পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S R 3 বঙ্গ-গৌরব ত্যাগ করিতে বাধ্য হন এবং বারাসতে এক আত্মীয়ের বাসায়ন্ট থাকিয়া ইংরেজি বিদ্যালয়ে পড়িতে থাকেন। কিন্তু সেই আত্মীয়ের গৃহেও তাঁহাকে অধিক দিন বাস করিতে হয় নাই। উক্ত আত্মীয়ের মৃত্যু হইলে তিনি বারাসত ত্যাগ করেন এবং আগ্ৰায় মাতুলালয়ে৫ যাইয়া বিদ্যা শিক্ষা করিতে থাকেন। কিন্তু তাহার আত্মীয়গণ র্তাহার বিবাহ দিবার জন্য কৌশলে তঁহাকে স্বদেশে ফিরাইয়া আনেন, আর তাহার আগ্রা যাওয়া হয় নাই। তখন তিনি কলিকাতায় এক আত্মীয়ের গৃহে থাকিয়া মতিলাল শীলের স্কুলে’ পড়িতে থাকেন। এনট্রান্স পাশ করিয়া রাজেন্দ্ৰনাথ কলিকতা প্রেসিডেন্সি কলেজের অন্তর্গত ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভরতি হইয়াছিলেন এবং তিন বৎসরে পূর্তবিভাগের কার্য শিক্ষা করিয়াছিলেন। স্বাস্থ্যহানির জন্য উপাধি লাভের পূর্বেই তাঁহাকে কলেজ ছাড়িয়া দিতে হয় এবং তিনি জীবিকার্জনের জন্য জীবন-সংগ্রামে যোগদান করেন। একটি বাণিজ্য-বিদ্যালয়ে প্রত্যহ দুই ঘণ্টা গণিত শিক্ষা দিয়া তিনি মাসিক ১৫ টাকা উপার্জন করিতেন এবং তাহা দ্বারা কলিকাতার মেসেণ্ট বাস করিয়া কর্যের সন্ধানে ফিরিতেন। এই সময়ে কলিকতা কর্পোরেশনের চীফ ইঞ্জিনিয়ার মিঃ ব্রাডফোর্ড লেসলীর** সহিত তাহার পরিচয় হয় এবং মিঃ লেসলীর অনুগ্রহে তিনি পলতায় জলের কােল নির্মাণের** কতকগুলি কর্যের কনট্রাক্ট প্রাপ্ত হন। ইহাই তাহার কর্মজীবনের আরম্ভ। তাহার পর অসাধারণ অধ্যবসায় ও পরিশ্রমের গুণে মাটিন কোম্পানির মত এত বড় একটি কোম্পানি গঠন করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। সমগ্র জীবনই তাহাকে শ্বেতাঙ্গ ব্যবসায়ীদিগের সহিত প্ৰতিদ্বন্দ্বিতা করিয়া কার্য সংগ্ৰহ করিতে হইয়াছে। কর্মের দ্বারা বুদ্ধির প্রখরতা জন্মিয়া থাকে। রাজেন্দ্রনাথ ক্রমে ক্ৰমে যত অধিক কাজ পাইতে লাগিলেন, তাহার বুদ্ধিও তদনুপাতে প্রখর হইতে লাগিল। তঁহার প্রতিষ্ঠিত মার্টিন কোম্পানি ক্ৰমে ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ ও অদ্বিতীয় কন্ট্রাক্টর রূপে পরিণত হইল। ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে যখন প্ৰসিদ্ধ ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম বার্ন কোম্পানির অবস্থা খুবই খারাপ হইল, তখন রাজেন্দ্রনাথ উক্ত কোম্পানি ক্ৰয় করিয়া লইয়া মার্টিন কোম্পানির সহিত উহা সংযুক্ত করিয়া দিলেন। মাটিন কোম্পানি শুধু কস্ট্রাকটারি কাজ করিয়াই সস্তুষ্ট থাকে নাই, ভারতের বহু শহরে উক্ত কোম্পানি বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করিয়াছে। সেই সকল শহরে মার্টিন কোম্পানির অনুগ্রহে লোকে সুলভে বিদ্যুৎ ব্যবহার করিয়া থাকে। স্যার রাজেন্দ্রনাথের চেষ্টায় ভারতের বহু স্থানে মার্টিন কোম্পানি কর্তৃক লাইট রেল খোলা হইয়াছে। এই রেলের দ্বারা অতি দূরস্থ পল্লিগ্রামেও লোকের যাতায়াতের সুবিধা হইয়াছে। শুধু অর্থার্জন লইয়াই রাজেন্দ্রনাথকে ব্যস্ত থাকিতে দেখা যায় নাই, জনহিতকর কার্যেও তাহার বিশেষ আগ্রহ ছিল। তিনি কোনোদিন প্রকাশ্যভাবে কোনো রাজনীতিক আন্দোলনে যোগদান করেন নাই বটে, কিন্তু অর্থদ্বারা বহু আন্দোলনকে পুষ্ট করিতেন। তাহ ব্যতীত তিনি যে-সকল কমিটিতে যোগদান করিয়া কাজ করিয়াছিলেন, তন্মধ্যে নিম্নে কয়েকটির নাম প্রদত্ত হইল-১৯১০ খ্রিস্টাব্দে এলাহাবাদস্থ শ্রমশিল্প ও আর্থনীতিক সমিতির সভাপতি; ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার শেরিফ পদ গ্ৰহণ ; ১৯১৬ হইতে ১৯১৮ পর্যন্ত