পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাসবিহারী ঘোষ Σ. Ο Σ স্বধর্মের্তাহার অগাধ বিশ্বাস ছিল এবং সে বিশ্বাস ক্রমশ দৃঢ় হইতে দৃঢ়তর হইয়াছিল। শোনা যায় প্রথম যৌবনে তিনি একবার খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের ইচ্ছা করেন ও কিছু পরে সিংহলে উপস্থিত হইয়া বৌদ্ধধর্ম গ্রহণেচ্ছ হন। তিনি ছিলেন সন্ধানী, তাই বিভিন্ন মার্গে সত্যের সন্ধান করিবার বাসনা তঁহার মনে জাগ্রত হয়; কিন্তু শেষ বয়সে প্রকৃত হিন্দুরূপেই শ্ৰীভগবানের চরণে আত্মসমৰ্পণ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বি. এ পরীক্ষায় কৃতী ছাত্রীদিগের জন্য তিনি মাতৃনামে ‘পদ্মাবতী পদকে’র ব্যবস্থা করেন। জননীর মৃত্যুকালে তঁহার দর্শন না পাওয়ার দুঃখ তাহার মনে চিরদিন ছিল। তাই মেদিনীপুরের কঁসাই নদীর তীরে জননীর চিতাপার্শ্বে ‘পদ্মাবতী শ্মশানঘাট” নির্মাণ করাইয়া দেন এবং তঁহারই নামে নিজগ্রামে পুষ্করিণী ও শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। বর্ধমানে যখন র্তাহার পিতার মৃত্যু হয় তখন তিনি শিমলায়। অস্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় তিনি শিমলা হইতে বহুকষ্টে উপস্থিত হইতে পারিয়াছিলেন। যে স্থানে দাহ সম্পাদিত হয় তথায় তিনি তঁহার পিতার নামে সুন্দর চিমনিযুক্ত শ্মশান নির্মাণ করাইয়া দেন। সকল যুবকই উকিল, ডাক্তার, চাকুরিজীবী হইলে দেশ চলিতে পারে না। ব্যবসায় ও শিল্প দেশের পক্ষে আবশ্যক। এই হেতু বেঙ্গল টেকনিক্যাল কলেজ স্থাপিত হইলে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হন ও ব্যারিস্টার টি. পালিত মহাশয়ের অনুরোধে তিনি তাহার সভাপতির পদ গ্রহণ করেন। নানা শিল্প প্রতিষ্ঠানের সাহায্যকল্পে তিনি মুক্তহস্ত ছিলেন। জাপান হইতে বাঙালি যুবক দেশলাই প্ৰস্তুত শিখিয়া আসায় তিনি পয়ত্ৰিশ হাজার টাকা খরচ করিয়া এক কারখানা প্ৰস্তুত করিয়া তাহদের হাতে তাহার ভার অর্পণ করেন। তোড়কােনা গ্রামে রাসবিহারী পিতামহীর নামে একটি পুষ্করিণী ও পিতার নামে একটি স্কুল স্থাপিত করেন। তঁহার উইলে আত্মীয়স্বজন, দাসদাসী, আশ্রিত ও প্রতিপালিত সকলেরই যথোচিত ব্যবস্থা হয়। দেবসেবা প্রভৃতির জন্য তিনি নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা ও কিছু ভূ-সম্পত্তি দান করেন। তিনি জগদ্বন্ধু স্কুলের জন্য নগদ একলক্ষ টাকা দেন ও দরিদ্র নারায়ণ সেবায় যথেষ্ট অর্থ ব্যয় করেন। আইন পুস্তক ছাড়া তঁহার সমস্ত গ্রন্থাগার তিনি জগদ্বন্ধু স্কুলকে দিয়া গিয়াছেন।1 যাদবপুর টেকনিক্যাল স্কুলের জন্য যে সম্পত্তি তিনি দান করেন তাহার মূল্যও বড় কম নহে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান কলেজ স্থাপনের জন্য সুপ্ৰসিদ্ধ ব্যারিস্টার স্বৰ্গত টি. পালিতষ্ট মহাশয় তাহার বাড়িঘর প্রভৃতি ও প্রায় বারোলক্ষ টাকার সম্পত্তি দান করেন, কিন্তু তাহা যথেষ্ট না হওয়ায় স্যার রাসবিহারী তথায় প্রথমে দশ লক্ষ টাকা ও পরে এগারো লক্ষ তেতাল্লিশ হাজার টাকা দান করেন। বারাণসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে তাহার দান এক লক্ষ টাকা এবং কলিকতা কারমাইকেল মেডিক্যাল কলেজে পঞ্চাশ হাজার টাকা। তাহার উদ্দেশ্য ছিল দেশে মানুষ তৈয়ারি করা। তাহার জন্য তিনি তঁহার যথাসর্বস্ব দিতেও কুষ্ঠিত ছিলেন না। র্তাহার এই মহান ত্যাগে মানুষ তাহাকে দেবতা জ্ঞানে আজিও স্মরণ করিয়া থাকে।