পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সরলা দেবী চৌধুরাণী কলকাতা জোড়াসাঁকোর সুবিখ্যাত ঠাকুর-পরিবার বঙ্গদেশকে নানাদিক দিয়া নানাভাবে গৌরবান্বিত করিয়াছে। এই পরিবারের প্রাতঃস্মরণীয় মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্যা স্বনামধন্যা স্বগীয়া স্বর্ণকুমারী দেবী, শ্ৰীযুক্তা সরলা দেবী চৌধুরাণীর জননী। ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দের ৯ সেপ্টেম্বর তারিখে উক্ত প্ৰসিদ্ধ ঠাকুরবাড়ীতেই সরলা দেবী জন্মগ্রহণ করেন। ইনি দেশপূজ্য রবীন্দ্রনাথের ভাগিনেয়ী, মায়ের মুখোজুলকারিণী তনয়া। মাতামহ বংশের বহু সদগুণ এই মহিয়সী মহিলার মধ্যে প্রতিফলিত হইয়াছে ও তাহার পিতৃকুলের নানা বৈশিষ্ট্য তিনি লাভ করিয়াছেন। ইহার পিতা স্বগীয় জানকীনাথ ঘোষাল একজন উচ্চশিক্ষিত ও পাশ্চাত্য-সভ্যতার অনুরাগী উদারপন্থী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি নদিয়া জেলার সুপ্ৰসিদ্ধ ব্রাহ্মণ জমিদার ঘোষালবংশের কৃতী সস্তান। প্রথম জীবনে তিনি ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট ছিলেন বটে, কিন্তু পঞ্চাশ বৎসর পূর্বে যে অল্প কয়েকজন দেশপ্রেমিক ব্যক্তি মাতৃভূমির স্বাধীনতার দাবী লইয়া ভারতে জাতীয় মহাসমিতি (Indian National Congress) প্ৰতিষ্ঠা করিয়াছিলেন, সরলা দেবীর পিতা স্বগীয় জানকীনাথ ঘোষাল র্তাহাদেরই অন্যতম ছিলেন। ত্ৰয়োদশ বর্ষ বয়সে সরলা দেবী বেথুন কলেজের ছাত্রীরূপে সম্মানের সহিত প্ৰবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কোনোও পরীক্ষায় তিনি কখন অকৃতকার্য হন নাই। সপ্তদশবষীয়া সরলা দেবী যেদিন বি. এ উপাধি লাভ করেন সেদিন বঙ্গের মহিলা সমাজ তাহার সাফল্যে গৌরব বোধ করিয়াছিলেন। কৈশোরেই সরলা দেবীর সাহিত্য-প্ৰতিভার উন্মেষ দেখা গিয়াছিল। ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে অধুনাবিলুপ্ত সখী’ পত্রিকার প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় যখন তঁহার একটি রচনাই পুরস্কারপ্রাপ্ত ও প্রকাশিত হইয়াছিল তখন তঁাহার বয়ঃক্রম মাত্র দশ বৎসর। “বালক” পত্রে প্রকাশিত র্তাহার দ্বাদশ বর্ষ বয়সের একটি রচনা সমস্ত আত্মীয় বন্ধুকে বিস্মিত করিয়া দিয়াছিল। বর্তমান বঙ্গসাহিত্যের পিতামহ বঙ্কিমচন্দ্র একদিন সরলা দেবীর সংস্কৃত কাব্য ও নাটক সম্বন্ধে কয়েকটি জ্ঞানগর্ভ ও সরল আলোচনা পাঠ করিয়া প্রীত ও মুগ্ধ হইয়া তাহাকে ধন্যবাদ জানাইয়া পত্ৰ লেখেন এবং স্বরচিত গ্রন্থাবলি উপহার পাঠান। সরলা দেবীর বয়স তখন উনিশ বৎসর মাত্র। গীতবাদ্যে সরলা দেবীব দক্ষতা অসাধারণ। তিনি দেশীয় সঙ্গীত ও যুরোপীয় সঙ্গীত