পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S. G8 বঙ্গ-গৌরব বিলাতে যতীন্দ্রমোহন শুধু পড়াশুনা লইয়াই থাকিতেন না, তিনি সকল প্রকার আন্দোলনের সহিত ঘনিষ্ঠভাবে মিশিতেন। কেন্ত্রিজে পড়াশুনার সময় তিনি কেন্ত্রিাজস্থ ভারতীয় মজলিসের সভাপতি হইয়াছিলেন। খেলাধুলার প্রতি চিরদিনই তাহার অত্যধিক আকর্ষণ ছিল। তিনি টেনিস ও ক্রিকেট খেলায় সর্বত্র ডাউনিং কলেজের সুনাম রক্ষা ও যশ বৃদ্ধি করিয়াছিলেন। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলিকাতা হাইকোর্টে ব্যারিস্টারি আরম্ভ করেন। তিনি ধনী পিতার পুত্র ছিলেন; কলিকাতা শহরেও র্তাহার পিতৃবন্ধুর অভাব ছিল না এবং যতীন্দ্রমোহনও কম মেধাবী ছিলেন না। কাজেই অতি অল্পদিনের মধ্যে ব্যারিস্টারিতে তঁহার খ্যাতি চারিদিকে ছড়াইয়া পড়িল। কিন্তু যতীন্দ্রমোহন ব্যারিস্টারি দ্বারা অর্থার্জন ও খেলাধুলা লইয়া সন্তুষ্ট থাকিবার লোক ছিলেন না। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে ফরিদপুরে যে বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলন হয় যতীন্দ্রমোহন তাহাতে যোগদান করিলেন এবং পিতার অনুমতি অনুসারে পর বৎসর সম্মেলনকে চট্টগ্রামে নিমন্ত্রণ করিলেন। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে তাহারই উদ্যোগ ও চেষ্টায় চট্টগ্রামে প্ৰাদেশিক সম্মেলনের অধিবেশন হইল এবং যতীন্দ্রমোহনের পিতা যাত্রামোহন সেনগুপ্ত মহাশয় অভ্যর্থনা-সমিতির সভাপতির কার্য করিলেন। ব্যারিস্টারিতে দিন দিন তাহার সুনাম বৃদ্ধি পাইতে লাগিল এবং তিনি ঐ ব্যবসায়ে প্রভূত অর্থ উপার্জন করিতে লাগিলেন। কিন্তু বিধাতার ইচ্ছা অন্যরূপ ছিল। তিনি অর্থার্জন করিয়া বিলাসভোগে তৃপ্ত থাকিতে পারিলেন না। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে সমগ্র ভারতে এক নবযুগের সূচনা হইল। মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস হইতে অসহযোগের মন্ত্র উচ্চারিত হইল। তখন যতীন্দ্রমোহন তাহার ইংরেজ পত্নী ও দুই পুত্ৰ লইয়া” কলকাতায় বাস করিতেছিলেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ। ঐ আহ্বানে ব্যারিস্টারি ত্যাগ করিয়া দেশসেবায় আত্মনিয়োগ করিলেন-সঙ্গে সঙ্গে অন্য কয়েকজন যুবক ব্যারিস্টারের সহিত যতীন্দ্রমোহনও তাঁহার পদাঙ্ক অনুসরণ করিলেন। ব্যারিস্টারি করিলে যে প্রতিভাবান যুবক একদিন জজ বা অ্যাডভোকেট জেনারেল হইতে পারিতেন, তিনি সকল সুখ ও ঐশ্বর্যের মায়া ত্যাগ করিয়া পথের ভিখারি হইলেন। চিত্তরঞ্জন যখন তাগের মন্ত্রে দীক্ষা গ্রহণ করেন, তখন তিনি প্রৌঢ়ত্বে উপনীত হইয়াছিলেন-কিন্তু যতীন্দ্রমোহন তখন যুবক মাত্র। র্তাহার এই ত্যাগ তাঁহার দেশবাসীবৃন্দকে বিস্মিত করিয়াছিল। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে চট্টগ্রামে যাইয়া যতীন্দ্রমোহন বৰ্মা অয়েল কোম্পানির কর্মচারীদের ধর্মঘটে নেতৃত্ব করিলেন। তাহার পরবতী মাসেই সমগ্র আসাম বেঙ্গল রেলের কমীরা ধর্মঘট করিলে-সেখানেও যতীন্দ্রমোহন নেতা হইলেন। ঐরাপ ধর্মঘট সচরাচর দেখা যায় না। ঐ ধর্মঘট পরিচালনের জন্য যতীন্দ্রমোহনকে চল্লিশ হাজার টাকা ঋণ করিতে হইয়াছিল। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ৪ জুলাই চট্টগ্রামে পুলিশ তঁহাকে গ্রেপ্তার করিল এবং তিন দিন হাজতবাসের পর তঁহার তিন মাস সম্রশ্ৰম কারাদণ্ড হইল। এই ভাবেই যতীন্দ্রমোহনের প্রকৃত রাজনীতিক জীবন আরম্ভ হইয়াছিল। সেই সময়ে মহাত্মা গান্ধী