পাতা:বঙ্গরহস্য - ভূবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়.pdf/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষষ্ঠ তরঙ্গ ॥ " » SY টানা-বারান্দায় একখানি কোঁচ পাতিয়া রাণী পদ্মাবতী অৰ্দ্ধশায়িনী হইয়া সোণার আঁলবোলায় তাম্রকুটের সুগন্ধি ধূমসেবন করিতেছিলেন, ইত্যবসরে সেই দ্বিতীয় ব্যক্তি সম্মুখে উপস্থিত। দ্বিতীয়, ব্যক্তির নাম ভোলানাথ। কোলানাথকে দেখিবামাত্র রাণী মৃন্থ । হাসিয়া গাত্ৰোখান পূর্বক তঁহাকে সঙ্গে লইয়া অন্দরমহলের দিকে চলিলেন, যতক্ষণ চলিলেন, ততক্ষণ উভয়েয় মধ্যে একটাও বাক্য-বিনিময় হইল না। রাণী অগ্ৰগামিনী, পশ্চাতে ভোলানাথ । ভোলানাথকে একটী কক্ষমধ্যে বসাইয়া, পদ্মাবতী ঘন ঘন পদ্ধবিক্ষেপে কতই যেন অন্যমনস্কভাবে ভিতরদিকের বারান্দায় পরিক্রমণ করিতে আরম্ভ । করিলেন। কি যেন মনে আসিতেছে, কি যেন দেখিবেন, কি যেন ভুলিয়া যাইতেছেন, কি যেন দেখিবার ইচ্ছা, পরিক্রমণশীল পদ্মাবতীর এই প্রকার ভাব। একবার, এধার, একবার ওধার, একবার সিঁড়ির নিকটে যান, আবার তৎক্ষণাৎ ফিরিয়া আসিয়া বারান্দার প্রান্তে গিয়া কুঞ্জের বৃক্ষবাটিকার বৃক্ষলতাদি দর্শন করিতেছেন, আবার ফিরিয়া আসিয়া বারান্দার রেলের উপর বক্ষস্থাপনপূর্বক নিম্নদৃষ্টিতে নিম্নপ্রাঙ্গণে কি যেন দেখিবার অভিলাষ প্ৰকাশ করিতেছেন। বড় বড় দুটি পদ্মচক্ষু চতুর্দিকে ঘুরিতেছে। দৃষ্টিরও স্থিরতা নাই, দর্শকীয় পদার্থেরও স্থিয়তা নাই। দর্শন, পরিক্রমণ, স্তম্ভন, তিনপ্রকার ভাব একত্র ; বার বার এইরূপ । সময় প্রদোষ । দেখিতে দেখিতে প্রদোষ কাল অতীত হইল ; অন্ধকার আসিয়া বাজীখানি ঢাকিল ; আকাশে নক্ষত্ৰ উঠিল। আশ্চৰ্য্য, অতি বুড় বাড়ীতে একটীও ቅትተ জ্বলিল না। একঘরে একটী ভোলানাথ, বীরেন্দায় একটী রাণী, তদ্ভিয় সে সময় সে বাড়ীতে জনপ্রাণীরও সমাবেশ নাই। সমস্তই নীরব । অন্ধকার-ঘরে ভোলানাথ একাকী বসিয়া নিষ্কৰ্ম্ম অবধূত যোগীর ন্যায় আপন মনে দুলিতেছেন ; দুলিতে ঢুলিতে একবার একটু উচ্চকণ্ঠে বলিয়া উঠলেন, রাণি!” । রাণী তখন কি চিন্তায় অন্যমনস্ক ছিলেন, তাহার গতি ক্রিয়া-দর্শনে ধ্যাহারা র্তাহার চিন্তার বিষয় অনুমান করিতে পারিয়াছেন, ভঁাহারা ভিন্ন আর কেহ । তাহা বুঝাইয়া দিতে পরিবে না। অনুমান করিয়াছে থাকাহারা ? গতি ক্রিয়া দর্শন করিয়াছে কাহারা ? বারান্দার গামের, কুঞ্জবনের তরুলতারা আর আকা