্ধে যায় শফরী। “আঁধা বঁধু” ছাড়া, রাণী কমলা, শ্যামরায়, তুরস্নেহ, এবং বিশেষ করিয়া “মাণিক তারা” এই পূর্ব বঙ্গ গীতিকায় হীরার খনির মধ্যে কোহিনুর সদৃশ। এই সমস্ত পল্লীগাথার উদ্ধারকল্পে র্যাহারা বিশেষ কষ্ট স্বীকার করিয়াছেন তন্মধ্যে ময়মনসিংহ কেন্দুয়া পোষ্টের অধীন আইথর গ্রাম নিবাসী শ্ৰীযুক্ত চন্দ্ৰকুমার দে ‘মহাশয়ের, প্ৰাণান্ত (5छे ७