পাতা:বঙ্গরহস্য - ভূবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়.pdf/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চম-তরঙ্গ । S বৃহৎ বৃহৎ আড়ানী দ্বাৰা বাতাস করিতেছে, সারি সারি চারি পাঁচটা বাধা হক পড়িয়াছে, হকার ধূমের সুগন্ধ অনেক দূর পর্যন্ত আমোদিত করিয়াছে, একটী দশমবৰ্ষীয়া বালিকা সহসা সেইখানে উপস্থিত হইয়া বাবুর তাকিয়ার নিকটে কতকগুলি চাপাফুল রাখিয়া গেল। বাবু সেই ফুলগুলি লইয়া খেলা করিতে করিতে বন্ধুবান্ধবকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “লোকে বলে চাপা ফুলের মধু নাই, সে কথাটা আমার সত্য খািলয়া বোধ হয় না। যে ফুলের মধু থাকে না, সে ফুলে সুবাস পাওয়া যায় না । চাপা ফুলে দিব্য সুগন্ধ ; লোকের কথাটা তবে কি প্রকারে সত্য বলিয়া মানি ?” মজলীসে একজন অধ্যাপক ছিলেন, তিনি সংস্কৃত ভাষায় কবিতা রচনা করিতে পারিতেন। অনেকগুলি প্ৰাচীন কবি ৩ তাহার মুখস্থ ছিল, একটী কবিতা আবৃত্তি করিয়া বাবুকে তিনি বুঝাইয়া দিলেন, চাপা ফুলে ভ্রমর বসে না, চাঁপা সেই দুঃখে ক্ৰন্দন করতেছিল, কবি তাহাকে প্ৰবোধ দিয়া বলিলেন, “কোন চাপা, তুই কঁদিস কেন ? ভ্রমর কৃষ্ণবর্ণ, তোর ঐ স্বর্ণ-অঙ্গে কৃষ্ণ ভ্ৰমর বসিতে পারে না, সেই জন্যই বসে না, তাহাতে তোর দুঃখ কি ? সুন্দরী সুন্দরী কৃষ্ণনয়ন কৃষ্ণকুন্তলা কামিনীকুল পরম সমাদরে তোরে কবরী-বেষ্টন করিয়া মাথার উপর স্থান দেয়, তাহা অপেক্ষা কি ভ্রমরের গৌরব অধিক ?” ভবতারণ বাবু হাস্য করিয়া কহিলেন, “ত্রিমর বসে না বলিয়া আপনার সিদ্ধান্ত করেন-চাঁপা-ফুলের মধু নাই। আমরা দেখিতে পাই, অনেকগুলি সুন্দর পুরুষ বিদ্যা-ভূষাবিবর্জিত। তাহদের রূপ দেখিয়া লোকে বিমোহিত হয়, কিন্তু অন্বেষণ করিলে তাহাদিগকে বিষধর সর্প অপেক্ষাও অধিক ভয়ঙ্কর মনে হয়। কতকগুলি সুন্দরী রমণী বিষধরী ভুজঙ্গিনী অপেক্ষাও ভয়ঙ্করী।” । মজলীসে জীবনবন্ধু ছিলেন, তিনি ঐ সকল কথা কতক কতক শুনিয়াছিলেন ; অধ্যাপকের কবিতাটীও তিনি শুনিলেন, চাঁপা-ফুলের বর্ণনাও শুনিলেন, বাবুর বক্ততাটীও শুনিলেন, কিন্তু কিছুই বুঝিতে পারিলেন না। গল্পের, কবিতা, বক্ততার পরস্পর কি সঙ্গতি আছে, অনেকক্ষণ তিনি ভাবিলেন, ভাবিয়াও কিছু স্থির হইল না, আকাশপানে চাহিয়া তিনি যেন কি চিন্তা করিতে লাগিলেন। সহসা তঁহাঁর মুখমণ্ডল বিবৰ্ণ হইল, জটাধারী সেখানে ছিল না, জীবনবন্ধুর যখন সেই প্ৰকার ভাব, সেই সময় দক্ষিণদিক ফাইতে কতই যেন উল্লাসে হাসিতে