পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লর্ড সিংহ (সত্যেন্দ্ৰপ্ৰসন্ন সিংহ) মোগল বাদশাহুদিগের আমলে মহারাজা মানসিংহ’। রাজা টােডরমল প্রভৃতি কয়েকজন ভারতবাসী হিন্দু প্ৰাদেশিক শাসনকর্তার পদে নিযুক্ত হইয়াছিলেন। সেকালে প্রাদেশিক শাসনকর্তার পদ লাভ হিন্দুর পক্ষে বড়ই দুর্লভ ছিল। তাহার পর ইংরেজের আমলে সর্বপ্রথম যে ভারতবাসী প্রাদেশিক শাসনকর্তার পদ লাভ করিয়াছিলেন, তিনি বাংলার ও বাঙালির বড় আদরের রায়পুর নিবাসী লর্ড সত্যেন্দ্ৰপ্ৰসন্ন সিংহ। বিলাতি অভিজাতশ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হইয়া সত্যেন্দ্ৰপ্ৰসম্নের লর্ড উপাধি লাভ, বাংলার তথা ভারতের সামাজিক ইতিহাসে সামান্য ঘটনা নহে। বীরভূম জেলায় রায়পুর একখানি ক্ষুদ্র গ্রাম। এই গ্রামখানি পূর্বে নগণ্য ছিল ; এক্ষণে যাহার কৃতিত্বে ইহা বিশ্বখ্যাতি অর্জন করিয়াছে, সেই সত্যেন্দ্ৰপ্ৰসন্ন সন ১২৬৯ সালের ১২ চৈত্র (ইংরেজি ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের ২৪ মার্চ) সেই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকাল র্তাহার গ্রামেই অতিবাহিত হইয়াছিল। উপযুক্ত বয়সে তিনি বীরভূম জেলা স্কুলে প্রবেশ করেন। ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে সেই স্কুল হইতে প্রথম বিভাগে এনট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া তিনি কলিকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে প্রবেশ করেন। দুই বৎসর পরে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ হইতে এফ. এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ইহার পর আর তঁহার কলিকাতায় পড়া হয় নাই ; তিনি ভ্ৰাতা নরেন্দ্ৰপ্ৰসন্নের সহিত বিলাত যাত্রা করেন। বিলাতে তিনি আইন অধ্যয়নের জন্য Lincoln's Inn-এ ভরতি হন। আইন অধ্যয়নে কৃতিত্বের জন্য তিনি বহু পুরস্কার লাভ করেন এবং অধ্যয়ন-শেষে ৫৫০ গিনি উপহার প্রাপ্ত হন। প্রশংসার সহিত ব্যারিস্টারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া সত্যেন্দ্ৰপ্ৰসন্ন। ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। র্তাহার ভ্রাতা মেজর নরেন্দ্ৰপ্ৰসন্নও সেই বৎসর আই. এম. এস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া সরকারি কর্মে নিযুক্ত হইয়া দেশে ফিরিয়া আসেন। ব্যারিস্টারি ব্যবসায়ে প্রবৃত্ত হইবার পর, অন্যান্য জুনিয়ার ব্যারিস্টারের ন্যায় সত্যেন্দ্ৰপ্ৰসন্নেরও প্রথম প্ৰথম পসার জমে নাই। সেইজন্য কিছুদিন তঁহাকে বিষয়াস্তরে নিযুক্ত থাকিতে হইয়াছিল। সেই সময়ে তিনি সিটি কলেজে আইন শ্রেণিতে অধ্যাপকতা এবং পাইকপাড়ায় রাজবংশের আইনের পরামর্শ দাতার কার্য করিতেন। কিন্তু প্রতিভা কখনও অনাদৃত থাকে না। কিছুকাল সামান্যসামান্য দুই চারিটা মােকদ্দমায় কার্য করিবার পর ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁহার ভাগ্য প্রসন্ন হইল-ৰ্তাহার গভীর আইন জ্ঞান এবং মোকদ্দমা-পরিচালনের ক্ষমতা সাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করিল। মিঃ ফার নামক একজন ইউরোপিয়ান অ্যান্টনী একটি মামলার অন্যতম সাক্ষী ছিলেন,