পাতা:বঙ্গের বাহিরে বাঙ্গালী (উত্তর ভারত) - জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস.pdf/৩৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

રહેર বঙ্গের বাহিরে বাঙ্গালী । সরোবরের পশ্চিমস্থ পৰ্ব্বতের নাম “দেওপাটা” । আয়ারপাট অপেক্ষা দেওপাটা অরণ্যবিরল এবং রমণীয়। এই পৰ্ব্বত সাগরপৃষ্ঠ হইতে ৭৯৮৭ ফুট উচ্চ। ইহার পরপারে বন্দী, কেদার, দেবপ্রয়াগ প্রভৃতি হিন্দুর যাবতীয় প্রধান প্রধান তীর্থ, স্বৰ্গনদী এবং পুরাণ বর্ণিত দেবলোক অবস্থিত। সুতরাং দেওপাটা দেবপথ বা দেবপত্তনের অপভ্রংশ হইতে পারে। ইতিহাসে দেখা যায় পশ্চিমের খাস উত্তরাখন্তী গঢ়বালীদিগের সহিত দক্ষিণের ও পূর্বের কুমায়ুনীদিগের ঘোর শত্রুতা ছিল। এমন কি কাৰ্য্যক্ষেত্রে দৃষ্ট হয় যে সে সংস্কার এখনও গত হয় নাই। ইহাও যেন আয়ারপাটাকে অসুরপথ বা অসুরপত্তন বলিয়াই নির্দেশ করে। কিন্তু একটী কথা আছে। দক্ষিণ ভারতে “আৰ্য্য” শব্দ “আইয়ার” হইয়াছে। ভারতীয় আৰ্য্যগণ উত্তরপশ্চিমের দেবপথ দিয়া ভারতে প্ৰবেশ করতঃ এই সকল স্থানে প্ৰথম বাসস্থাপন করিয়া ইহাকে দেবপত্তনে পরিণত করেন নাই ত ? এবং পরে যখন ইহার দক্ষিণে উপনিবেশ স্থাপন করেন অথবা দক্ষিণের পথ দিয়া আৰ্য্যাবৰ্ত্তে গমন করেন তখন তঁহাদের উপনিবেশ বা গমনপথের নিদর্শকস্বরূপ দক্ষিণের এই পর্বতকে ‘আৰ্য্যপত্তন” বা “আৰ্য্যপথ” নামে অভিহিত করেন নাই ত ? নয়নীতালে আসিবার বর্তমান রেলপথ হইবার পূৰ্ব্ব পৰ্যন্ত আয়ারপাটার ভিতর দিয়াই গমনাগমনের পথ ছিল। এই পথ এখনও পরিত্যক্ত হয় নাই। আমাদের বিশ্বাস দেবপথই দেওপাট এবং আৰ্য্যপথই আয়ারপােটা হইয়াছে। প্রকৃত তথ্য প্রত্নতাত্ত্বিকের চিন্তা ও অনুসন্ধানের বিষয়। এই আৰ্য্যপথের একটী সুগভীর উপত্যক ভূমির বর্তমান নাম “শ্লিপীহলো”। চতুর্দিকের পর্বতশিখর হইতে এই অরণ্যসমাকুল স্থানটী পাতালপুরী বলিয়া মনে হয়। বহু বর্ষ পূর্বে এখানে ব্ৰহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেন কিছুকাল সাধন করিয়াছিলেন। অধুন। এখানে সাহেব কেরাণীদিগের জন্য সুন্দর সুন্দর গৃহ নিৰ্ম্মিত হইয়াছে এবং প্রবাসী বাঙ্গালীর এই নিস্তব্ধ গম্ভীর সাধনাশ্রমটী পল্লীকলরবমুখরিত হইয়া উঠিয়াছে। অৰ্দ্ধশতাব্দীর কয়েক বৎসর পূর্ব হইতে নয়নীতালে বাঙ্গালীর আবির্ভাব হইয়াছে। বোধহয় সিপাহী বিদ্রোহের সময় সাহেবদিগের সহিত প্রাণরক্ষার্থ পলায়িত কয়েকজন বাঙ্গালীই নয়নীতালের প্রথম প্রবাসী। র্তাহাদের মধ্যে অধুনা মুজফফরনগর প্রবাসী শ্ৰীযুক্ত দুর্গাদাস বন্দোপাধ্যায় মহাশয় অন্যতম ছিলেন। তঁহার বিষয় রোহিলখণ্ড অংশে দ্রষ্টব্য।